১ লক্ষ কোটি টাকার ক্ষতি হলেও পেট্রোল-ডিজেলের দাম কমাল কেন্দ্র! কেন এই সিদ্ধান্ত? জানুন কারণ

বাংলা হান্ট ডেস্ক: গত শনিবার অর্থাৎ ২১ মে ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির কবলে পড়া দেশের মানুষকে বড় ধরনের স্বস্তি দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। ইতিমধ্যেই সরকার পেট্রোলের উপর কেন্দ্রীয় আবগারি শুল্ক ৮ টাকা এবং ডিজেলের উপর শুল্ক ৬ টাকা কমিয়েছে। এর ফলে, পেট্রোলের দাম লিটার প্রতি ৯.৫ টাকা এবং ডিজেলের দাম ৭ টাকা কমেছে। এদিকে, হঠাৎ সরকারের এই সিদ্ধান্তে হতবাক সবাই।

যদিও, বিরোধীরা এই সিদ্ধান্তকে “রাজনৈতিক স্টান্ট” হিসেবে বিবেচিত করেছেন। তবে, সরকার বলেছে যে, সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়েই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু, সরকারের এহেন সিদ্ধান্তের পেছনে ঠিক কোন কোন কারণ রয়েছে সেই প্রসঙ্গই বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হবে বর্তমান প্রতিবেদনে।

শুল্ক কমানোর পর পেট্রোল-ডিজেলের দাম কত হবে?
কেন্দ্রীয় সরকার পেট্রোলের উপর আবগারি শুল্ক ৮ টাকা এবং ডিজেলের উপর এই শুল্ক ৬ টাকা কমিয়েছে। এর আগে প্রতি লিটার পেট্রোলে আবগারি শুল্ক ছিল ২৭ টাকা ৯০ পয়সা, যা এখন নেমে এসেছে ১৯ টাকা ৯০ পয়সায়। পাশাপাশি, পূর্বে ডিজেলের উপর আবগারি শুল্কের পরিমান ছিল ২১ টাকা ৮০ পয়সা, যা কমিয়ে ১৫ টাকা ৮০ পয়সায় নিয়ে আসা হয়েছে। এদিকে, এই শুল্ক কমানোর পর পেট্রোলের দাম প্রতি লিটারে ৯.৫০ টাকা এবং ডিজেলের মূল্য প্রতি লিটারে ৭ টাকা কমেছে।

বড় শহরগুলিতে দাম কেমন?
নতুন নির্ধারিত দামের ফলে দিল্লিতে প্রতি লিটারে পেট্রোল ও ডিজেলের দাম হয়েছে যথাক্রমে ৯৬ টাকা ৭২ পয়সা এবং ৮৯ টাকা ৬২ পয়সা। অপরদিকে, মুম্বাইতে পেট্রোল ও ডিজেলের দাম হল ১১১ টাকা ৩৫ পয়সা ও ৯৭ টাকা ২৮ পয়সা। চেন্নাইতে প্রতি লিটার পেট্রোলের দাম ১০২ টাকা ৬৩ পয়সা এবং ডিজেলের দাম ৯৪ টাকা ২৪ পয়সা। পাশাপাশি, কলকাতায় পেট্রোল ও ডিজেলের দাম হল যথাক্রমে ১০৬ টাকা ৩ পয়সা এবং ৯২ টাকা ৭৬ পয়সা।

দীপাবলির আগে দাম কমানো হয়েছিল:
কেন্দ্রীয় সরকার গত বছর অর্থাৎ ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর দীপাবলির প্রাক্কালে আবগারি শুল্ক কমিয়েছিল। তখন সরকার পেট্রোলের উপর আবগারি শুল্ক কমিয়েছিল ৫ টাকা এবং ডিজেলের উপর এই শুল্ক কমানো হয় ১০ টাকা। এরপরে, উত্তরপ্রদেশ সহ পাঁচটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত পেট্রোল এবং ডিজেলের দাম স্থিতিশীল ছিল। যদিও, এই নির্বাচনের ফলপ্রকাশের ঠিক ১২ দিন পর অর্থাৎ ২২ মার্চ থেকে পেট্রোল এবং ডিজেলের দাম ফের বাড়তে শুরু করে।এমনকি, ২২ মার্চ থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত একটানা দাম বাড়তে থাকে। পাশাপাশি, মোট ১৫ দিনে পেট্রোল এবং ডিজেলের দাম ১০ টাকা হারে বেড়ে যায়।

কিভাবে তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়:
আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ১১০ ডলারের কাছাকাছি। এদিকে, অপরিশোধিত তেল কেনা থেকে শুরু করে পাম্পে তেল পৌঁছতে প্রায় ২২ দিন সময় লাগে। অর্থাৎ কোনো মাসের ১ তারিখে কেনা অপরিশোধিত তেল ২২ তারিখে বিক্রি করার জন্য পাম্পে পৌঁছায়।

মূলত, এক লিটার খুচরো তেলের দামের সাথে অপরিশোধিত তেল প্রক্রিয়াকরণের খরচ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এছাড়াও, শোধনাগার থেকে বেরোনোর সময় তেলের বেস প্রাইস নির্ধারণ করা হয়। এরপর সেখান থেকে পাম্পে তেল পরিবহনের খরচ, কেন্দ্র ও রাজ্যের কর এবং ডিলারের কমিশনও যোগ হয়। আর এসব খরচই গ্রাহকের কাছ থেকে আদায় করা হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পেট্রোল এবং ডিজেলের বেস প্রাইস হল যথাক্রমে ৫৬ টাকা ৩৫ পয়সা এবং ৫৭ টাকা ৯৪ পয়সা। যেগুলিতে এই আনুষঙ্গিক খরচ যুক্ত হয়।

পেট্রোল-ডিজেলের উপর আবগারি শুল্ক কমানোর কারণ:
এই প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিষয়ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক প্রদীপ বিশ্বাস জানিয়েছেন যে, “রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে মুদ্রাস্ফীতি বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারত তার অপরিশোধিত তেলের প্রয়োজনের ৮৫ শতাংশের বেশি আমদানি করে। যুদ্ধের কারণে অপরিশোধিত তেলের দামে ব্যাপক বৃদ্ধি হয়েছে, যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে ভারতেও।”

পাশাপাশি তিনি আরও বলেন যে, “বর্তমান সময়ে জ্বালানির ওপর সমস্ত কিছুই নির্ভরশীল। জ্বালানির দাম বাড়লে মুদ্রাস্ফীতিও বাড়তে থাকে। এই কারণে বাজারে পণ্যের ব্যবহার কমতে থাকে। এমতাবস্থায়, পেট্রোল এবং ডিজেলের উপর আবগারি শুল্ক হ্রাস মুদ্রাস্ফীতি কম রাখবে। যা দরিদ্র ও মধ্যবিত্তদের সাহায্য করবে।”

এই প্রসঙ্গে ড.সুমন ব্যাস বলেন, “দেশের অর্থনীতি সুষ্ঠুভাবে চালানোর পাশাপাশি আবগারি শুল্ক কমানোর রাজনৈতিক কারণও রয়েছে। মূলত, সরকার এক তির দিয়ে দু’টি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করার চেষ্টা করেছে। এতে একদিকে যেমন সাধারণ মানুষ স্বস্তি পাবে, অন্যদিকে রাজনৈতিক সুবিধাও হবে।”

today's Petrol Diesel Price in kolkata 4 th may

পাশাপাশি তিনি আরও বলেন যে, “২০২১ সালে তিনটি বিধানসভা আসন এবং তিনটি লোকসভা আসনে উপনির্বাচন হয়, যাতে বিজেপি একটি বড় ধাক্কা খেয়েছিল। বিশেষ করে হিমাচল প্রদেশে। সেই সময়ে হিমাচলের মুখ্যমন্ত্রী জয়রাম ঠাকুর পেট্রোল ও ডিজেলের ক্রমবর্ধমান দামকে নির্বাচনে খারাপ ফলের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। এবার হিমাচল ও গুজরাটে বিধানসভা নির্বাচন হতে চলেছে। নির্বাচনের সময় পেট্রোল-ডিজেলের দাম ইস্যু হয়ে উঠুক তা চায় না সরকার। এমতাবস্থায় সরকার সময়মতো এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”


Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর