বাংলা হান্ট ডেস্ক: এবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারক জে বি পারদিওয়ালা সরকারকে সোশ্যাল মিডিয়ায় লাগাম টানার জন্যে একটি আইন প্রণয়নের পরামর্শ দিয়েছেন। পাশাপাশি, এই বিচারকই মন্তব্য করেছিলেন নূপুর শর্মাকে নিয়ে। মূলত, সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যক্তিগত আক্রমণের বিষয়ে তিনি বলেন, অর্ধসত্য, অসম্পূর্ণ তথ্যের অধিকারী ছাড়াও আইনের শাসন, প্রমাণ, বিচার প্রক্রিয়া ও সীমা বোঝেন না এমন মানুষরা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রাধান্য পাচ্ছেন। এছাড়াও, বিচারক জেবি পারদিওয়ালা বলেন, সরকারের উচিত সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনা করা। তাঁর মতে, সংবেদনশীল মামলায় সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়ায় অযৌক্তিক হস্তক্ষেপ আদৌ ঠিক নয় এবং এটি নিয়ন্ত্রণের জন্য সংসদের একটি আইন নিয়ে আসা উচিত।
বিচারক বলেন, আদালত গঠনমূলক সমালোচনা গ্রহণ করে। তবে বিচারকদের ওপর ব্যক্তিগত আক্রমণ গ্রহণযোগ্য নয়। পারদিওয়ালার মতে, ভারত সম্পূর্ণভাবে শিক্ষিত গণতন্ত্র নয়। এখানে ধারণাগুলিকে প্রভাবিত করার জন্য সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করা হচ্ছে। বিচারপতি পারদিওয়ালা ক্যান ফাউন্ডেশন আয়োজিত এইচআর খান্নার স্মরণে একটি জাতীয় সেমিনারে এই বক্তব্য রেখেছেন।
আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়ার তিনটি “ডি”:
তিনি জানিয়েছেন যে, ভারতে আইন প্রণয়নের উপায় হল এটি প্রবর্তনের আগে এর গুণাবলী নিয়ে সংবাদপত্রে এবং জনসমক্ষে অবাধে আলোচনা করা হয়। তারপর যখন এটি সংসদে উপস্থাপন করা হয়, তখন এটি যথাযথভাবে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা আলোচিত হয়। এমতাবস্থায়, এটি পাস হয়ে গেলে আদালতে এর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। একে তিনটি “ডি” বলা যেতে পারে অর্থাৎ পাবলিক ডিসকাশন, পার্লামেন্টারি ডিবেট এবং জুডিশিয়াল ডিক্রি।
আইনের বিষয়ে আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যেতে পারে:
এটা বোঝা দরকার যে, আইন প্রণয়নে আদালতের নির্ণায়ক বিষয় এবং ভূমিকা কিভাবে রয়েছে। মূলত, ব্রিটেনে পার্লামেন্ট কর্তৃক গৃহীত আইন বাতিল করা অসম্ভব কারণ সেখানে সংসদের নিরঙ্কুশ সার্বভৌমত্ব রয়েছে। কিন্তু ভারতে সংসদের ক্ষমতা নির্দিষ্ট। এমতাবস্থায়, আইন প্রণয়নের অক্ষমতা এবং নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের ভিত্তিতে আইনের বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করা যেতে পারে।
ভারতে আইনের শাসনের বিশেষত্ব:
আমাদের দেশে আইনের বৈধতাকে মূলত দু’টি বিষয়ের ভিত্তিতে চ্যালেঞ্জ করা যেতে পারে। প্রথমত যদি কোনো আইন মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করে বা দ্বিতীয়ত যদি সেটি জনকল্যাণের জন্য না হয়। এগুলির ভিত্তিতে ভারতের আদালতগুলিতে আইন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেছেন যে, আইনের শাসন ভারতীয় গণতন্ত্রের সবচেয়ে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। এমতাবস্থায়, জনমতও আইনের অধীন হওয়া উচিত। তিনি স্পষ্ট জানান “আমি বিশ্বাস করি যে কোনো ইস্যুতে শুধুমাত্র ‘আইনের শাসন’-কে মাথায় রেখে সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। কারণ, বিচারগত সিদ্ধান্ত জনমত দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে না।”
প্রবাদের ভুল উদ্ধৃতি:
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বিচারক জে বি পারদিওয়ালা বলেছেন যে, “জনগণের কণ্ঠ হল ঈশ্বরের কণ্ঠস্বর”-এই বাক্যাংশটিকে ভুলভাবে উদ্ধৃত করা হয়েছে। এটি মূলত একটি হতাশার সুরে বলা হয়েছিল। এর মূল উদ্ধৃতিটি রয়েছে চার্ল ম্যাগনের সময় থেকে। এই প্রসঙ্গে বিচারক বলেন, বিচারের সময় মানুষ কি বলবে বা কি ভাববে এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করে যা প্রতিটি বিচারককে কষ্ট দেয়।
এমনকি পারদিওয়ালা এও জানিয়েছেন যে, একটি স্বৈরাচারী সরকারও দাবি করতে পারে যে তারা আইন দ্বারা শাসন করে। কারণ আইন রয়েছে বলেই তা মেনে চলা হয়। তাই, আইনের শাসনকে ভালোভাবে যাচাই করা উচিত।