উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে (Delhi) হিন্দু-বিরোধী দাঙ্গার সময় আইবির অঙ্কিত শর্মাকে (Ankit Sharma) নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। অঙ্কিতের দেহের প্রতিটি অঙ্গে ছুরি দ্বারা আঘাত করা হয়েছিল। পোস্টমর্টেম রিপোর্টে বলা হয়েছে যে তাকে ৪০০ বারের বেশি বার কোপানো হয়েছিল। এক্ষেত্রে AAP কাউন্সিলর তাহির হুসেনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, তাহিরের গুন্ডারা তাকে টেনে তার বাড়িতে নিয়ে গেছিল।
এখন যেই ঘটনাগুলি উঠে আসছে সেগুলি দেখে মনে হচ্ছে যে অঙ্কিত শর্মা আগে থেকেই তাহির ও তার গুন্ডাদের টার্গেটে ছিলেন। এছাড়া তার হত্যার পিছনে বাংলাদেশি সন্ত্রাসীদের জড়িত থাকার ইঙ্গিত রয়েছে বলে ধরা হচ্ছে। সবার প্রথমে বিজেপি সাংসদ সুব্রমনিয়ান স্বামী বাংলাদেশি সন্ত্রাসীদের হাত আছে বলে অনুমান করেছিলেন। এখন একটি মিডিয়ার রিপোর্টও বলছে যে, অঙ্কিতকে হত্যার সময় সেখানে বাংলাদেশি সন্ত্রাসীদের অবস্থান পাওয়া গেছে।
অঙ্কিত শর্মা হত্যার তদন্তে এখন পর্যন্ত যে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, তা গভীর ষড়যন্ত্রের দিকে ইঙ্গিত করছে। দেখে মনে হচ্ছে এটি একটি দাঙ্গায় কেবল একটি মৃত্যু নয়, বরং একটি ‘টার্গেট কিলিং’ ছিল। অর্থাৎ অঙ্কিতকে ইচ্ছাকৃতভাবে টার্গেট করা হয়েছিল এবং তারপর তাকে মেরে ফেলা হয়। বর্তমানে পুলিশ ঘটনাটির প্রত্যেকটি ঘটনা যুক্ত করার চেষ্টা করছে।
এক প্রতিবেদন অনুসারে, অঙ্কিত ২৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৫ টার দিকে অফিস থেকে ফিরে এসে বন্ধুদের সাথে বেরিয়ে যায়। তাঁর সাথে তাঁর বন্ধু কালু এবং আরও কয়েকজন ছিলেন যারা কালভার্টের একপাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তারপর হটাৎ ওপাশ থেকে পাথর ছোঁড়া শুরু হয়ে যায় আর অঙ্কিত সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশকে জানায় যে, পাথর এসে অঙ্কিতের গায়ে লাগে এবং তিনি পিছলে পরে যান। এর পরে ওপাশ দিয়ে তিন থেকে চারজন লোক এসে অঙ্কিতকে ধরে নেয় আর তাকে টানতে টানতে একপাশ থেকে অন্যপাশে নিয়ে যায়। সেখানকার লোকেরা বলেছিল যে ‘আশ্চর্যের বিষয় হলো, তারা অঙ্কিত বাদে সেখান থাকা কাউকে স্পর্শ পর্যন্ত করেনি।
অঙ্কিতকে নির্জন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল (সম্ভবত কোনও বাড়িতে), কারণ এর পরে আর কেউ তাকে দেখে নি। সেখানে তার পোশাক ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল এবং তার সাথে নির্মম আচরণ করা হয়েছিল। তারপরে তার দেহটি আবার ড্রেনে ফেলে দেওয়া হয়। পরের দিন ২৬ ফেব্রুয়ারি তার লাশ ড্রেনে পাওয়া যায়। তার শরীরে কেবল আন্ডার গার্মেন্টস ছিল।
ঘটনাক্রম, প্রথম দিকের তথ্য, কিছু বিবৃতি এবং চিকিৎসকদের মতামত দেখে মনে হচ্ছে অঙ্কিতকে কোনও উদ্দেশ্যে হত্যা করা হয়েছে। আইবির এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছিলেন, “ঘটনাবলী নির্দেশ করে যে খুনিরা কিছু বার্তা দিতে চেয়েছে। আমরা যা দেখছি পাচ্ছি এটি তার চেয়ে অনেক বড় জিনিস ” অঙ্কিতের শরীরে আঘাতের সংখ্যা স্পষ্ট না হলেও, ডাক্তাররা যারা পোস্টমর্টেম করেছিলেন তারা পুলিশকে জানিয়েছেন যে তাঁর শরীরে কমপক্ষে ৫৪ টি গভীর ছুরিকাঘাতের আঘাত রয়েছে।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, টার্গেট কিলিংকে মাথায় রেখেই এখন মামলাটি তদন্ত করা হচ্ছে। তারা বলেছেন যে, “সত্যটি হল অঙ্কিতকে অপহরণ করে তাকে অনেকটা দূরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো যে তাকে ঘটনাস্থলে মারা হয়নি, এটি সন্দেহকে আরো বাড়িয়ে দেয়। দেহটি যে অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল, তার থেকে প্রতিশোধের বিষয়টি স্পষ্ট প্রকাশ পায় কারণ জনতার দ্বারা এইভাবে কোনো মানুষের মৃত্যু ঘটে না।
পুলিশকে কোনও ক্লু পাওয়া গেছে কিনা জানতে চাইলে প্রবীণ পুলিশ কর্মকর্তা বলেছিলেন যে প্রত্যক্ষদর্শীদের সাহায্য নিয়ে অঙ্কিতকে টেনে নিয়ে যাওয়া সেই ব্যক্তিকে সনাক্ত করার পক্রিয়া চলছে। তিনি বলেন যে “এলাকার টেকনিক্যাল সার্ভিল্যান্সর ভিত্তিতে প্রমাণের অপেক্ষা করা হচ্ছে। আমরা এমন এক বাংলাদেশী সন্ত্রাসীর সন্ধান করছি যাঁর অবস্থান সেসময় সেখানে পাওয়া গিয়েছিল।”
এটি লক্ষণীয় যে এর আগে বিজেপি সাংসদ সুব্রমনিয়ান স্বামীও আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যে তাহির হুসেনের সন্ত্রাসীদের সাথে সম্পর্ক রয়েছে এবং তদন্তের কারণেই অঙ্কিত শর্মাকে তারা হত্যা করে। ২৮ ফেব্রুয়ারি স্বামী টুইট করে বলেছিলেন যে, “আইবি অফিসার অঙ্কিত শর্মা বাংলাদেশি সন্ত্রাসীদের সাথে তাহির হুসেনের যোগসূত্র খুঁজছিল এবং তাই তাহিরের নির্দেশে তাকে হত্যা করা হয়। যদি অঙ্কিতের হত্যা ও বাংলাদেশী সন্ত্রাসীদের সাথে তাহিরের সম্পর্ক আছে কিনা সেই বিষয় তদন্ত হয় তাহলে একটা বড়ো পর্দাফাঁসের আশঙ্কা রয়েছে।