বাংলা হান্ট ডেস্ক: মধ্যপ্রদেশের মন্দসৌরে বিশ্ব বিখ্যাত অষ্টমুখী ভগবান পশুপতিনাথ মহাদেবের মন্দির রয়েছে। এখানে স্থাপন করা হচ্ছে সহস্ত্রেশ্বর মহাদেবের মূর্তি। এই শিবলিঙ্গের দৈর্ঘ্য হল প্রায় ৬.৫০ ফুট। শিবের এই নতুন রূপটি জলধারী অর্থাৎ জিলহরিতে ক্রেনের সাহায্যে স্থাপন করার চেষ্টা করা হয়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই এই জন্য ক্রেনের সাহায্য নিতে হয়। এই কারণে প্রশাসন PWD, PHE, জেলা পঞ্চায়েত সহ সমস্ত দপ্তরের ইঞ্জিনিয়ারদের ডেকে পাঠিয়েছিল।
কিন্তু এই শিবলিঙ্গ কীভাবে জিলহরিতে নিয়ে আসা হবে তা নিয়ে স্পষ্টভাবে কেউ কিছু বলতে পারেননি। এরপর মন্দিরে শিবলিঙ্গ স্থাপনের দায়িত্ব নেন এক মুসলিম মিস্ত্রি। যেখানে জলধারীতে শিবলিঙ্গ স্থাপন করতে গিয়ে অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ারদের ঘাম ছুটেছিল, সেখানে কর্মরত রাজমিস্ত্রি মকবুল হুসেন আনসারি আধিকারিকদের ধারনা দেন যে, শিবলিঙ্গটি বরফের উপর স্থাপন করা হলে বরফ গলে শিবলিঙ্গটি ধীরে ধীরে জলধারীর ভিতরে চলে যাবে।
মকবুল হুসেনের এই উপায় সকলেরই ভালো লাগে এবং বরফ অর্ডার করার পর বৃত্তাকার আকারে তা কেটে বরফের টুকরোগুলোর ওপর শিবলিঙ্গটিকে বসিয়ে দেওয়া হয়। তারপর দেখা যায় যে, বরফ গলে সত্যিই শিবলিঙ্গটি জায়গা করে নিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই, এই ঘটনায় মকবুল হুসেনের প্রশংসা করছেন সবাই।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, দারিদ্র্যতার কারণে মকবুল কখনো স্কুলে যাননি। তিনি দীর্ঘ ৮ বছর ধরে সৌদি আরবে মিস্ত্রি হিসাবে কাজ করেছেন। এছাড়াও, অনেক মন্দির নির্মাণে তাঁর বহু অভিজ্ঞতা রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এই প্রসঙ্গে মকবুল জানান যে, “আল্লাহ সকলের জন্যই এক। আমি খুব খুশি যে এই মহৎ কাজটি আমার দ্বারা সম্ভবপর হয়েছে।”
এই শিবলিঙ্গটি ১৫০০ বছর আগে দাশপুরের হোলকার সম্রাটের সময় চুনাবালি এবং পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়। পাশাপাশি, শিবলিঙ্গটি পাওয়া গিয়েছিল শিবনা নদী থেকে। এছাড়াও, অষ্টমুখী পশুপতিনাথের মূর্তিটিও পাওয়া গিয়েছিল শিবনা নদী থেকেই। শিবলিঙ্গের জন্য জলধারী তৈরি হয়েছিল গুজরাট থেকে। যার ওজন প্রায় সাড়ে তিন টন এবং শিবলিঙ্গের ওজন হল প্রায় দেড় টন।
এই কাজে নিয়োজিত ইঞ্জিনিয়ার দিলীপ যোশী জানিয়েছেন যে,” শিবলিঙ্গটির ওজন দেড় টন এবং জলধারীর ওজন সাড়ে তিন টন। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রযুক্তিগত সমস্যা ছিল চারদিকে পিলার থাকায় ক্রেনটি ভেতরে আসতে পারছিল না। অন্য কোনো ক্রেনও শিবলিঙ্গ স্থাপন করতে পারেনি। জলধারীকে একটি রোলার পাইপের সাহায্যে রাখা হয়েছিল এবং যখন শিবলিঙ্গ রাখার সময় আসে তখন এর নলাকার আকৃতির কারণে অনেক ঝামেলা হয়।”
তিনি আরও জানান যে, “এ জন্য নীচ থেকে বেল্ট লাগিয়ে তুলে আনার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তা না হলে আমাদের রাজমিস্ত্রি মকবুল আনসারি বললেন, তাতে বরফ ভরে বাইশ ফুট ভিতরে বরফ রেখে দিতে। তারপর বেল্টের সাহায্যে লাগিয়ে দেখলাম এক মিলিমিটারেরও পার্থক্য নেই। অর্থাৎ, মকবুল ভাইয়ের আইডিয়াটা কাজে এল। বরফ গলানোর জন্য চারদিকে গরম জল ঢেলে দেওয়া হয়। পাশাপাশি, এই কাজটি করতে প্রায় ১৪ ঘন্টা সময় লাগে। মকবুল ভাই সব সমস্যার সমাধান করেছেন এবং এই ঐতিহাসিক কাজটি ঘটেছে। স্বাভাবিকভাবেই আমরা সবাই খুব খুশি।”