বাংলা হান্ট ডেস্ক: বগটুই কাণ্ডে রীতিমত উত্তাল রাজনৈতিক আবহেই পুরো ঘটনার তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিয়েছে আদালত। পাশাপাশি, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে গ্রেফতার করা হয়েছে ঘটনার মূল অভিযুক্ত আনারুল হোসেনকেও। এমতাবস্থায়, বড়শাল গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ভাদু শেখের হত্যার ঘটনার পর এবার প্রাণনাশের আশঙ্কায় অভিযোগ দায়ের করলেন রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী অখিল গিরির ছেলে তথা কাঁথির তৃণমূল নেতা সুপ্রকাশ গিরি।
এমনিতেই পুরসভা নির্বাচনে সকলেরই নজর ছিল কাঁথির দিকে। যদিও, সেখানে প্রত্যাশা অনুযায়ী সফলতা লাভ করেছে তৃণমূল। কিন্তু, তারপরেই বেড়েছে দ্বন্দ্ব। জানা গিয়েছে যে, পুরসভার চেয়ারম্যান পদ নিয়ে ভীষণভাবে দর কষাকষি চলছে সেখানে। এমনকি, এই আবহেই কাঁথি পুরসভার অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার দিলীপ চৌহানের একটি অডিও ক্লিপ ভাইরাল হওয়ায় নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
ভাইরাল হওয়া অডিও ক্লিপটিতে মূলত রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ওই আধিকারিকের মুখে শোনা গিয়েছে সুপ্রকাশ গিরি এবং পুরসভার কর্মী ও পুর কর্মচারীদের সংগঠনের সম্পাদক খোকন চক্রবর্তীর নাম। আর তারপর থেকেই প্রাণনাশের আশঙ্কায় ভুগছেন সুপ্রকাশ গিরি। এই প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন যে, “অডিয়ো ক্লিপ ভাইরাল হওয়ার পর রীতিমত প্রাণ সংশয়ে আছি। তাই কাঁথি থানার পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছি।”
এদিকে ভাইরাল হওয়া ওই অডিও ক্লিপটিতে শোনা গিয়েছে যে, এক মহিলার সঙ্গে কথা বলছেন দিলীপ চৌহান। সেখানেই শাসকদলের কাদের টিকিট দেওয়া হবে না, সেটা বলে দিচ্ছেন তিনি। আর ওই তালিকাতেই রয়েছে তনুশ্রী চক্রবর্তী, সুরজিৎ নায়ক, শেখ সাবুল এবং সুপ্রকাশ গিরির নাম। শুধু তাই নয়, পুরসভার কর্মী ও পুর কর্মচারীদের সংগঠনের সম্পাদক খোকন চক্রবর্তীকে শেষ করে দেওয়ার কথাও ওই অডিও ক্লিপে বলতে শোনা যায় তাঁকে।
এদিকে, সুপ্রকাশের করা অভিযোগের ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে কাঁথি থানার পুলিশ। এই প্রসঙ্গে কাঁথি মহকুমার পুলিশ আধিকারিক সোমনাথ সাহা জানিয়েছেন যে, কাঁথি পুরসভা অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার দিলীপ চৌহানের অডিও ক্লিপ নিয়ে কাঁথি থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এছাড়াও, তদন্তের স্বার্থে দিলীপ চৌহানকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলেও জানা গিয়েছে।
পাশাপাশি, বগটুই কাণ্ডে এবার চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে। জানা গিয়েছে যে, মৃত্যুর আগে প্রাণ সংশয়ের আশঙ্কা করে চিঠি লিখেছিলেন বড়শাল গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ভাদু শেখ। এমনকি, সেই চিঠির ছবিও প্রকাশ্যে এসেছে। বড়শাল গ্রাম পঞ্চায়েতের লেটারহেডের প্যাডেই এসডিপিও-কে চিঠি লেখেন উপপ্রধান ভাদু শেখ।
সেই চিঠিতে ভাদু লিখেছিলেন যে, কিছুদিন আগেই তাঁর ভাই বাবর শেখ খুন হয়েছিলেন। সম্প্রতি অভিযুক্তরা ছাড়া পেয়ে যাওয়ায় তাঁরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে অনুমান করেন ভাদু। এরপরই তিনি জানিয়েছিলেন, “আমি আশঙ্কা করছি যে আমার ভাইয়ের মতো আমাকেও মেরে ফেলতে পারে ওরা। আমি একজন জন প্রতিনিধি। বড়শালের উপপ্রধান। আমাকে পুলিশি নিরাপত্তা দিয়ে সুবিচার দিন।” এদিকে, এই চিঠি প্রকাশ্যে আসার পরই স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠছে যে, পুলিশি নিরাপত্তা চাওয়া সত্বেও প্রশাসনের তরফে ভাদুকে নিরাপত্তা দেওয়া হল না কেন?