রাজকোষে ক্রমশ পড়ছে টান! এবার বিনামূল্যে রেশন বিলি প্রকল্প বন্ধ করতে চাইছে অর্থ মন্ত্রক

বাংলা হান্ট ডেস্ক: বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন কারণের জেরে ক্রমশ টান পড়ছে কেন্দ্রীয় সরকারের রাজকোষে। শুধু তাই নয়, জ্বালানির দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি সার ও অন্যান্য খাতেও বাড়ানো হয়েছে ভর্তুকির পরিমান। এমতাবস্থায়, খরচের দিকটি মাথায় রেখে এবার “প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা” (Pradhan Mantri Garib Kalyan Anna Yojana)-র মেয়াদ আর না বাড়ানোর পক্ষে সওয়াল করেছে অর্থ মন্ত্রক। এমনিতেই আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। এই আবহে অর্থ মন্ত্রক এখানেই ইতি ঘটাতে চাইছে এই প্রকল্পের। নাহলে বিনামূল্যে বিলি করা খাদ্যশস্যের পরিমানটি যাতে কমিয়ে দেওয়া হয় সেই বিষয়টিও উপস্থাপিত করা হয়েছে।

এই প্রসঙ্গে সূত্র মারফত জানা গিয়েছে যে, বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার আর্থিক বিষয়ক কমিটির বৈঠকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। তবে, বিভিন্ন রাজ্যের সরকার আবার উৎসবের মরশুমে গরিবদের বিনামূল্যে বাড়তি রেশন দেওয়ার লক্ষ্যে কেন্দ্রের কাছে এই প্রকল্পের মেয়াদ আরও তিন মাস অর্থাৎ অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর দাবি জানিয়েছিল।

এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, করোনা মহামারীর সময়ে লকডাউনের আবহে এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ৮০ কোটি মানুষকে প্রতি মাসে মাথাপিছু অতিরিক্ত পাঁচ কিলোগ্রাম চাল বা গম দেওয়া হচ্ছিল। পাশাপাশি, খাদ্য সুরক্ষা আইনে কম দামে খাদ্যশস্যও বিলি করা হয়। এমতাবস্থায়, সরকারি সূত্র অনুযায়ী জানা গিয়েছে, খাদ্য ও গণবণ্টন সচিবের হিসেব অনুযায়ী, এই তিন মাসের জন্য বাড়তি রেশন দিতে গেলে সরকারের অতিরিক্ত ৪৪,৭৬২ কোটি টাকা খরচ হবে। যদিও, গত সোমবার অর্থ মন্ত্রকের ব্যয়বিভাগের তরফে খাদ্য ও গণবণ্টন মন্ত্রককে জানানো হয়েছে যে, বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে খাদ্যশস্যের বাজারদর ধরলে এর ৫০ শতাংশ বেশি খরচ হবে।

অর্থ মন্ত্রক জানিয়েছে যে, চলতি বছর রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের আবহে এমনিতেই বিশ্বজুড়ে খাদ্যের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। তাই, এইভাবে বাড়তি রেশন বিলির প্রকল্প চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে খাদ্যশশস্যের অভাব ঘটতে পারে। এমতাবস্থায়, প্রকল্প যদি চালাতেই হয় সেক্ষেত্রে খাদ্যশস্যের পরিমান কমাতে হবে। তাছাড়া, দীর্ঘ দিন যাবৎ এই প্রকল্প চালিয়ে গেলে এটা একটা স্থায়ী ব্যবস্থা হিসেবে পরিগণিত হবে। যার ফলে তখন এই প্রকল্প বন্ধ করাই কঠিন কাজ হয়ে উঠবে। তাই, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরই এই প্রকল্প বন্ধ করার সুপারিশ জানিয়েছে।

Ration Card Modi

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, চলতি অর্থ বছরের প্রথম ছয় মাসের অর্থাৎ এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরের পরিসংখ্যানের পরিপ্রেক্ষিতে খাদ্য ভর্তুকিতে ইতিমধ্যেই ৮০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এমতাবস্থায়, এই অর্থ বছরের বাকি ছয় মাস অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত এই প্রকল্প চালাতে গেলে আরও ৮৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে। এদিকে, গত দু’বছরে ইতিমধ্যেই প্রায় ২.৬০ লক্ষ কোটি টাকা এই প্রকল্পের উদ্দেশ্যে ব্যয় করা হয়েছে। পাশাপাশি, বর্তমান সময়ে করোনার ভয়াবহতাও কেটে গিয়েছে। শুধু তাই নয়, খাদ্য সুরক্ষায় এমনিতেই একটি পাঁচ সদস্যের পরিবার এখন ২৫ কিলোগ্রাম খাদ্যশস্য ২ থেকে ৩ টাকা কিলোগ্রাম দরে পাচ্ছে। এরপরেও বিনামূল্যে খাদ্যশস্য দেওয়ার এই প্রকল্পের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও এবার প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর