‘ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে’, আদিনা মসজিদ নাকি আদিনাথ মন্দির? ইতিহাস বুঝিয়ে দেবাংশুর পাল্টা তরুণজ্যোতি

Published on:

Published on:

Tarunjyoti Tiwari raises question on Bengals Adina Mosque
Follow

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট ঘিরে শুরু হয়েছে বড়সড় বিতর্ক। মালদহের আদিনা মসজিদকে নিয়ে করা প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠানের এক্স (X)-এ করা পোস্টকে কেন্দ্র করেই শুরু হয়েছে সেই বিতর্ক। এই বিতর্ক এখন সোশ্যাল মিডিয়ার হট টপিক।

কি লিখেছেন ইউসুফ পাঠান?

সম্প্রতি আদিনা মসজিদে গিয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ ইউসুফ পাঠান। সেখানকার কিছু ছবি ইউসুফ তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে লেখেন, “পশ্চিমবঙ্গের মালদহের আদিনা মসজিদ হল একটি ঐতিহাসিক মসজিদ যা ১৪ শতকে ইলিয়াস শাহী রাজবংশের দ্বিতীয় শাসক সুলতান সিকান্দার শাহ কর্তৃক নির্মিত হয়েছিল। ১৩৭৩-১৩৭৫ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত, এটি ভারতীয় উপমহাদেশের বৃহত্তম মসজিদ ছিল, যা এই অঞ্চলের স্থাপত্যের জাঁকজমক প্রদর্শন করে।” ইউসুফের এই পোস্টের পরই শুরু হয় প্রবল প্রতিক্রিয়া। ইউসুফের এই পোস্ট রিটুইট করে বিজেপি। বিজেপি সেই পোস্টের ক্যাপশনে লেখে ওটি ‘আদিনাথ মন্দির’। বিজেপির সেই পোস্ট কে আবার রিটুইট করেন দেবাংশু।

পাল্টা পোস্ট দেবাংশুর

বিজেপির পোস্টের প্রেক্ষিতে পাল্টা জবাব দিয়ে তৃণমূলের মুখপাত্র দেবাংশু ভট্টাচার্য লেখেন, “ASI তথ্য দেখুন। ইতিহাস পড়ুন। সঠিক জ্ঞান অর্জন করুন। হোয়াটসঅ্যাপ বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে আসল বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করুন। দিনের বেলায় ধূমপান বন্ধ করুন।” তাঁর এই মন্তব্য ঘিরেও নেটমাধ্যমে শুরু হয় ট্রোল ও পাল্টা মন্তব্যের ঝড়।

তরুণজ্যোতির পাল্টা জবাব

দেবাংশুর পোস্টের জবাবে বিজেপি সমর্থক তরুণজ্যোতি তিওয়ারি ‘হে কিডো’ বলে পাল্টা খোঁচা দিয়েছেন দেবাংশুকে। তরুণজ্যোতি লেখেন, “হে কিডো, তোমার সরকার সেই পৃষ্ঠাটি সরিয়ে দিয়েছে যেখানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছিল যে এটি একটি হিন্দু মন্দিরের উপর নির্মিত হয়েছিল। চিন্তা করো না, আমার কাছে স্ক্রিনশট ও প্রমাণ সবই আছে। শীঘ্রই এটি পুনরুদ্ধার করব।” এরপর তরুণজ্যোতি তিওয়ারি (Tarunjyoti Tiwari) ইতিহাস, স্থাপত্য আর বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে তুলে ধরেছেন মালদার ‘আদিনা মসজিদ’ ঘিরে  থাকা এক বিতর্কিত সত্যকে।

“ইতিহাসকে বিকৃত করা যায়, কিন্তু সত্য তার চিহ্ন রেখে যায়”, মন্তব্য তরুণজ্যোতির (Tarunjyoti Tiwari)

তরুণজ্যোতি তিওয়ারি (Tarunjyoti Tiwari) এদিন তাঁর এক্স (X) হ্যান্ডেলে লেখেন, “ইতিহাসকে বিকৃত করা যেতে পারে, কিন্তু সত্য তার চিহ্ন রেখে যায়।” তিনি দাবি করেন, মালদার তথাকথিত আদিনা মসজিদ যা ১৪ শতকের সুলতান সিকান্দর শাহের এক ‘অলৌকিক সৃষ্টি’ হিসেবে পরিচিত, সেটি আজ দাঁড়িয়ে আছে ধ্বংস এবং পুনর্গঠনের নীরব সাক্ষী হিসেবে।

এই প্রসঙ্গে তরুণজ্যোতি তিওয়ারি (Tarunjyoti Tiwari) সোশ্যাল মিডিয়ায় বিশেষভাবে উল্লেখ করে বলেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটেই স্পষ্টভাবে লেখা রয়েছে যে, “আদিনা মসজিদ ভারতের বৃহত্তম মসজিদগুলির মধ্যে একটি, যা ১৩৬৯ সালে সুলতান সিকান্দর শাহ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। পূর্ববর্তী হিন্দু মন্দির থেকে খোদাই করা ব্যাসল্ট পাথরের গাঁথুনি ৮৮টি ইটের খিলান এবং ৩৭৮টি গম্বুজকে সমর্থন করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে।” তরুণজ্যোতির প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, “যদি এই মসজিদ তৈরিতে পূর্ববর্তী হিন্দু মন্দিরের পাথর ও খোদাই ব্যবহার করা হয়ে থাকে, তাহলে ১৩৬৯ সালের আগে সেখানে ঠিক কী ছিল?”

তরুণজ্যোতি (Tarunjyoti Tiwari) আরও লিখেছেন যে, “যে কেউ আদিনা মসজিদের করিডোর দিয়ে হাঁটলে দেখতে পাবেন ভগবান বিষ্ণু, মা সরস্বতী এবং ভগবান গণেশের খোদাই; স্বস্তিক মোটিফ, ব্রহ্মকমল নকশা এবং ১০ ফুট পর্যন্ত হিন্দু মন্দির-শৈলীর ধূসর পাথরের ভিত্তি। এর উপরে লাল ল্যাটেরাইট পাথরের ব্যবহার প্রমাণ করে যে এটি এক বিশাল মন্দিরের পুনর্নির্মাণ।”

তাঁর দাবি স্থানীয় বিবরণে উল্লেখ আছে খননের সময় বহু মূর্তি ধ্বংস করা হয়েছিল বা গোপনে সরিয়ে রাখা হয়েছিল। কিছু প্রমাণ নাকি ইচ্ছাকৃতভাবে মুছে ফেলা হয়েছে, যাতে অতীতের ইতিহাস চাপা পড়ে যায়। এই প্রসঙ্গে তরুণজ্যোতির (Tarunjyoti Tiwari) বলেন, “সব সত্যকে কবর দেওয়া যায় না। বাংলার ইতিহাস পুনর্লিখনের আগে মনে রাখা উচিত আদিনা মসজিদের প্রতিটি ইট এখনও ‘আদিনাথ’-এর নাম ফিসফিস করে উচ্চারণ করে।”

Tarunjyoti Tiwari raises question on Bengals Adina Mosque

আরও পড়ুনঃ ট্রেনযাত্রায় চাদর-কম্বল অতীত! এবার থেকে যাত্রীদের জন্য থাকবে নয়া ‘উপহার’, বিশেষ ঘোষণা করলেন রেলমন্ত্রী

তরুণজ্যোতির (Tarunjyoti Tiwari)‌ এই পোস্ট ইতিমধ্যেই সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ইতিহাসবিদ ও স্থানীয়দের একাংশের মধ্যে নতুন করে প্রশ্ন উঠছে, আদিনা মসজিদ কি আসলে এক হিন্দু মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের উপর তৈরি? যদিও এ বিষয়ে সরকারিভাবে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি এখনও।