বাংলা হান্ট নিউজ ডেস্ক: “ভারতে সবাই শুধু ধোনি বা কোহলিদেরকেই চেনে, আমরা চেয়েছিলাম ভারতবাসীরা আমাদের সম্পর্কেও জানুক!” কমনওয়েলথ গেমসে দেশের নাম উজ্জ্বল করে ইতিহাস গড়ার পর মন্তব্য করলেন ৪ লন বোলার। সত্যিই এখন গোটা ভারত এই খেলার সম্পর্কে জানে। এই ঐতিহাসিক পদকের আগে লন বোলের নাম কজন শুনেছিলেন তা হাতে গুনে বলা যেতো। কিন্তু এখন গোটা দেশ স্বর্ণপদক জয়ী এই প্রমিলাদের দৌলতে খেলাটি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছে। ভারতের চার সদস্যের দল লন বোলের সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে ১৬-১৩ গোলে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছিল যারা এই খেলার অন্যতম সেরা দল। তারপর ফাইনালে তারা কিভাবে দক্ষিণ আফ্রিকাকে পরাজিত করে স্বর্ণপদক জিতেছেন তা সকলেই জেনে গিয়েছেন ইতিমধ্যে। ইতিমধ্যেই সচিন টেন্ডুলকার থেকে শুরু করে কিংবদন্তি বক্সার মেরি কম এবং ভারতের আরও নানাবিধ ক্ষেত্রের কুশীলবরা এই চার জন খেলোয়াড়কে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
To pursue a lesser-known sport has its own challenges. It’s a proud moment for India that our women’s team has made it to the finals of the Women’s fours #LawnBowl event.
Best wishes for the finals & keep inspiring India to become a #SportPlayingNation.#CommonwealthGames2022 https://t.co/WWwJJTkSBH— Sachin Tendulkar (@sachin_rt) August 2, 2022
ইতিহাস গড়া এই চার ভারতীয় নারীর সম্পর্কে এখন মানুষের কৌতূহলের অভাব নেই। এই চারজন মহিলার নাম হলো লাভলী চৌবে (প্রধান), পিঙ্কি, নয়নমনি সাইকিয়া এবং রূপা রানী। লন বোলে ভারতীয় দলের নেতৃত্ব ছিল লাভলীর হাতে। লাভলী পেশায় একজন ঝাড়খণ্ড পুলিশের কনস্টেবল। দীর্ঘদিন ধরে অ্যাথলেটিক্সের সাথে যুক্ত তিনি। একসময় লং জাম্পারও ছিলেন এবং পূর্বাঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। এরপর হিপ ইনজুরির কারণে তাকে ওই খেলাটি ছেড়ে লন বোলকে বেছে নিতে হয়। ভেঙে পড়েছিলেন লাভলী। কিন্তু বিহারের তৎকালীন ক্রিকেট আম্পায়ার মধুকান্ত পাঠক এই সময় তার পাশে দাঁড়ান এবং লন বোল খেলতে অনুপ্রাণিত করেন। লাভলী সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন “আমি অ্যাথলেটিক্স ছেড়ে দিয়ে ২০০৮ সালে লন বোলের খেলতে শুরু করলাম। শুরুতে মানিয়ে নিতে সমস্যা হয়েছিল কিন্তু একটি জাতীয় প্রতিযোগিতায় পুরস্কার হিসেবে ৭০,০০০ টাকা জেতার পর্বআমি ভেবেছিলাম এই খেলা চালিয়ে যেতে পারব।”
এরপর আসে পিঙ্কির কথা যিনি একসময় রাজ্যস্তরে ক্রিকেটও খেলেছেন এবং দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের দলের নেতৃত্বের দায়িত্বও পেয়েছিলেন। লন বোলের সাথে তার পরিচয় আশ্চর্যভাবে। তার স্কুলকে ২০১০ সালে লন বোলারদের অনুশীলনের ভেন্যু হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছিল। সেই সময় এই খেলা দেখতে দেখতে এরপর খেলাটি তাকে এতটাই আকৃষ্ট করে যে তিনি ক্রিকেটের মতো ভারতবর্ষে জনপ্রিয় খেলা ছেড়ে লন বোলের হাত ধরে এগোতে শুরু করেন।
এরপর আসে আসামের নয়নমনি সাইকিয়ার কথা। টেংবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা নয়নমনি বন বিভাগের এক কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি করেন। এর আগে ভারোত্তোলনেরর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। কিন্তু সেই সময় পায়ে আঘাত লাগার কারণে তার কেরিয়ারে সমস্যা দেখা দেয়। ফলে বাধ্য হয়েই নয়ন ২০০৭ সালে ওয়েট লিফটিং ছেড়ে লন বোলকে বেছে নেন। এবারের কমনওয়েলথে ভারোত্তোলকদের অভাবনীয় সাফল্যের পাশাপাশি লোকে নয়নমনির নামও সমান গুরুত্ব দিয়ে মনে রাখবেন। কাজেই তার আজকে আর আফসোসের কোনও জায়গা নেই।
এরপর আসে রাঁচির বাসিন্দা রূপা রানীর নাম, যিনি কেরিয়ারের শুরুতে কাবাডি নিয়ে আগ্রহী ছিলেন। তিনি এখন ঝাড়খণ্ডের রামগড়ে জেলায় ক্রীড়া কর্মকর্তা হিসাবে যুক্ত রয়েছেন। তার লন বোলের সাথে জড়িয়ে পড়ার গল্পটি বাকিদের থেকে একটু অন্যরকম। রাঁচির আর কে আনন্দ বোলস গ্রিন স্টেডিয়ামে যখন লাভলী চৌবে প্রশিক্ষণের নিচ্ছিলেন তখন তার সাথে আলাপ হয় রূপার। লাভলীর কাছ থেকেই লন বোলের কথা শুনে ও দেখে খেলাটির প্রতি তার আগ্রহ জন্মায় এবং তিনি কাবাডি ছেড়ে লন বোলের হাত ধরে এগোনোর সিদ্ধান্ত নেন।
এরপর যার কথা ভুলে গেলে চলবে না তিনি হলেন কমনওয়েলথ গেমসে মহিলাদের লন বোল দলের ম্যানেজার অঞ্জু লুথরা। দলের সাফল্যে অত্যন্ত খুশি অঞ্জু বলেন, “আমি খেলোয়াড়দের কাছে মায়ের মতো। আমি ১৩ বছর ধরে এই খেলার সাথে যুক্ত। এরা সকলেই আমার মেয়ে বা আমার পরিবারের মতো। এবারে আমাদের জন্য পদক পাওয়াটা খুবই প্রয়োজনীয় ছিল, কারণ প্রত্যেকবার প্রতিযোগিতাগুলি থেকে যখন আমরা শূন্য হাতে দেশে ফিরে যেতাম তখন ফেডারেশন প্রশ্ন করতো যে আমরা কি করছি। আশা করি আমরা আমাদের মতো করে জবাব দিতে পেরেছি। আমাদের নিজেদের প্রমাণ করার প্রয়োজন ছিল এবং করতেও চেয়েছিলাম যে আমরা অন্য যে কোনও খেলার চেয়ে কোনও অংশে কম নই। সেটা করতে পেরে খুব ভালো লাগছে।”