বাংলাহান্ট ডেস্ক : এক কাপ চায়ের কথা মনে হলে দেহমনে চনমনে ভাব জেগে ওঠে না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন আমাদের দেশে। পেট ভরে দুমুঠো ডালভাতের পরই আমাদের জীবনে অত্যাবশ্যকীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে এক কাপ চা। বন্ধু বা পরিবারের সবার সঙ্গে আড্ডার হুল্লোড়েই হোক আর পাড়ার মোড়ে বা গ্রামের বাজারে উত্তপ্ত রাজনৈতিক তর্ক-বিতর্কে, চায়ের কাপে ঝড় না তুললে যেন কী একটা অসম্পূর্ণই থেকে যায়।
কিন্তু, সেই চা যদি হয় ‘খারাপ চা’, তাহলে কী মুখে তোলা যায় ? হ্যাঁ, তোলা যায়। রীতিমতো ভিড়ে দাঁড়িয়েও সেই চা খাওয়া যায়। এমন ঘটনাই ঘটেছে দুবরাজপুরে শুভেন্দুর ‘খারাপ চা’য়ের দোকানে। বছর দুয়েক আগে দুবরাজপুর মোড়ে বাঁকুড়া-পুরুলিয়া রাস্তার পাশে এক চিলতে ভাড়া বাড়ি জুটিয়ে খুলে ফেলেন চায়ের দোকান। অন্য দোকানদারেরা খদ্দের ভাঙাতে শুভেন্দুর চা ‘খারাপ’— এই প্রচার চালাতেন বলেও অভিযোগ।
জানা গিয়েছে, বাঁকুড়ার ছাতনা ব্লকের দুবরাজপুরে বাবা, মাকে নিয়ে আঠাশ ছুঁই ছুঁই শুভেন্দুর ছোট্ট সংসার। সংস্কৃতে সাম্মানিক স্নাতক হওয়ার পাশাপাশি ডিএডের প্রশিক্ষণ নিলেও চাকরি মেলেনি। দেখেশুনে আত্মীয়স্বজনদের কেউ কেউ বলেছিলেন, উচ্চশিক্ষিত হলেও শুভেন্দুর পড়াশোনার মান নিশ্চয়ই ‘খারাপ’। না হলে কি আর একটা চাকরি জুটত না! সম্প্রতি প্রেমিকাও সম্পর্ক ছিন্ন করেন ‘খারাপ’ ছেলের সঙ্গে।
শুভেন্দু জানান, ‘‘খারাপ শব্দটি নিজের জীবনের সঙ্গে এ ভাবে জুড়ে যাওয়ায়, ভেবেছিলাম দোকানের নামেও থাক সেই শব্দটা। আর তা ভেবেই দোকানের নাম রেখেছি ‘শুভেন্দুর খারাপ চা’।’’ হাসতে হাসতে শুভেন্দু বলেন, ‘‘রাস্তা দিয়ে যাওয়ার পথে অনেকেই বিজ্ঞাপন দেখে খারাপ চায়ের ভাঁড়ে চুমুক দিয়ে পরখ করে নেন আমার চা ঠিক কতটা খারাপ!’’ এ হেন বিজ্ঞাপন দেওয়ার পর শুভেন্দুর বিক্রি ৩০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে দৈনিক দুশো থেকে আড়াইশো কাপ চা বিক্রি হলেও এখন প্রতি দিন প্রায় চারশো কাপ চা বিক্রি করেন ‘খারাপ’ চাওয়ালা।
খারাপের গেরোয় আটকে পড়া সেই ছেলেই বাজিমাত করল। সঙ্গী সেই ‘খারাপ’! বাঁকুড়ার ছাতনা লাগোয়া দুবরাজপুর মোড়ের শুভেন্দুর খারাপ চায়ের দোকানে এখন উপচে পড়ে ভিড়।