বাংলা হান্ট ডেস্কঃ পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশনের (WBSSC) নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে রাজ্যে ফের তীব্র আলোচনা শুরু হয়েছে। একদিকে নিয়োগ সংক্রান্ত একাধিক মামলা, অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক নির্দেশ, সব মিলিয়ে শিক্ষক ও চাকরিপ্রার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তৈরি হয়েছে নতুন অনিশ্চয়তা। এই আবহে ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করে নিয়োগ প্রক্রিয়ার নানা দিক তুলে ধরেছেন বিজেপি নেতা তথা আইনজীবী তরুণজ্যোতি তিওয়ারি (Tarunjyoti Tewari)।
WBSSC নিয়োগ কাণ্ডে কী বললেন তরুণজ্যোতি (Tarunjyoti Tewari)?
ভিডিও বার্তায় তরুণজ্যোতি তিওয়ারি (Tarunjyoti Tewari) জানান, সুপ্রিম কোর্টের স্পষ্ট নির্দেশ ছিল ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে স্বচ্ছভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। কিন্তু বাস্তবে সেই নির্দেশ মানা হয়নি বলে তাঁর অভিযোগ।
তরুনজ্যোতি দাবি অনুযায়ী,
- প্রশ্নপত্রে ভুল ছিল
- নম্বর দেওয়ার ক্ষেত্রে গরমিল দেখা গেছে
- চিহ্নিত চাকরি-দুর্নীতির সঙ্গে যুক্তদের প্যানেলে রেখে দেওয়া হয়েছে
- নতুন ও পুরনো প্রার্থীদের একসঙ্গে মিশিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে
এই সব কারণেই একের পর এক মামলা গড়িয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। পরিস্থিতি সামাল দিতে শেষ পর্যন্ত WBSSC সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে সময় চায়।
সুপ্রিম কোর্টে সময় চাইল রাজ্য
পশ্চিমবঙ্গ সরকার সুপ্রিম কোর্টে জানায়, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। সেই আবেদন বিবেচনা করে শীর্ষ আদালত নিয়োগের সময়সীমা ২০২৬ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে যাঁরা বর্তমানে চাকরিতে রয়েছেন, তাঁরা ওই সময় পর্যন্ত বেতন পাবেন। তবে নতুন করে চাকরি পাওয়ার অপেক্ষায় থাকা প্রার্থীদের আগস্ট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এরপর আর দেরি হবে কি না, সে বিষয়েও কোনও নিশ্চয়তা নেই বলে উল্লেখ করেন তরুণজ্যোতি (Tarunjyoti Tewari)।
২০১৬ প্যানেল ও নতুন প্রার্থীদের মিশিয়ে ‘খিচুড়ি’?
তরুণজ্যোতির (Tarunjyoti Tewari) অভিযোগ, কমিশন ২০১৬ সালের প্যানেলে থাকা প্রার্থীদের সঙ্গে নতুন প্রার্থীদের একসঙ্গে মিশিয়ে বড় সমস্যা তৈরি করেছে। তাঁর দাবি, ২০১৬ সালের প্যানেলে যাঁরা আগে চাকরি করতেন, তাঁরা অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে প্রায় ১০ নম্বর অতিরিক্ত পাচ্ছেন। ফলে নতুন প্রার্থীরা ৬০ বা ৭০-এর মধ্যে প্রায় পূর্ণ নম্বর পেলেও চাকরি পাচ্ছেন না। অন্যদিকে, কম নম্বর পেয়েও ২০১৬ সালের প্যানেলের প্রার্থীরা অভিজ্ঞতার নম্বরের জোরে চাকরি পেয়ে যাচ্ছেন।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মানা হয়নি?
তরুণজ্যোতির (Tarunjyoti Tewari) বক্তব্য, সুপ্রিম কোর্ট কখনও বলেনি নতুন ও পুরনো প্রার্থীদের মিশিয়ে পরীক্ষা নিতে। রাজ্য সরকার চাইলে ২০১৬ সালের প্যানেলের জন্য আলাদা পরীক্ষা নিতে পারত। কিন্তু তা না করে নতুন ও পুরনো প্রার্থীদের একত্রে এনে অযোগ্যদের বাঁচানোর চেষ্টা করা হয়েছে বলে তাঁর অভিযোগ। তিনি এটাও স্পষ্ট করে বলেন যে, ২০১৬ সালের প্যানেলের সবাই অযোগ্য, এমন কথা তিনি বলেননি। তবে কিছু অযোগ্য এই পদ্ধতির কারণে থেকে যাবে এবং বঞ্চিত হবে নতুন যোগ্য প্রার্থীরা।
ভোটের মাঝখানে সময় বাড়ানো নিয়ে শঙ্কা
তরুণজ্যোতি (Tarunjyoti Tewari) বলেন, আগস্ট পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যেই ভোট রয়েছে। তাঁর আশঙ্কা, এই সময়ের মধ্যে তৃণমূল আবার সরকার গড়লে নিয়োগ দুর্নীতি বহাল থাকবে এবং ভোটের ফল দিয়ে সেই দুর্নীতিকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা হতে পারে।
নতুন সরকারের পক্ষে আবেদন
এরপর তিনি সাধারণ মানুষের কাছে আবেদন জানান, নতুন সরকার গঠনের জন্য। তাঁর বক্তব্য, নতুন সরকার এলে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী নতুন ও পুরনো প্রার্থীদের আলাদা করে পরীক্ষা হবে। যাঁরা স্পষ্টভাবে দুর্নীতিতে যুক্ত, তাঁদের বাদ দেওয়া হবে এবং যাঁরা যুক্ত নন, তাঁদের সুরক্ষা দেওয়া হবে। তরুণজ্যোতির দাবি, নতুন সরকার এলে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষার ভবিষ্যৎ নিয়ে আর কোনও খেলা হবে না। তাই তিনি ২০২৬ সালের ভোটের আগে ভেবেচিন্তে ভোট দেওয়ার আবেদন জানান।
গ্রুপ C ও D নিয়োগে বয়স ছাড়ে আপাতত স্থগিতাদেশ
এদিকে SSC-র গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি নিয়োগে বয়স সংক্রান্ত মামলায় গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সব যোগ্য প্রার্থীদের জন্য ১০ বছরের বয়স ছাড় দেওয়ার বিষয়ে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ আপাতত কার্যকর হবে না। বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ জানায়, এই নির্দেশ এখনই কার্যকর করলে বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে। তাই মামলাটি আপাতত ‘Kept in Abeyance’, অর্থাৎ পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত স্থগিত থাকবে। আদালতের মতে, প্রতিটি আবেদন আলাদা করে হলফনামা দেখে বিচার করা প্রয়োজন। একসঙ্গে অন্তর্বর্তী নির্দেশ দিলে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে।
শিক্ষক নিয়োগের সময়সীমা নিয়ে নির্দেশ বদল
এর আগে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ‘যোগ্য’ শিক্ষকরা স্কুলে কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন। এই সময়ের মধ্যেই নবম–দশম ও একাদশ–দ্বাদশ শ্রেণির নিয়োগ শেষ করতে হবে। কিন্তু সময়সীমা ঘনিয়ে আসায় রাজ্য সরকার, স্কুল সার্ভিস কমিশন ও মধ্যশিক্ষা পর্ষদ সুপ্রিম কোর্টে সময় বাড়ানোর আবেদন জানায়। সেই আবেদনের ভিত্তিতেই নিয়োগ প্রক্রিয়ার সময়সীমা ৩১ আগস্ট ২০২৬ পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, বর্তমানে কর্মরত শিক্ষকরা আগস্ট পর্যন্ত বেতন পাবেন এবং সেই সময়ের মধ্যেই নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। তবে নতুন করে চাকরির অপেক্ষায় থাকা প্রার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে।
রায় নিয়ে কী বললেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু?
সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তিনি সমাজমাধ্যমে লেখেন, নবম–দশম ও একাদশ–দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগ মামলায় সুপ্রিম কোর্ট গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দিয়েছে। তাঁর মতে, ৩১ আগস্টের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করার নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঠিক দিকনির্দেশের প্রতিফলন। তিনি আরও জানান, এই সময়ের মধ্যে শিক্ষকরা আগের মতোই কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন এবং স্কুল সার্ভিস কমিশনের স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতার পথেই এগোনোর বিষয়টি এই নির্দেশে স্পষ্ট হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ সভার মাঝেই ইস্তফার কথা বলে ফেললেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ! কী এমন ঘটল?
সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে আপাতত কিছুটা স্বস্তি পেলেও, গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি নিয়োগে বয়স ছাড় সংক্রান্ত মামলা স্থগিত থাকায় অনিশ্চয়তা পুরোপুরি কাটেনি। SSC নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ পর্যন্ত কোন পথে এগোয়, সেদিকেই এখন তাকিয়ে রাজ্যের হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থী। তার মধ্যে তরুণজ্যোতির (Tarunjyoti Tewari) মন্তব্য রাজ্যের নিয়োগ দুর্নীতিতে নতুন নতুন প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। এখন দেখার আগামীদিনে কী হয়।












