বাংলাহান্ট ডেস্ক: সংঘর্ষের বদলা এবার জলে! পাকিস্তানকে (Pakistan) কূটনৈতিক চাপে ফেলতে ভারতের পথেই হাঁটল তালিবান-শাসিত আফগানিস্তান। চিত্রল নদীর (যা আফগানিস্তানে কুনার নামে পরিচিত) উপর নতুন বাঁধ তৈরি করতে চলেছে কাবুল প্রশাসন। এর মাধ্যমে নদীর গতিপথ নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা করছে তারা। আফগান সরকারের এই সিদ্ধান্তে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে ইসলামাবাদে।
পাকিস্তানকে (Pakistan) চাপে ফেলতে এবার জলযুদ্ধে আফগানিস্তান
আসলে কুনার নদী আফগানিস্তান, পাকিস্তান (Pakistan) এবং তাজিকিস্তান জুড়ে প্রবাহিত একটি গুরুত্বপূর্ণ নদী। এর উৎপত্তি হিন্দুকুশ পর্বতমালা থেকে, যা আফগানিস্তানের উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত। প্রায় ৪৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদীটি কুনার ও নাঙ্গারহার প্রদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পাকিস্তানে প্রবেশ করে, যেখানে তার নাম হয় চিত্রল। পাকিস্তানের খাইবার পখতুনখোয়া প্রদেশে কৃষিকাজ ও পানীয় জলের প্রধান উৎস এই নদী। তাই নদীর প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্তে যথেষ্ট চাপের মুখে পড়তে পারে পাকিস্তান।
আরও পড়ুন:তাড়াহুড়ো নয়, স্থায়ী স্বার্থই আসল”, মার্কিন বাণিজ্য চুক্তিতে ভারতের দৃঢ় অবস্থান জানালেন পীযূষ গোয়েল
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলির প্রতিবেদন অনুযায়ী, আফগানিস্তানের সুপ্রিম লিডার হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদার নির্দেশেই কুনার নদীর উপর বাঁধ তৈরির প্রস্তাব চূড়ান্ত হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব নির্মাণের কাজ শুরু করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। যদিও এখনো পর্যন্ত আফগান সরকার ঠিক কোন এলাকায় বাঁধটি তৈরি হবে, তা প্রকাশ করেনি। অনুমান করা হচ্ছে, এই বাঁধের মাধ্যমে কাবুল কেবল পাকিস্তানকেই (Pakistan) নয়, নিজেদের জলের চাহিদা পূরণেও সুবিধা পাবে।
তবে বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, এই পদক্ষেপের পেছনে স্পষ্ট কূটনৈতিক বার্তা লুকিয়ে রয়েছে। পহেলগাঁও সন্ত্রাস হামলার পর যেমন ভারত সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত রেখে পাকিস্তানের উপর চাপ তৈরি করেছিল, আফগানিস্তানও এখন সেই একই কৌশল নিচ্ছে। ভারত সে সময় জানিয়ে দিয়েছিল, পাকিস্তান (Pakistan) যতদিন পর্যন্ত সন্ত্রাসবাদে আশ্রয় দেবে, ততদিন পর্যন্ত জলচুক্তি কার্যকর করা হবে না। এখন আফগানিস্তানও পাকিস্তানের সঙ্গে সীমান্তে চলমান সংঘর্ষ ও উত্তেজনার প্রেক্ষিতে জলকে কূটনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে।

আরও পড়ুন:বাংলাদেশে ভোটের আগে জামাতের নাটকীয় চাল!সংখ্যালঘু হত্যার দায়ে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইলেন শফিকুর রহমান
চিত্রল নদী নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা পাকিস্তানের (Pakistan) জন্য যে বিপদ ডেকে আনতে পারে, তা বলাই বাহুল্য। কারণ, খাইবার পখতুনখোয়ার মতো শুষ্ক অঞ্চলে এই নদীর জলের উপরই নির্ভরশীল কৃষি ব্যবস্থা। জলপ্রবাহ কমে গেলে খাদ্য সংকট এবং পানীয় জলের সমস্যা দেখা দিতে পারে। ফলে তালিবান সরকারের এই সিদ্ধান্ত কেবল পরিবেশ নয়, দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কেও নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানের (Pakistan) মধ্যে সম্পর্ক বরাবরই টানাপোড়েনপূর্ণ। সীমান্তে সন্ত্রাস, বাণিজ্য এবং আশ্রয়প্রার্থী ইস্যু নিয়ে দু’দেশের মধ্যে বিবাদ দীর্ঘদিনের। এখন তার সঙ্গে যুক্ত হল ‘জল-রাজনীতি’। ফলে আগামী দিনে দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে এই কুনার নদীই হয়ে উঠতে পারে নতুন সংঘর্ষের কেন্দ্রবিন্দু।













