বাংলাহান্ট ডেস্ক: বাংলাদেশী লেখিকা তসলিমা নাসরিন। সাহসী লেখার জন্য নির্বাসিত হয়েছেন নিজের জন্মভূমি বাংলাদেশ থেকে। দীর্ঘ ২৫ বছর রয়েছেন ভারতের বুকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি নির্দ্বিধায় তার মন্তব্য তুলে ধরেন। বাস্তবে কি পর্যবেক্ষণ করলেন তার বিভিন্ন মন্তব্য করেন তিনি। সম্প্রতি তিনি পর্যবেক্ষণ করেছেন সামাজিক বৈষম্য। তা নিয়ে এবার মুখ খুললেন। কি বললেন পড়ে নিন।
” আজ আমি আমার ঘর দোর পরিস্কার করে যে মেয়েটি ওকে নিয়ে বিগ বাজার সুপারমার্কেটে গিয়েছি। আগে সে কোনওদিন দেখেনি বড়লোকদের কোনও সুপারমার্কেট। সে রীতিমত উত্তেজিত। ওকে বেশ কিছু জিনিস কিনে দিলাম। মহা খুশি। এরপর ওকে আমি ওর বাড়িতে পৌঁছে দেব বলে গাড়িতে উঠলাম। ড্রাইভারকে বললাম পাহাড়ি চলো। ড্রাইভার কিছুদূর গিয়ে মেয়েকে গাড়ি থেকে নামতে বললো, বললো, এখান থেকে রিক্সা নিয়ে নাও।
মেয়েটি দ্রুত নেমে গেল।
আমি ঠিক বুঝে পেলাম না কী ঘটলো।
ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলাম, জায়গাটা কি পাহাড়ি?
-না।
-তাহলে?
-এটা গোবিন্দপুরি।
-কিন্তু তোমার না পাহাড়ি যাওয়ার কথা?
-পাহাড়ি যাওয়ার কী দরকার? এখান থেকেই তো রিক্সা পেয়ে যাবে।
-কিন্তু আমি তো চাইনি ও রিক্সায় যাক। আমি ওকে গাড়িতে পৌঁছে দিতে চেয়েছিলাম।
-কোনও অসুবিধে হবে না ম্যাডাম, ও পেয়ে যাবে রিক্সা।
-বুঝলাম কিন্তু তোমাকে যে পাহাড়ি যেতে বললাম সেটা গেলে না কেন?
-ওদের বাড়ি নিশ্চয়ই খুব ঘিঞ্জি গলিতে। গলিতে গাড়ি ঢুকবে না।
-গিয়েই দেখতে ঢোকে কিনা। যতটুকু যাওয়া যায় যেতে।
কোনও উত্তর নেই ড্রাইভারের মুখে।
আমার মনে হলো, সে নিজে যে শ্রেণীর, তার চেয়ে মেয়েটির শ্রেণী নিচে বলে মেয়েটি এতটা সুবিধে পাক সে চাইছিল না। হয়তো সহ্য হচ্ছিল না মেয়েটির এত বড় সম্মান, যে, ওকে আমি পাশে বসিয়েছি, নিজে বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছি। তাই সে মেয়েটিকে কায়দা করে নামিয়ে দিয়েছে।
ড্রাইভারটি আমার চাকরি করে। আমি তাকে মাসে মাসে বেতন দিই। তাহলে আমার কথা শুনলো না কেন? আমি পুরুষ হলে শুনতো। আমি মেয়ে বলেই সে আমার অর্ডার অমান্য করে নিজে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমার সংগে যদি কাজের মেয়ে না হয়ে আমার কোনও বড়লোক বান্ধবী পাহাড়ি যেতে চাইতো, আর আমি ড্রাইভারকে বলতাম, পাহাড়ি চল, তাহলে সে কিন্তু ঠিকই যেত।
গরিবরাও দেখে কে তার চেয়ে বেশি গরিব, বেশি-গরিবকে গরিবরা অবজ্ঞা করে। ঠিক ধনীদের মতো। ধনীরা কিন্তু কম-ধনীদের অবজ্ঞা করে। গরিবরা যদি এক হতে পারতো, তাহলে দুনিয়াতে এত প্রচণ্ড ধনী থাকতো না, আর এত বিপুল পরিমাণে গরিবও থাকতো না।
তাহলে কি ধনী গরিবে পার্থক্য নেই? টাকা পয়সায় আছে, কিন্তু চরিত্রে নেই।”