বাংলা হান্ট ডেস্ক: প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও সাহসিকতার ওপর ভর করে সাফল্যের গল্প লিখেছেন এমন মানুষের সংখ্যা দেশ তথা বিশ্বে নেহাত কম নেই। পাশাপাশি, এমন অনেকেই আছেন যারা এখনও সমস্ত প্রতিবন্ধকতার সাথে লড়াই করে এগিয়ে চলেছেন তাঁদের লক্ষ্যে। আর তাঁদের এই লড়াই দেখেই বোঝা যায় যে, তাঁরা একদিন ঠিক সফল হবেন। পাশাপাশি, সেই সমস্ত মানুষ তাঁদের লড়াকু মানসিকতার জন্যই সকলের কাছে হয়ে ওঠেন অনুপ্রেরণা।
বর্তমান প্রতিবেদনেও আমরা ঠিক এমনই এক খুদে পড়ুয়ার প্রসঙ্গ উপস্থাপিত করতে চলেছি যে ভালোভাবে পড়াশোনা করে শিক্ষিকা হওয়ার স্বপ্ন দেখে সেটিকে বাস্তবায়িত করার জন্য অল্প বয়সেই শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে হারিয়ে দিয়ে জীবনযুদ্ধে অগ্রসর হয়েছে। মাত্র ১০ বছর বয়সী সীমা একটি ভয়াবহ পথ দুর্ঘটনায় হারিয়ে ফেলে তার একটি পা। এমতাবস্থায়, কঠিন এই সত্যকে মেনে নিয়েই বিহারের জামুই জেলার খয়রা ব্লকের ফতেপুর গ্রামের বাসিন্দা সীমা মনের জোরকে সম্বল করে বাকি সহপাঠীদের সঙ্গে মন দিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, একটি পায়ের সাহায্যেই হেঁটে সে প্রতিদিন ৫০০ মিটার দূরত্ব অতিক্রম করে স্কুলেও যায়।
মূলত, এক মহাদলিত পরিবারে জন্ম নেওয়া সীমা বছর দু’য়েক আগে ওই গ্রামেই এক পথ দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়। একটি ট্রাক্টরের ধাক্কায় মারাত্মকভাবে জখম হয় সে। এমতাবস্থায়, সীমাকে যখন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, তখন তার শারীরিক অবস্থা এতটাই সঙ্কটজনক ছিল যে তার জীবন বাঁচাতে একটি পা কেটে বাদ দেন চিকিৎসকেরা। তবে, সেই দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেয়ে সুস্থ হওয়ার পর সীমা তার সব কাজ এক পায়ে করে। এমনকি এক পায়ের ওপর ভর করেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকে সে।
বাবা-মা শ্রমিকের কাজ করেন:
ফতেপুর গ্রামের একটি সরকারি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী সীমার বাবা-মা শ্রমিকের কাজ করেন। পাশাপাশি, তার বাবা থাকেন ভিনরাজ্যে। আপাতত, পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সীমা এভাবেই বড় হয়ে উঠছে। এমনকি, সীমার পড়াশোনার প্রতি প্রবল আগ্রহও রয়েছে। আর এই কারণেই শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে স্কুলে যাচ্ছে সে। এই প্রসঙ্গে সীমা জানিয়েছে, তার বাবা-মা দু’জনেই শ্রমিক। পাশাপাশি, তাঁরা শিক্ষিতও নন। কিন্তু, সে পড়াশোনা করতে চায়। এছাড়াও, ভবিষ্যতে একজন শিক্ষিকা হয়ে পরিবারকে সাহায্য করতে চায় বলেও জানিয়েছে সে।
শিক্ষকরা কি বলছেন?
এই প্রসঙ্গে ফতেপুর স্কুলের শিক্ষক গৌতম কুমার গুপ্ত বলেন, প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী সীমা নিজের কাজ নিজেই করে। পাশাপাশি, সীমা মন দিয়ে পড়াশোনা করে বলেও জানান তিনি। এছাড়াও, সীমার মা বেবী দেবী জানিয়েছেন, গ্রামের বাচ্চাদের স্কুলে যেতে দেখে সীমাও জোর করেছিল, যার কারণে তাকে স্কুলে ভর্তি করা হয়। তিনি আরও জানান, মেয়ের জন্য বই কেনার মতো টাকাও তাঁদের কাছে কাছে ছিলনা, কিন্তু স্কুলের শিক্ষকরা সবই দিচ্ছেন। পাশাপাশি, তাঁর মেয়ের মনের জোর দেখে তিনি অত্যন্ত গর্বিতও বটে।