৩৭ বছর আগে ছেড়েছিলেন স্কুল! লুকিয়ে পড়াশোনা করে মাধ্যমিকে ৭৯ শতাংশ নম্বর পেলেন গৃহবধূ

বাংলা হান্ট ডেস্ক: বর্তমান সময়ে দেশের একাধিক রাজ্যে বিভিন্ন পরীক্ষার ফলাফল ঘোষিত হচ্ছে। যেগুলিতে ভালো নম্বর পেয়ে পাশ করছে হাজার হাজার পড়ুয়া। পাশাপাশি, অভিভাবক-অভিভাবিকাদের কাছেও এটি অত্যন্ত গর্বের এক বিষয়। তবে, বর্তমান প্রতিবেদনে আমরা এমন একজনের প্রসঙ্গ উপস্থাপিত করব যিনি পরীক্ষায় সফলতা লাভ করার পর গর্বিত হয়েছেন তাঁর সন্তানেরা। শুধু তাই নয়, মায়ের এই বিরাট সাফল্যকে সবার সাথে ভাগ করে নিয়েছেন ছেলেও!

মূলত, ৫৩ বছর বয়সী এক মহিলা এবার দশম শ্রেণির পরীক্ষায় প্রায় ৭৯ শতাংশ নম্বর নিয়ে পাশ করেছেন। আর তাঁর এই সাফল্যের কথাই LinkedIn-এ একটি পোস্টের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন তাঁর ছেলে। যা দেখে ওই মহিলাকে কুর্ণিশ জানিয়েছেন সকলেই।

৩৭ বছর আগে ছেড়েছিলেন স্কুল:
মাস্টারকার্ডের সিনিয়র সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার প্রসাদ জামভালে লিঙ্কডইন-এ জানিয়েছেন যে, তাঁর মা কল্পনা দশম শ্রেণির পরীক্ষায় (এসএসসি) দারুণ ভাবে পাশ করেছেন। জানা গিয়েছে, ৩৭ বছর আগেই স্কুল ছেড়েছিলেন তিনি। কিন্তু, তাঁর মধ্যে ছিল পড়াশোনার গভীর আগ্রহ। আর তাই সুযোগ পেতেই ধৈর্য্য এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি পেয়েছেন এই সফলতা।

আর্থিক অনটনের কারণে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়:
জানা গিয়েছে যে, কল্পনার বয়স যখন ১৬ বছর ছিল তখন তাঁর বাবা মারা যান। এদিকে, ওই সময় তখন পরিবারের ওপর নেমে আসে প্রবল আর্থিক অনটন। এমতাবস্থায়, কল্পনা পড়াশোনা ছেড়ে তাঁর ভাই-বোনদের লেখাপড়ার জন্য কাজ শুরু করেন। গত বছর কল্পনা কোনো একটি কাজে এক সরকারি স্কুলে গিয়েছিলেন। সেখানেই একজন শিক্ষক তাঁকে জানান যে, একটি সরকারি প্রকল্পের অধীনে তিনি দশম শ্রেণির পরীক্ষাটি দিতে পারবেন। পাশাপাশি, এর জন্য অফলাইন, অনলাইন প্রশিক্ষণ, বই সহ যাবতীয় খরচ বহন করবে সরকার।

গোপনে আবার পড়াশুনা শুরু করেন:
২০২১ সালের ডিসেম্বরে কাউকে না জানিয়ে আবার স্কুলে যাওয়া শুরু করেন কল্পনা। তাঁর ছেলে প্রসাদ বিষয়টি অনেক পরে জানতে পারেন। প্রসাদ কর্মসূত্রে আয়ারল্যান্ডে থাকেন। তিনি লিখেছেন যে, যখনই তিনি রাতে ফোন করে তাঁর মা কোথায় জিজ্ঞেস করতেন, সবাই বলত তিনি সন্ধ্যার সময় বেড়াতে গেছেন। পাশাপাশি, তিনি আরও জানান, একই ছাদের নিচে থেকেও তাঁর ভাই ও বাবা জানতেন না যে, তাঁর মা আবার স্কুল যেতে শুরু করেছেন।

WhatsApp Image 2022 06 22 at 11.20.19 AM

পরীক্ষার প্রস্তুতির পাশাপাশি ছেলের বিয়েও সামলান তিনি:
মূলত, এত বছর পড়াশোনার সাথে যুক্ত না থাকার পরেও কল্পনা খুব সহজেই সমস্ত বিষয় আয়ত্ত করে ফেলেছিলেন। এদিকে, প্রসাদের বিয়ে ছিল ফেব্রুয়ারিতে। অপরদিকে কল্পনার পরীক্ষা ছিল মার্চে। তা সত্ত্বেও তিনি সবদিক ভালোভাবে সামলে নেন। এদিকে, প্রসাদের এই পোস্ট সামনে আসতেই তাঁর মাকে শুভকামনা জানান সবাই।

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর