চা বিক্রি করে দিত স্কুলের ফি! দশম শ্রেণির পরীক্ষায় জেলায় প্রথম হয়ে তাক লাগাল অনাথ পড়ুয়া

বাংলা হান্ট ডেস্ক: বর্তমান প্রতিবেদনে আজ আমরা এমন এক পড়ুয়ার প্রসঙ্গ উপস্থাপিত করব যার সাফল্যের কাহিনি শুনে আবেগাপ্লুত হবেন যে কেউই। পাশাপাশি, ওই পড়ুয়া প্রমাণ করে দেখিয়েছে যে, ইচ্ছে থাকলেই সমস্ত প্রতিবন্ধকতা এবং বাধাকে দূরে সরিয়ে রেখে তৈরি করা যায় সাফল্যের নজির। আর এই আপ্তবাক্যকে মাথায় রেখেই উত্তরপ্রদেশের এই ছাত্র এখন সকলের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছে।

ইতিমধ্যেই উত্তরপ্রদেশ শিক্ষা বোর্ড সম্প্রতি দশম এবং দ্বাদশ শ্রেণির ফলাফল ঘোষণা করেছে। যেখানে বহু শিক্ষার্থী সাফল্যের সাথে পাশ করেছে। কিন্তু, তাদের মধ্যে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে উজ্জ্বল গুপ্ত নামের এই পড়ুয়া। শুধু তাই নয়, কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে সে উত্তরপ্রদেশের হামিরপুর জেলায় ফলাফলের ভিত্তিতে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। কিন্তু, উজ্জ্বল তার এই বিরাট কৃতিত্ব ভাগ করে নিতে পারেনি মা-বাবার সাথে। কারণ, ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাসে সে অনাথ। এমতাবস্থায়, দাদু-দিদার কাছেই বড় হয়ে উঠেছে সে।

দাদু-দিদা চা বিক্রি করে পড়িয়েছেন:
দশম শ্রেণির পরীক্ষায় হামিরপুর জেলায় প্রথম হওয়া উজ্জ্বলের জীবনযুদ্ধ শুরু হয়েছে একদম ছোট থেকেই। জানা গিয়েছে, উজ্জ্বলের বাবা রামচন্দ্র গুপ্ত ক্যান্সারে ভুগছিলেন। ২০১০ সালে তিনি মারা যান। এমতাবস্থায়, বাবার মৃত্যুশোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ২০১৩ সালে মাকে হারায় সে। মাত্র কয়েকবছরের ব্যবধানেই অনাথ হয়ে পড়ে উজ্জ্বল।

এমতাবস্থায়, উজ্জ্বলের দাদু-দিদা তাকে এবং তার ছোট বোনকে মানুষ করার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। পাশাপাশি, তাদের পড়াশোনার ব্যবস্থাও করেন তাঁরা। কিন্তু, বয়সের ভারে তাঁদের কাজ করার ক্ষমতা ছিল না বললেই চলে। এদিকে, উপায় না পেয়ে তাঁরা চা বিক্রি করতে শুরু করেন। আর এভাবেই নাতি-নাতনিদের পড়ার খরচ জোগাতে থাকেন তাঁরা।

এদিকে, চা বিক্রির মাধ্যমে তাদের স্কুলের ফি দেওয়ার পাশাপাশি পড়াশোনার যাবতীয় খরচ সামলাতে থাকেন উজ্জ্বলের দাদু-দিদা। এমনকি, উচ্চ শিক্ষার জন্য তাদের উৎসাহিত করেন তাঁরা। উজ্জ্বলের দাদু-দিদা চেয়েছিলেন বড় হয়ে উজ্জ্বল এবং তার বোন যেন ভালো কিছু করতে পারে। আর তাঁদের সেই স্বপ্নপূরণ করতেই তৎপর হয়েছে উজ্জ্বল। শুধু তাই নয়, সে গর্বিত করেছে তাঁর দাদু-দিদাকেও।

Ujjaval District topper 1

জানা গিয়েছে, স্কুলের পড়াশোনা শেষের পর উজ্জ্বল বি.টেক করে ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়। ইতিমধ্যেই সেজন্য সে প্রস্তুতি শুরু করেছে। এদিকে, রেজাল্ট হাতে পেয়েই বাবা-মার জন্য চোখে জল আসে তার। পাশাপাশি, উজ্জ্বলের এই দুর্দান্ত রেজাল্টের খবর প্রকাশ্যে আসতেই তাকে শুভকামনা জানিয়েছেন সকলেই। এছাড়াও, তার এই লড়াকু মানসিকতাকেও কুর্ণিশ জানিয়েছেন সবাই। বাবা-মাকে হারিয়েও জীবনযুদ্ধে থেমে থাকেনি সে। বরং, পরিশ্রমের মাধ্যমে আজ সবার মাঝে সে “উজ্জ্বল” হয়ে উঠেছে।

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর