বাংলাহান্ট ডেস্ক: উত্তরবঙ্গের (North Bengal) উপর যেন নেমে এসেছে প্রকৃতির রোষ। টানা বৃষ্টি, ঝড়-জল, ধস—সব মিলিয়ে বিপর্যস্ত দার্জিলিং, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি-সহ উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলা। ফুঁসছে তিস্তা, ফুলে উঠেছে পাহাড়ি ঝরনা। নদীর জল বিপজ্জনক মাত্রা ছাড়িয়েছে, ভেসে গিয়েছে একাধিক সেতু ও রাস্তা। ঘনিয়ে এসেছে নতুন আশঙ্কা—আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় আরও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন রাজ্য থেকে কেন্দ্র—সব পক্ষই।
ভয়াবহ বিপর্যয় উত্তরবঙ্গ (North Bengal):
রবিবার দার্জিলিঙে (North Bengal) সেতু ভেঙে পড়ার ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৩ জন। তবে প্রশাসনের আশঙ্কা, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। ধস ও জলস্রোতে নিখোঁজ অনেকেই। উদ্ধারকাজ চলছে সেনা, এনডিআরএফ ও রাজ্য দুর্যোগ মোকাবিলা দফতরের যৌথ উদ্যোগে। পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, বন্ধ হয়েছে যাতায়াত। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, একাধিক গ্রাম সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে মূল ভূখণ্ড থেকে।
এই ভয়াবহ অবস্থার মাঝেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এক্স (X)-এ পোস্ট করে জানিয়েছেন গভীর সমবেদনা। তিনি লিখেছেন, “দার্জিলিঙে (North Bengal) সেতু ভেঙে পড়ার ঘটনায় আমি গভীরভাবে মর্মাহত। যাঁরা নিজেদের প্রিয়জনকে হারিয়েছেন, তাঁদের প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা। দার্জিলিং ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় বৃষ্টির জেরে কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এলাকা। কেন্দ্রীয় সরকার গোটা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে এবং দুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে বদ্ধপরিকর।” তাঁর এই বার্তা বিপর্যস্ত মানুষের মনে সামান্য আশার সঞ্চার ঘটিয়েছে।
Deeply pained by the loss of lives due to a bridge mishap in Darjeeling. Condolences to those who have lost their loved ones. May the injured recover soon.
The situation in Darjeeling and surrounding areas is being closely monitored in the wake of heavy rains and landslides. We…
— Narendra Modi (@narendramodi) October 5, 2025
অন্যদিকে, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সকাল থেকেই তিনি ব্যক্তিগতভাবে মনিটর করছেন বলে জানিয়েছেন। টিভি৯ বাংলাকে ফোনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি সকাল ৬টা থেকে সবকিছু মনিটর করছি। মৃত্যুর ঘটনায় আমি গভীরভাবে মর্মাহত। পাঁচটি জেলার জেলাশাসকদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। উদ্ধারকাজ ও ত্রাণ বিতরণ যাতে দ্রুত হয়, সেদিকেও নজর রাখা হচ্ছে।”
মমতা আরও জানান, ইতিমধ্যে বহু মানুষকে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করা হয়েছে। তিনি বলেন, “সেফ হাউসে বহু মানুষকে পাঠানো হয়েছে। যাঁদের বাড়ি ভেঙে গিয়েছে, তাঁদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। আর যাঁরা প্রিয়জনদের হারিয়েছেন, তাঁদের পরিবারকে আমরা সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করে দেব।”
পাহাড়ি এলাকায় এখন কার্যত জরুরি পরিস্থিতি। একদিকে অবিরাম বৃষ্টি, অন্যদিকে ধস ও নদীর ফুলে ওঠা জল বিপর্যয়ের মাত্রা আরও বাড়াচ্ছে। বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছে বহু জায়গায়। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আগামী কয়েকদিনে আরও বৃষ্টিপাত হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে। প্রশাসন সর্বোচ্চ সতর্কতায় কাজ করছে, তবে প্রকৃতির সামনে মানুষ যে এখনও অসহায়—উত্তরবঙ্গের (North Bengal) এই দৃশ্য তারই জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ।
এই মুহূর্তে গোটা রাজ্য উত্তরবঙ্গের পাশে। ত্রাণ ও পুনর্গঠনের কাজ শুরু হয়েছে জোরকদমে, তবে ক্ষতির হিসেব এখনও পুরোপুরি ধরা যাচ্ছে না। পাহাড়ে ধস, নদীতে বন্যা, আর মানুষের চোখে ভেসে থাকা আতঙ্ক—সব মিলিয়ে উত্তরবঙ্গের (North Bengal) আকাশ এখন ভারী শোক ও অজানার আশঙ্কায় রয়েছে।