বাংলাহান্ট ডেস্ক: বাংলাদেশি লেখিকা তসলিমা নাসরিন। বিতর্কিত লেখার জন্য নির্বাসিত বাংলাদেশ থেকে। এই একই কারনে তাঁকে ছাড়তে হয়েছে কোলকাতা। বর্তমানে দিল্লিবাসী তিনি। তসলিমাকে সবাই নারীবাদী লেখিকা হিসেবেই জানেন। নিজে মুসলিম হলেও থাকেননি পর্দার আড়ালে। নারীদের অগ্রাধিকার নিয়ে কথা বলেছেন, শুধু তাই নয়। তিনি কথা বলেছেন সমাজ নিয়ে। পড়ুন কি বললেন তিনি।
“পশ্চিমবঙ্গের অনেকের কাছে ‘বাঙাল ভাষা’টা এখনই বেশ একটা একজোটিক ভাষা । অনেকে বেশ মজা পায় ভাষাটা শুনলে। যেন দূর দেশের ভাষা এটি, যেন অচেনা কিছু। ঘটিরা রিলেট করতে পারে না। পূর্ব বংগ থেকে আসা লোকেরা রিলেট করতে পারে বটে, তবে তাদের ছেলে মেয়েরা অনেকটাই কম পারে, নাতি পুতিরা তো পারে না বল্লেই চলে। বাঙ্গাল ভাষা বলা পূর্ব পুরুষেরা ধীরে ধীরে গত হচ্ছেন। দিন যত যাবে, তত তাঁরা গত হবেন , তত এই ভাষাটা আরো বেশি অন্য দেশের, অন্য কালচারের, অন্য ধর্মের, অন্য মানুষের ভাষা হয়ে উঠবে।
একজোটিক বলেই সুশান্ত দাস, আমার মেগা সিরিয়াল ‘দুঃসহবাস’-এর পরিচালক, কলকাতার মুসলিম যে চরিত্রগুলো ছিল সিরিয়ালে, তাদের মুখের ভাষা ‘বাঙাল’ করে দিয়েছিলেন। আমি শত বলেও তাঁকে বোঝাতে পারিনি যে কলকাতার মুসলিমরা বাঙাল ভাষায় কথা বলে না। মু্সলিমদের সংগে মেলামেশা না করা বাঙালি হিন্দুর কাছে মুসলিম মানেই একজোটিক, মুসলিমদের মুখে শুদ্ধ বাংলা দেওয়াটায় তাদের আপত্তি, যে ভাষায় তারা কথা বলে, সে ভাষায় একজন মুসলমান কী করে কথা বলবে? এই ভাষা তো হিন্দুদের। মুসলমান হয় উর্দু বলবে, নয়তো ‘বাংলাদেশের ভাষা’ বলবে। কলকাতায় আমার বাঙালি মুসলমান বন্ধুরা এমনই ভয়ঙ্কর বাঙালি এবং এমনই প্রচণ্ড ঘটি যে বাস কে বাশ বলে, শশিকে ছছি বলে। কিন্তু সুশান্ত তাদের মুখে কিছু বসাতে যদি হয়ই, তবে বাঙ্গাল বসাবেন, বাংলা নয়। ভাগ্যিস যারা অভিনয় করেছিল, তারা কলকাতার বাঙালি মুসলমান নয়, কলকাতার বাঙালি হিন্দু ছিল, তাই পূর্ব পুরুষের কারণে হলেও বাঙালটা বলতে পেরেছিল।”