২০০০ টাকা কেজি দুধ! চিনের পাল্লায় পড়ে সর্বস্বান্ত শ্রীলঙ্কা! ত্রাতা হতে পারে ভারত

বাংলা হান্ট ডেস্ক: চিনের ঋণের জালে আটকে থাকা শ্রীলঙ্কার অবস্থা ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। সেদেশে মুদ্রাস্ফীতির হার এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে, সাধারণ মানুষকে তাঁদের মৌলিক চাহিদার জন্যও রীতিমত সংগ্রাম করতে হচ্ছে। এমবতাবস্থায়, জীবন বাঁচাতে ভারতে চলে আসছেন শ্রীলঙ্কার অধিবাসীরা। গত ২২ মার্চ, ১৬ জনেরও বেশি জলপথে শ্রীলঙ্কা থেকে তামিলনাড়ুতে এসেছেন। তাঁরা মান্নার ও জাফনার বাসিন্দা বলে প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে।

তবে, রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দার কর্মকর্তারা মনে করছেন যে, এটি কেবল শুরু। আগামী সপ্তাহেই ভারতে প্রায় ২ হাজার শরণার্থী আসতে পারেন। মূলত ২০২০ সালে করোনার পরে, শ্রীলঙ্কার উপর ঋণের বোঝা বাড়তে শুরু করে। প্রথমত, তাদের আয়ের প্রধান উৎস ছিল পর্যটন। কিন্তু, মহামারীর আবহে তা নিষিদ্ধ করা হয়। তারপরই সরকারের ঋণ গ্রহণের নীতি এই পরিস্থিতিকে আরও উদ্বেগজনক করে তোলে।

খাবার থেকে শুরু করে কাগজ-ওষুধ সবই শ্রীলঙ্কায় আসে বাইরে থেকে। কিন্তু এখন শ্রীলঙ্কার কাছে এসব পণ্য কেনার জন্য আগের ঋণ শোধ করার মতো টাকা নেই। বর্তমান তথ্য অনুসারে, এই বছরে শ্রীলঙ্কাকে প্রায় ৬ (ভারতীয় মুদ্রায় ৪৫৮২৭৮৮০০০০ টাকা) বিলিয়ন ডলারের বকেয়া দিতে হবে। যার মধ্যে ১ বিলিয়ন ডলারের (ভারতীয় মুদ্রায় ৭৬৩৮০৮০০০০০ টাকা) একটি সার্বভৌম বন্ডও রয়েছে। কিন্তু, ফেব্রুয়ারির শেষ নাগাদ, শ্রীলঙ্কার কাছে মাত্র ২.৩১ বিলিয়ন ডলারের (ভারতীয় মুদ্রায় ১৭৬৪১৫৮৫৫০০০০) বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল।

এমতাবস্থায়, দেশের পরিস্থিতি এতটাই অবনতি হয়েছে যে কাগজের অভাবের কারণে, শ্রীলঙ্কা সরকারকে গত সপ্তাহে স্কুলের পরীক্ষা বাতিল করতে হয়েছে। যার ফলে ৪.৫ মিলিয়ন শিক্ষার্থীর পরীক্ষা স্থগিত হয়ে গিয়েছে। এছাড়াও, দেশে এলপিজি না পাওয়ায় এক হাজার বেকারি বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

শুধু তাই নয়, তীব্র মুদ্রাস্ফীতির জেরে দুধের দাম প্রতি কেজিতে বেড়ে হয়েছে ২,০০০ টাকা। ৪০০ গ্রাম দুধ আসছে ৭৯০ টাকায়। একইভাবে সেখানে চাল এবং চিনিও বিক্রি হচ্ছে ২৯০ টাকা কেজি দরে। এক সপ্তাহের মধ্যে এই দামগুলি ৫০০ টাকায় উঠবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

এমতাবস্থায়, ভারত জানুয়ারি থেকে শ্রীলঙ্কাকে ২.৪ বিলিয়ন ডলার সাহায্য করেছে। পাশাপাশি গত ১৭ মার্চ, ভারত শ্রীলঙ্কাকে ১ বিলিয়ন ডলারের ঋণের সুবিধাও ঘোষণা করেছে। যদিও, শ্রীলঙ্কার এই ভয়াবহ অবস্থার জন্য দায়ী হল চিন। প্রাথমিকভাবে, পরিকাঠামোগত উন্নতি, চাকরি, ভালো আয় এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার আশায় শ্রীলঙ্কা চিনের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছিল এবং এটাই ছিল তাদের প্রধান ভুল।

এমনিতেই চিন কিভাবে সম্প্রসারণবাদী নীতির মাধ্যমে অন্যান্য দেশকে পরাধীন করার অভিপ্রায় নিয়ে এগিয়ে চলেছে তা সারা বিশ্ব ভালো করেই জানে। ঋণের ভিত্তিতে একাধিক দেশে প্রভাব খাটাচ্ছে চিন। যার ফল হয়েছে ভয়ানক। মূলত, সেতু, রাস্তা, বন্দর, বিমানবন্দর, শিল্প শহর ইত্যাদি উন্নয়নের প্রস্তাব নিয়ে চিন শ্রীলঙ্কায় প্রবেশ করেছে।

images 14 2

যদিও, এই অবস্থাতেই চিন আবার শ্রীলঙ্কাকে ১.৫ বিলিয়ন ডলারের নতুন ঋণ দেওয়ার কথা ভাবছে। এই প্রসঙ্গে গত সোমবার চিনের রাষ্ট্রদূত চি জেনহংহে বলেছেন, চিনের উন্নয়ন ব্যাঙ্ক শ্রীলঙ্কাকে ৫০ কোটি ডলারের ঋণের প্রস্তাব দিয়েছে। এছাড়াও, তিনি জানিয়েছেন, শ্রীলঙ্কার সরকার আরও ১ বিলিয়ন ডলার ঋণের জন্য অনুরোধ করেছে যা তাঁরা বিবেচনা করছেন।


Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর