বাংলা হান্ট ডেস্কঃ মতুয়া সম্প্রদায় নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যকে কেন্দ্র করে তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র ও বিজেপির বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikari) মধ্যে তীব্র রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি মহুয়া মৈত্রর মন্তব্যের তীব্র কটাক্ষ করে কৃষ্ণনগরের মাটিতেই পাল্টা সভা করে মহুয়ার বিরুদ্ধে কড়া সুরে আক্রমণ শানালেন শুভেন্দু।
কী মন্তব্য করেছিলেন মহুয়া মৈত্র?
প্রসঙ্গত, বেশ কয়েকদিন আগে কৃষ্ণনগরের এক সভায় মহুয়া মৈত্র বলেন, “সারা বছর তৃণমূল। আর ভোটের সময় সনাতনী। এটা কী অঙ্ক ভাই?” একই সঙ্গে তিনি অভিযোগ করেন, তফসিলি জাতি ও জনজাতির মহিলারা লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে তুলনামূলক বেশি টাকা পেলেও মতুয়া সম্প্রদায়ের একটি অংশ ভোটের সময় অন্য দলে ঝুঁকে পড়েন। মহুয়ার বক্তব্য, “কাজের সময় মমতা, রাস্তার সময় মমতা, কিন্তু ভোট দেওয়ার সময় অন্য দল। কাঠের মালা পরে সব তো চলে আসেন ভাই ভাতা নিতে?” মহুয়া মৈত্র ঐদিন সভায় আরও বলেন যে, ‘ওই এলাকায় ১০০টি ভোটের মধ্যে ৮৫টি যায় বিজেপিতে এবং মাত্র ১৫টি অন্য দলে।’
এই মন্তব্যের পরই কৃষ্ণনগরের রাজবাড়ি প্রাঙ্গণ থেকে পদযাত্রা শুরু করেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। পরে পোস্ট অফিস মোড়ে এক প্রতিবাদ সভায় তিনি বলেন, “এখানকার সাংসদের কত বড় সাহস, এক বার নয়, বারেবারে হিন্দু সংস্কৃতি, বৈষ্ণব, নমঃশূদ্র, মতুয়া, তাঁদের ধর্মীয় রীতিনীতি, তাঁদের গুরুদেবের দেখানো পথকে অপমান করেন। প্রতিবাদ হয় না কেন? আমাদের সনাতন সংস্কৃতি রক্ষা করব। শ্যামপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়রা এই বাংলা দিয়ে গিয়েছেন আমাদের। এই বাংলা আমরা বাংলাদেশি মুসলমান, রোহিঙ্গাদের হাতে তুলে দেব না।” সভায় তিনি আরও দাবি করেন যে, “করিমপুর হাতে রয়েছে, তেহট্ট যায় যায় করছে, চাপড়া, কালীগঞ্জ, দেবগ্রামের কী অবস্থা, শিবরাত্রির সলতে মতো টিম টিম করে জ্বলছে কৃষ্ণনগরটা। ধুবুলিয়া অবধি এসে গিয়েছে, আর ১৭ কিলোমিটার বাকি রয়েছে।”
মহুয়ার মন্তব্য ঘিরে নদিয়াজুড়ে বিজেপির প্রতিবাদ জোরদার হয়। থানায় অভিযোগ দায়ের করে পদ্ম শিবির। এমনকি মতুয়া নেতা মমতাবালা ঠাকুরের অনুগামীরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে মহুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। তবে মহুয়া শুক্রবারই নিজের অবস্থান থেকে সরে আসেননি। তাঁর দাবি, “মতুয়া নিয়ে আমি কিছু ভুল বলিনি। বিজেপি অপব্যাখ্যা করছে। বনগাঁ আমরা জিতিনি। কৃষ্ণনগর টাউন আমরা জিতিনি। কিন্তু তাই বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উন্নয়নের কাজ ওখানে থামাননি। বিজেপি বাংলায় জেতেনি। তাই টাকা বন্ধ করে দিয়েছে। আমি সেকথাই বলেছি।”
আরও পড়ুনঃ সাঁতার না জানলে যাওয়া নিষেধ, প্রতিমা বিসর্জন নিয়ে কড়া নির্দেশ দিল প্রশাসন
মতুয়া ভোট নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক টানাপোড়েন চলেছে রাজ্যে। মহুয়ার মন্তব্য নতুন করে সেই অগ্নিস্ফুলিঙ্গ জ্বালিয়েছে। এই অবস্থায় শুভেন্দুর (Suvendu Adhikari) আক্রমণ ও বিজেপির অভিযোগের প্রেক্ষিতে মহুয়া মৈত্রর বিরুদ্ধে কী অবস্থান নেবে তৃণমূল নেতৃত্ব, এখন সেদিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল।