বাংলাহান্ট ডেস্কঃ অল ইন্ডিয়া রেডিওর একজন ঘোষক হিসাবে কাজ করলেও, নিজের মন থেকে কখনই অভিনয়ের বীজ উপড়ে ফেলতে পারেননি এই মানুষটি। ছোট বয়সের স্বপ্নকে বুকের একপাশে শক্ত করে আকড়ে ধরেছিলেন সেদিনের সেই রেডিও ঘোষক। স্বপ্নকে সত্যি করে তুলতে বিভিন্ন সেট ঘুরে যখন মুখ ছোট করে ফিরে যাচ্ছিলেন, তখন আচমকাই স্বর্গসুখ পেলেন জলসাঘরের সেটে।
সালটা ১৯৫৮, তখন স্টুডিওতে চলছিল ছবি বিশ্বাস অভিনীত জলসাঘর-এর শুটিং। শুটিং দেখে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন এমন সময় সত্যজিৎ রায় তাঁকে দেখিয়ে বললেন, ‘এই ছেলেটি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (soumitra chatterjee), আমার পরবর্তী ছবি অপুর সংসারে অপুর ভূমিকায় অভিনয় করবে’। ব্যাস চোখের সামনে নিজের ছোট বেলার সেই সমস্ত স্বপ্নগুলোর যেন বাস্তব রূপে এসে ধরা দিল সেই রেডিও ঘোষকের কোলে। শুটিং শুরু হতেই প্রথম টেক ওকে। এরপর একের পর এক হিট ছবি দিতে থাকলেন তিনি।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কেরিয়ারের সেরা চরিত্র গুলোর মধ্যে সবথেকে বেশি দর্শকের হৃদয়ছোঁয়া চরিত্র ফেলুদা। আজও ফেলুদা নাম শুনলেই, প্রথমে চোখের সামনে ভেসে ওঠে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মুখ। প্রথমে তাঁকে এই চরিত্রের জন্য নির্বাচন না করলেও, শোনা যায় পরবর্তীতে ফেলুদা চরিত্রে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ছাড়া আর কাউকে ভাবতে পারতেন না সত্যজিৎ রায়। ধীরে ধীরে সাফল্যের সিঁড়ি পেরিয়ে একের পর এক সেরা পুরস্কার আসতে থাকল তাঁর ঝুলিতে।
অবশেষে মহামারি করোনা ভাইরাসের কবলে এই বর্ষীয়ান অভিনেতাকেও পড়তে হল। গত ৪০ দিন ধরে লড়াই চলল। গত কয়েকদিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল অবস্থা সঙ্কটজনক সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের। করোনা মুক্ত হয়ে বাড়ি চলে গেলেও আবারও অবস্থান অবন্নতির কারণে ভর্তি হলেন হাসপাতালে।
চিকিৎসদের তত্ত্বাবধানে থেকেও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শারীরিক অবস্থার কখনও উন্নতি আবার কখনও অবন্নতি হতে থাকে। কিন্তু আর শেষ রক্ষা হল না। রবিবার দুপুর ১২ টা বেজে ১৫ মিনিটে বেলভিউ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। শেষ হল বাংলা চলচিত্রের আরও একটি কালজয়ী অধ্যায়ের।