লাঠির সাহায্যে সাইকেল চালিয়ে দরিদ্র শিশুদের পড়াতে আসেন এই প্রতিবন্ধী শিক্ষক! নেন না কোনো বেতনও

বাংলা হান্ট ডেস্ক: মনের জোর এবং সদিচ্ছাকে সম্বল করেই যে সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে দূরে সরিয়ে রাখা যায় সেটাই যেন ফের একবার প্রমাণ করে দেখালেন ইনি। বর্তমান সময়ে যখন শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়েও অনেকে বিভিন্ন অজুহাতে সামাজিক কর্মকাণ্ড থেকে নিজেদের সরিয়ে নেন, ঠিক সেই আবহেই সকলের কাছে এক দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছেন মিলন মিশ্র (Milan Mishra)। একটি পা না থাকা সত্বেও প্রতিদিন ২০ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে তিনি দরিদ্র শিশুদের পড়াতে আসেন। শুধু তাই নয়, এই মহান কর্মযজ্ঞে সামিল হয়ে তিনি নেন না কোনো টাকাও।

শিক্ষার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছুই নেই: উত্তরপ্রদেশের সীতাপুর জেলার ব্রহ্মওয়ালি গ্রামের বাসিন্দা মিলন মিশ্র শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হওয়ায় লাঠির সাহায্যেই হাঁটতে হয় তাঁকে। কিন্তু তা সত্ত্বেও, ৩০ বছর বয়সী মিলন প্রতিদিন ২০ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে দুস্থ শিশুদের পড়াতে যান। মূলত, মিলন নিজেও শৈশবে দারিদ্রতার সম্মুখীন হয়েছেন। স্কুলে যেতে তাঁকে ৬ কিলোমিটার হাঁটতে হত। এমতাবস্থায়, একটি পা না থাকায় স্বাভাবিকভাবেই এই কাজ ছিল অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। কিন্তু তা সত্ত্বেও, তিনি হাল ছাড়েননি। বরং, তাঁর লক্ষ্য স্থির রেখে তা পূরণ করেন মিলন।

এদিকে, ছোটবেলায় স্কুলে পড়াকালীন ফি দেওয়ার মত টাকা না থাকায় মিলন তা শিক্ষকদের জানান। এরপর স্কুল তাঁর ফি মকুব করে দেয়। আর এভাবেই অভাবকে দূরে সরিয়ে রেখে মিলন কলেজে ভর্তি হন এবং স্নাতক সম্পন্ন করেন। বর্তমানে মিলন সীতাপুর জেলার একাধিক গ্রামের শিশুদের টিউশন পড়ান। সেইসঙ্গে তিনি সাইকেলে ঘোরাঘুরি করে মানুষকে শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে বুঝিয়ে সচেতনও করেন। তাঁর মতে, শিক্ষার ভিত্তিতেই দারিদ্রতা ও অসহায়তা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

মিলন গরিব শিশুদের কাছ থেকে কোনো বেতন নেন না: মিলন শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হলেও তিনি নিজেকে সেটি উপলব্ধি করতে দেন না। আর সেই কারণেই তিনি তিন চাকার গাড়ির পরিবর্তে দুই চাকার সাইকেল চালান। যার জন্য তাঁকে লাঠির সাহায্য নিতে হয়। সর্বোপরি, মিলন শিশুদের টিউশন পড়ানোর পরিবর্তে তাদের কাছ থেকে কোনোরকম টাকা নেন না। কারণ দরিদ্র পরিবারের শিশুদের ফি দেওয়ার মতো পরিস্থিতি আদৌ নেই। এমতাবস্থায়, ওই সব শিশুর অভিভাবকরা মিলনকে খাদ্যদ্রব্য বা শাকসবজির মত জিনিস বেতন হিসেবে দেন। আর এগুলির সাহায্যেই দিন গুজরান হয় মিলনের।

WhatsApp Image 2022 08 23 at 5.17.16 PM

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, মিলনের পরিবারে এতটাও আর্থিক দুর্বলতা ছিল না। বরং তাঁর ভাই উপার্জন করতেন। কিন্তু ৪ বছর আগে মিলনের ভাই এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। এদিকে, করোনাকালে মারা যান মিলনের বাবাও। এমতাবস্থায়, মিলনের পক্ষে পরিবারের আর্থিক অবস্থা সামলানো কঠিন হয়ে পড়ে। পরে টিউশন শুরু করে সামান্য উপার্জিত আয় দিয়ে সংসার চালাতে শুরু করেন তিনি।


Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর