বাংলা হান্ট ডেস্কঃ বৃহস্পতিবার সকালে না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য (Buddhadeb Bhattacharjee)। রাজনীতির রঙ ভুলে তাঁর মৃত্যুতে শোকজ্ঞাপন করেছেন অনেকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুভেন্দু অধিকারী, বাদ যাননি কেউ। তবে ব্যতিক্রম লেখিকা তসলিমা নাসরিন (Taslima Nasrin)। উল্টে লিখলেন, ‘আমার চোখের জল অনেক বছর ঝরিয়েছেন’।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মৃত্যুর পর বিস্ফোরক তসলিমা (Taslima Nasrin)!
বুদ্ধদেববাবুর মৃত্যুর খবর জানাজানি হতেই সমাজমাধ্যমে একটি দীর্ঘ পোস্ট করেন তসলিমা (Taslima Nasrin)। একটা সময় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সখ্যতা থাকলেও তাঁর মৃত্যুর খবর শোনার পর কেন চোখের জল পড়ল না, সেটাও জানিয়েছেন তিনি। তসলিমা লেখেন, ‘বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মারা গিয়েছেন। …২০০৩ সালের আগে এরকম খবর শুনলে আমি হয়তো চোখের জল ফেলতাম। কিন্তু তিনি আমার চোখের জল অনেক বছর ঝরিয়েছেন , তিনি বেঁচে থাকাকালীন। তাই চোখ থেকে আজ কোনও জল ঝরলো না তাঁর জন্য। আসলে কোনও জল আর অবশিষ্ট নেই’।
লেখিকা জানান, ২০০২ সাল অবধি বুদ্ধদেববাবুর সঙ্গে তাঁর সখ্যতা ছিল। নন্দনে সাহিত্য সংস্কৃতি নিয়ে দু’জনের আড্ডা হতো। এমনকি প্যারিস থেকে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর জন্য উপহারও এনে দিয়েছেন বলে জানান তিনি। তবে ২০০৩ সালে তসলিমার ‘দ্বিখণ্ডিত’ বইটি নিষিদ্ধ করার পর থেকে বদলে যায় সেই সমীকরণ।
আরও পড়ুনঃ ‘পদত্যাগ করেননি, এখনও মা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী’! বোমা ফাটালেন হাসিনা-পুত্র জয়
দীর্ঘ পোস্টে তসলিমা (Taslima Nasrin) লেখেন, ‘২০০৩ সালে বলা নেই কওয়া নেই আমার দ্বিখণ্ডিত বইটি তিনি নিষিদ্ধ করলেন। সেদিনই মনে হয়েছিল আমি তাঁর চেয়ে খাঁটি বামপন্থী’। তিনি লেখেন, কলকাতার মানবাধিকার সংস্থা এপিডিআর ‘দ্বিখণ্ডিত’ নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা করেছিল। সেই মামলায় জয়ী হওয়ার পর বুদ্ধবাবুর রাগ আরও বেড়ে যায় বলে দাবি করেন তিনি। এরপরেই তাঁকে কলকাতা থেকে তাড়ানোর জন্য নাকি মরিয়া হয়ে ওঠেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। সাড়ে চার মাস গৃহবন্দি থাকার পর দেশ ছেড়ে চলে যান লেখিকা।
তসলিমা লেখেন, ‘শুনেছি পরে একটি বই লিখেছেন তিনি। তাঁর কী কী ভুল হয়েছিল তাঁর শাসনামলে, কী কী ভুল তিনি করেছিলেন, সবই লিখেছেন। শুধু আমাকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিনা দোষে যে তাড়িয়েছিলেন, সেই কথাটা উল্লেখ করেননি। এর মানে এ নিয়ে তাঁর কোনও অনুশোচনা ছিল না, তিনি মনে করতেন তিনি যা করেছিলেন ভাল করেছিলেন। আমার স্বপ্ন সাধ সব চুরমার করে দিয়ে তিনি ভাল করেছিলেন। একজন বাংলা-অন্ত-প্রাণের কাছ থেকে বাংলাকে ছিনিয়ে নিয়ে তিনি ভাল করেছিলেন’।
সব শেষে তসলিমা (Taslima Nasrin) লেখেন, বুদ্ধবাবুর প্রয়াণে অতীতের নানান স্মৃতি ভিড় করে এসেছে। তবে তিনি পরলোক অথবা আত্মায় বিশ্বাসী নন। সেই কারণে চিরশান্তিতে থাকুন অথবা যেখানে থাকুন ভালো থাকুন এই গোছের কথা বলতে পারবেন না। তবে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নিজ জীবনে যা যা ভালো কাজ করেছেন, তার জন্য তাঁকে ‘কমরেড, লাল সেলাম’ বলেন লেখিকা।