বাংলা হান্ট ডেস্কঃ রেশন দুর্নীতি (Ration Scam) মামলায় সন্দেশখালির ঘটনার পর কেটে গিয়েছে একটা গোটা সপ্তাহ। এতদিনে ইডি (ED) অফিসারদের ওপর হামলাকারী দুই জনতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে এখনও মূল অভিযুক্ত শেখ শাহজাহানের টিকির নাগাল পাওয়া যায়নি। গত সপ্তাহে সন্দেশখালির (Sandeshkhali) ‘বাদশা’ তৃণমূল নেতা শাহজাহানের (Seikh Shahjahan) বাড়িতে তল্লাশিতে গিয়ে তার অনুগামীদের হাতে বাজে ভাবে আক্রান্ত হয় ইডি। মারধরের পাশাপাশি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির ইডি আধিকারিকদের ল্যাপটপ, মোবাইল, নথিপত্র, পার্স লুঠ হওয়ার অভিযোগও সামনে এসেছিল। এবার সেই গোটা ঘটনা হাইকোর্টে জানাল ইডি।
এদিন কলকাতা হাইকোর্টে ইডি আধিকারিকরা জানান, ঘটনার দিন ‘ঠান্ডা মাথায় ভেবে চিন্তে’ প্ল্যান করেই আধিকারিকদের কাছ থেকে তথ্য ছিনিয়ে নেয় বিক্ষুব্ধরা। গোটা ঘটনার কথা হাইকোর্টে খুলে জানিয়েছে ইডি। তদন্তকারী সংস্থা এও জানিয়েছে হামলার দিন ছিনতাই হয়ে যাওয়া জিনিসের মধ্যেই ছিল রেশন দুর্নীতির ‘সেনসেটিভ কনফিডেন্সিয়াল’ নথি।
ইডির দাবি, তদন্তকারী অফিসার রাজকুমার রামের থেকে ল্যাপটপ মোবাইল ফোন ব্যাগ ছিনিয়ে নেয় হামলাকারীরা। শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে একাধিক তথ্যপ্রমাণ ওই ছিনতাই হয়ে যাওয়া ব্যাগের মধ্যে ছিল। এদিন লিখিতভাবে অভিযোগ দায়ের করে ইডি জানিয়েছে, তদন্তকারী সংস্থার অনুমান, এই বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে অবগত করা সত্ত্বেও তারা ছিনতাই সামগ্রী উদ্ধারের জন্য কোনও পদক্ষেপ করেনি।
আদালতে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলে ইডির দাবি, তদন্তকে বাধা দেওয়ার জন্যই পরিকল্পনা মাফিক এসব কাণ্ড ঘটিয়েছিলেন হামলাকারীরা। প্রসঙ্গত, হামলার পরই বিবৃতি দিয়ে ইডি আরও জানিয়েছিল যে, হামলার পর তাদের টাকার ব্যাগ, নগদ টাকা, মোবাইল, ল্যাপটপ – ব্যক্তিগত জিনিসপত্রও ছিনতাই করেন গ্রামবাসীরা। গোটা এই এই হামলার পেছনে তৃণমূল নেতা শাহজাহান এবং তার ঘনিষ্ঠরাদের হাত রয়েছে বলে আগেই সন্দেহ প্রকাশ করেছিল ইডি।
কি ঘটেছিল? গত শুক্রবার সাতসকালে ইডির অভিযান ঘিরে একেবারে ধুন্ধুমার বেঁধে যায় উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালিতে। এদিন উত্তর ২৪ পরগনায় দুই তৃণমূল নেতার (TMC Leaders) বাড়িতে হানা দিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। আর সেই খবর ছড়িয়ে পড়তেই ইডি আধিকারিকদের ওপর হঠাৎ চড়াও তৃণমূল নেতার অনুগামীরা। কেন না জানিয়ে হানা দিয়েছে ইডি? এই প্রশ্ন তুলেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। ক্রমশ্য উত্তপ্ত হতে থাকে পরিস্থিতি। একসময় সবকিছু এতটাই হাতের বাইরে চলে যায় যে এলাকা ছাড়া হতে বাধ্য হন ইডি আধিকারিকরা। ইডিকেই এলাকা ছাড়া করে তৃণমূল নেতার অনুগামীরা (TMC Workers)।
রেশন দুর্নীতির তদন্তে সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখের সরবেড়িয়ার বাড়িতে হানা দেন ইডির আধিকারিকরা। তবে তৃণমূল নেতার বাড়িতে গিয়ে বারংবার ডাকাডাকি সত্ত্বে সাড়া মেলেনি কারও। এরপর ১ ঘণ্টা অপেক্ষার পর কেন্দ্রীয় বাহিনী তল্লাশির জন্য বাড়ির তালা ভাঙার কাজ শুরু করে। আর তাতেই তাদের ওপর চড়াও হয় উত্তপ্ত জনতা। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ কর্মাধ্যক্ষের শেখ শাহজাহানের অনুগামীরা ভীড় করে ফেলে গোটা এলাকায়।
আরও পড়ুন: কলকাতায় হুড়মুড়িয়ে নামবে তাপমাত্রা! দক্ষিণবঙ্গের ৫ জেলায় জারি ইয়েলো অ্যালার্ট: আবহাওয়ার খবর
হাজার হাজার তৃণমূল কর্মী-সমর্থক শাহজাহানের বাড়ির সামনে জড়ো হন। ইডি হানার বিরুদ্ধে শুরু হয় বিক্ষোভ। এখানেই শেষ নয়, ইডির আধিকারিকদের মারধরও করেন তৃণমূল নেতার অনুগামীরা। মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয় ইডি আধিকারিকদের। ভাঙচুর চলে ইডির গাড়ি। এরপর একদম ধাওয়া করে ইডি আধিকারিকদের এলাকা ছাড়া করেন কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী। সাথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের ওপরও হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ। তৃণমূলের কর্মীদের হাতে আক্রান্ত হন সাংবাদিকরাও।
অভিযোগ ওঠে ওই পরিস্থিতির মধ্যেই ইডি আধিকারিকদের কাছ থেকে ল্যাপটপ ছিনিয়ে নিয়েছিল তৃণমূল নেতার অনুগামীরা। গোটা ঘটনায় কেন্দ্রের তরফে সচিবস্তরে নবান্নের ওপর চাপ আসে। ইডি সদর দফতরে ওদিকে সিআরপিএফ রিপোর্ট কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্র রিপোরি দেয়। এরই মধ্যে কলকাতার সিজিও কমপ্লেক্সে এসে বৈঠক করেন ইডি ডিরেক্টর রাহুল নবীন। আদালতেও চলছে মামলা।