কলকাতার সঙ্গে গভীর সম্পর্ক! এবার গণিতে “নোবেলজয়” করলেন ১০২ বছর বয়সী এই ভারতীয়

বাংলা হান্ট ডেস্ক: ইতিমধ্যেই বয়স পেরিয়েছে ১০০-র গন্ডি। ঝুলিতে রয়েছে একের পর এক বিরল সম্মান এবং পুরস্কার। তবে, সেই তালিকা এবার আরও সমৃদ্ধ করলেন কালিয়ামপুদি রাধাকৃষ্ণ রাও (Calyampudi Radhakrishna Rao)। অনেকেই তাঁকে চেনেন “সি আর রাও” নামে। বর্ষীয়ান এই ভারতীয়-মার্কিন গণিতবিদ তথা পরিসংখ্যানবিদ চলতি বছরে “আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান পুরস্কার” (International Prize in Statistics) পাচ্ছেন। যেটিকে গণিতের “নোবেল পুরস্কার” হিসেবে বিবেচিত করা হয়।

সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, ১০২ বছর বয়সে এই পুরস্কার জিতে রীতিমতো ইতিহাস তৈরি করেছেন কালিয়ামপুদি রাধাকৃষ্ণ রাও। মূলত, চিকিৎসা গবেষণা-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিসংখ্যান এবং তার প্রয়োগের ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। এমতাবস্থায়, আগামী জুলাই মাসে কানাডার অন্টারিওতে ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট আয়োজিত ওয়ার্ল্ড স্ট্যাটিস্টিকস কংগ্রেসে তাঁর হাতে এই পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।

জানা গিয়েছে, এটির পুরস্কারমূল্য হল ৮০,০০০ ডলার। এই প্রসঙ্গে ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ইন স্ট্যাটিস্টিকস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান গাই নেসন জানিয়েছেন, “এই পুরস্কার দেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা সি আর রাও-এর স্মরণীয় কাজগুলিকেই সম্মান জানাচ্ছি। তাঁর এই সব কাজ পরিসংখ্যানগত ভাবনার ক্ষেত্রে বিপ্লব নিয়ে আসার পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিজ্ঞান সম্পর্কে মানুষের ভাবনা-চিন্তার উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।”

এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, কর্ণাটকের হাড়াগালিতে এক তেলেগু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন কালিয়ামপুদি রাধাকৃষ্ণ রাও। অন্ধ্রপ্রদেশে স্কুলশিক্ষা শেষ করে তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য চলে আসেন কলকাতায়। ১৯৪৩ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্ট্যাটিস্টিকস নিয়ে পড়ার পর অন্ধ্র বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে MSc ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। পরে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিংস কলেজ থেকে ডক্টরেট এবং ১৯৬৫ সালে কেমব্রিজ থেকেই ডিএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন সি আর রাও।

এদিকে, এই পুরস্কারে জুড়ে গেছে কলকাতার নামও। মূলত, তাঁর তিনটি মৌলিক গবেষণা প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৪৫ সালের ক্যালকাটা ম্যাথমেটিকাল সোসাইটির বুলেটিনে। সেগুলির মধ্যে প্রথমটি হল “ক্রেমার-রাও লোয়ার বাউন্ড”। দ্বিতীয়টি হল “রাও-ব্ল্যাকওয়েল থিওরেম” এবং তৃতীয়টি “ইনফরমেশন জিওমেট্রি” নামে পরিচিত। এই গবেষণাগুলি পরিসংখ্যানবিদ্যার ক্ষেত্রে আধুনিকতার পথকে প্রশস্ত করেছে।

whatsapp image 2023 04 11 at 3.54.43 pm

পাশাপাশি, কালিয়ামপুদি রাধাকৃষ্ণ রাওয়ের কর্মজীবনও একাধিক ক্ষেত্র জুড়ে আবর্তিত হয়েছে। তিনি ভারতীয় স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর, জওহরলাল নেহরু অধ্যাপক এবং ভারতের জাতীয় অধ্যাপকের সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। এছাড়াও, তিনি পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর মাল্টিভ্যারিয়েট অ্যানালিসিসের এবারলি প্রফেসর, চেয়ার অব স্ট্যাটিস্টিক্স এবং ডিরেক্টর-সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদে দক্ষতার সাথে আসীন ছিলেন। বর্তমানে তিনি বাফেলো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এবং পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির প্রফেসর এমিরেটাস। উল্লেখ্য যে, ১৯৬৮ সালে কালিয়ামপুদি রাধাকৃষ্ণ রাও পদ্মভূষণ এবং ২০০১ সালে পদ্মবিভূষণ পেয়েছিলেন। তবে, এবার তিনি এক বিরল নজির গড়লেন।

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর