বাংলা হান্ট নিউজ ডেস্ক: আপনি কি বেকার? সদ্য নিজের পড়াশুনোর কেরিয়ার সম্পূর্ণ করে ভবিষ্যতে কি করবেন সেই নিয়ে ভাবছেন? গতে বাঁধা চাকরি কি আপনার পছন্দের বিষয় নয়? তাহলে আজকের এই প্রতিবেদনে আপনাদের জন্য রয়েছে একটি অসাধারণ সমাধান সূত্র। এই প্রতিবেদনে আমরা আপনাকে বলব অল্প মূলধন সম্বল করে শুরু করা যায় এমন কিছু ব্যবসার কথা যা আপনাকে অল্পদিনেই লাভবান গড়ে তুলবে। আপনি যদি ছোটখাটো কোন কাজ করেন তাহলে তার সাথেও চালিয়ে যেতে পারেন এই ব্যবসাগুলি। আসুন জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু ইউনিক ব্যবসার সম্পর্কে যা আপনি কম অভিজ্ঞতা এবং অল্প মূল ধর্মীয় শুরু করতে পারবেন।
১. মুরগি প্রতিপালন:
খুব অল্প জায়গার মধ্যে এই ব্যবসা আরম্ভ করে আপনি খুব কম সময়ের মধ্যে লাভের মুখ দেখতে পারবেন। তবে এই বিশেষ ব্যবসাটিতে নামতে গেলে আপনাকে কয়েকটি ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে যেগুলো সম্পর্কে নিম্নলিখিত অংশে আলোচনা করা হলো।
● ভালো জাতের ব্ল্যাক অস্ট্রালর্প বা রোড আইল্যান্ড রেড মুরগি ও মোরগ কিনে নিন। ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের এই প্রাণী কিনলে তারা আসন্ন কিছু সময়ের মধ্যেই ২ কেজি ওজন সম্পন্ন হয়ে যাবে। এরপর সেগুলোকে বিক্রি না করে প্রতিপালন করতে থাকুন। দেশি মুরগির সাথে উন্নত জাতের মোরগের প্রজনন ঘটিয়ে তৈরি করা সম্ভব উন্নত প্রজাতির মুরগি। এতে জিনের উৎকর্ষতাও বৃদ্ধি পায়।
● কঞ্চি বা কাঠের তক্তার সাহায্যে আপনি মুরগিদের জন্য একটি ঘর প্রস্তুত করতে পারেন। তবে আলো বাতাস যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায় সেই ব্যাপারটি খেয়াল রাখতে হবে। এক জায়গায় আপনি মোটামুটি ১০ টি মোরগ-মুরগি নিয়ে এই যাত্রা শুরু করতে পারেন।
● সকালে এবং সন্ধ্যায় কিছুটা খাদ্যদ্রব্য তাদেরকে দিয়ে দিলে তারা সারাদিন সেটি খুটে খুটে খেতে থাকবে। তাদের মলমুত্র যাতে খাবারের সাথে মিলামিশে একাকার না হয়েছে সেই জন্য ঘরের মধ্যে কিছুটা তুষ ছড়িয়ে রাখুন। এরপর বাসি ভাত, শাক সবজির খোসা, চালের গুঁড়া, ভাঙা গম ইত্যাদি তাদেরকে খাওয়ার হিসেবে দিয়ে দিন। তবে তাদের যাতে জীবাণু সংক্রান্ত কোন রোগ না হয় সেই ব্যাপারে আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে। প্রয়োজনে নিতে হবে পশু চিকিৎসকের সাহায্য।
● এরপর মোরগ মুরগিদের প্রজনন সম্পন্ন হলে বাড়িতে ডিম ফোটানোর মেশিন নিয়ে এসে ডিমগুলি থেকে মুরগির বাচ্চা উৎপাদন করুন। সংকর জাতীয় মুরগিগুলি বছরে ১৪০ থেকে ১৫০ টি করে ডিম দিয়ে থাকে এবং তাদের ডিম উৎপাদন ক্ষমতা চলে আসে চার-পাঁচ মাসের মধ্যেই।
● এরপর আপনি মুরগির মাংস বিক্রি করতে পারেন এবং ডিম হিসেবেও বিক্রি করে বিশাল লাভ করতে পারেন। সবকিছু ঠিকঠাক চললে আপনার দিনে চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ টাকা উপার্জন হবে। অর্থাৎ মাসিক উপার্জন গিয়ে পৌঁছাবে ১৫০০-এর কাছাকাছি। এরপর মোরগ মুরগির সংখ্যা বাড়তে শুরু করলে আপনার লাভের অংক পেরিয়ে যেতে পারে ৩০,০০০-এর গণ্ডিও।
২. কোচিং সেন্টার:
আপনি নিজে শিক্ষিত বেকার হলে একটু বুদ্ধি খাটিয়ে এই ব্যবসা দাঁড় করাতে পারলে এর মতো লাভজনক ব্যবসা আর পাওয়া যায় না। সবচেয়ে বড় সুবিধা হল একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর এর প্রসারণ আপনার নিজস্ব মর্জির ওপর নির্ভর করবে। তবে তার জন্য নির্দিষ্ট কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে।
● একটা কথা সবসময় মাথায় রাখতে হবে যে আপনার পড়ানোর জায়গাটি যেন ছাত্রছাত্রীদের পক্ষে সহজে পৌঁছানোর মতো হয়ে থাকে। তাহলে আপনার গ্রহণযোগ্যতা প্রথমেই বেশ খানিকটা বেড়ে যাবে।
● আপনার ছাত্র সংখ্যার ওপর নির্ভর করলেও আপনি প্রথমেই এই ব্যাপারটা নিশ্চিত করে নিতে পারেন যে যেখানে আপনি পড়াচ্ছেন সেখানে যেন আপনার ছাত্রদের সুস্থভাবে বসে পড়াশোনা আয়ত্ত করতে অসুবিধা না হয়। অনেক সময় পরিবেশের গুনে অত্যন্ত স্থূলবুদ্ধি সম্পন্ন ছাত্রও কম সময়ের মধ্যে উন্নতি করে ফেলতে পারে। তাতে আখেরে সুনাম এবং লাভ হবে আপনারই।
● বাচ্চাদের স্কুলে কিভাবে পড়ানো হচ্ছে এবং অভিভাবকরা তাতে সন্তুষ্ট কিনা বা তাদের অন্য কোন দাবি আছে কিনা সেই বিষয়গুলো বোঝার চেষ্টা করুন। স্কুলের সিলেবাসের সঙ্গে যতটা সম্ভব সামঞ্জস্য রেখে চলার চেষ্টা করুন। আর কোচিংয়ের সময় রাখুন এমন একটা টাইমে যখন অভিভাবকদের বাচ্চাদের আপনার কাছে নিয়ে আসতে সুবিধা হবে।
● আপনি যে অঞ্চলে পড়াচ্ছেন সেই অঞ্চলের ভিত্তিতে আপনার বিষয় নির্বাচন করুন। আপনি নিজে সেই বিষয়ে দক্ষ না হলে প্রয়োজনে আপনার অন্য কোনও বন্ধু যিনি এই ব্যাপারে আগ্রহী তার সাহায্য নিন। সেই অঞ্চলে ওই বিশেষ বিষয়ের শিক্ষকের অভাব থাকলে আপনার ব্যবসা রাতারাতি জমে যাবে।
● কোনও বড় স্কুল বা কলেজের বাইরে আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য লিফলেট বিলি করতে পারেন। মাইনের ব্যাপারে অত্যন্ত ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেবেন। প্রথমেই এমন কোন অংকের টাকা দাবি করে বসবেন না, যা দেখেই অভিভাবকরা বা বাচ্চারা পিছিয়ে যায়। কিছুটা পিছিয়ে থেকে শুরু করেও আপনার এই ব্যবসা রাতারাতি আপনার ভাগ্য বদলা দিতে পারে এই ব্যাপারটা মাথায় রাখবেন।
৩. ঘরোয়া খাওয়ারের সম্ভার:
আপনি যদি রান্নায় পারদর্শী হন তাহলে এই ব্যবসা রাতারাতি আপনার লক্ষী লাভ ঘটাতে পারে। তবে খাবারের স্বাদ বা পরিমাণই নয়, আরও কিছু বিষয় আপনাকে এই ক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে।
● বর্তমান ব্যস্ত জীবনের কারণে অনেকেরই সুযোগ হয় না নিজের বাড়িতে রান্না করে খাওয়ার। আপনাকে এমন এলাকা চিহ্নিত করতে হবে যেখানে এমন লোকের সংখ্যা বেশি। কোনও মেস বা বড় অফিসের কাছাকাছি এই ব্যবসা শুরু করলে লাভের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
● খাবারের গুনমানের সঙ্গে কোন আপোষ করবেন না। মনে রাখবেন একজন মানুষের হৃদয় পৌঁছানোর সবচেয়ে ছোট রাস্তাটা হল তার পেটের মধ্যে দিয়ে। আপনার খাবারের স্বাদ যথাযথ হলে আপনার ব্যবসা বাড়তে বাধ্য। খাওয়ার অতিরিক্ত মশলা সমৃদ্ধ হওয়ার প্রয়োজন নেই। বরং আপনার খাবার খেয়ে যাতে মানুষের ঘরের খাবারের কথা মনে পড়ে যায় সেই বিষয়টি মাথায় রাখার চেষ্টা করুন।
● অনেকেই এমন থাকবেন যারা প্রথম কয়েকদিন নিজে এসে খাবার নিয়ে গেলেও পরের দিকে আপনাকে খাবার ডেলিভারি দেওয়ার কথা বলতে থাকবে। সে ক্ষেত্রে আপনাকে মাথায় রাখতে হবে যে আপনার ডেলিভারির সময় যেন কোনওরকম দেরি না হয়।
● সবচেয়ে ভালো হয় আপনি যদি নিজের পরিবারের কয়েকজন বা বন্ধুদের কয়েকজনকে নিয়ে এই ব্যবসা শুরু করেন। একা আপনার পক্ষে এই ব্যবসা সামলানো কিছুটা মুশকিল। কিছুটা সাহায্য পেলে আর একবার গ্রাহকদের জিহ্বাকে সন্তুষ্ট করতে পারলে আপনার সফল হয়ে উঠতে বেশিদিন সময় লাগবে না।