বাংলাহান্ট ডেস্ক: ব্যবসা শুরু করার জন্য কোনও নির্দিষ্ট বয়সের প্রয়োজন হয় না, বরং প্রয়োজন হয় একটি অভিনব চিন্তার (Success Story)। এমনই এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন মহারাষ্ট্রের জলগাঁও জেলার বাসিন্দা বন্দনা প্রভাকর পাটিল। প্রায় ৪৫ বছর বয়সে তিনি সবজি শুকিয়ে তার থেকে ব্যবসা শুরু করেন, আর আজ তিনি মাসে কয়েক লক্ষ টাকা উপার্জন করছেন। প্রায় দুই দশক ধরে বন্দনা মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে আচার, স্ন্যাক্স ও মশলা তৈরি এবং বিক্রি করতেন। তবে সীমিত চাহিদা এবং একধরনের পণ্যের প্রচণ্ড প্রতিযোগিতা তাঁকে নতুন কিছু ভাবতে বাধ্য করেছিল। বর্তমানে পঞ্চাশোর্ধ্ব এই উদ্যোক্তা একটি সোলার ডিহাইড্রেশন ইউনিট চালাচ্ছেন, যেখানে ফল এবং সবজি শুকিয়ে পাউডার ও ফ্লেক্স তৈরি করা হয়।
বন্দনার সফলতার কাহিনি (Success Story):
২০২১ সালে বন্দনা জলগাঁওয়ের কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের (KVK) সফর করেন এবং সেখানে ফল ও সবজি শুকানোর আধুনিক কৌশল শেখেন। তিনি জানতে পারেন, সোলার ডিহাইড্রেশন প্রক্রিয়ায় খাদ্যের আয়ুষ্কাল অনেক বেড়ে যায়, ওজন হালকা হয় এবং পুষ্টিগুণও অক্ষুণ্ণ থাকে। শুধু তাই নয়, এ প্রযুক্তি কৃষকদেরও সাহায্য করতে পারে যাতে তারা কম দামে ফসল বিক্রি করতে বাধ্য না হন। প্রশিক্ষণের পর তিনি নিজস্ব ব্যবসা শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন। যদিও ব্যাংক তাঁর ব্যবসায়িক ঋণের আবেদন প্রত্যাখ্যান করে, তবুও তিনি দশ লক্ষ টাকার একটি ব্যক্তিগত ঋণ নিয়ে কাজ শুরু করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী ফরমালাইজেশন অফ মাইক্রো ফুড প্রসেসিং এন্টারপ্রাইজেস (PMFME) প্রকল্পের আওতায় তিনি প্রায় ১.৮১ লক্ষ টাকার ভর্তুকি পান। অবশেষে ২০২২ সালের নভেম্বরে তাঁর ইউনিট পুরোপুরি চালু হয় (Success Story)।
আরও পড়ুন:আর প্রয়োজন হবে না সিম? 4G-র পর এবার বড় চমক BSNL-এর, শুরু হতে চলেছে বিশেষ পরিষেবা
এই ইউনিটে পলিকার্বনেট শিট দিয়ে তৈরি টানেলের মতো কাঠামো ব্যবহার করা হয়, যা সূর্যের আলো ধরে গ্রীনহাউসের মতো পরিবেশ তৈরি করে। গরম বাতাস ট্রেতে রাখা সবজিগুলোকে শুকিয়ে দেয় এবং এক্সহস্ট ফ্যান নরম বাতাস বাইরে বের করে দেয়। এই প্রক্রিয়ায় সবজির প্রাকৃতিক রং ও গুণমান বজায় থাকে। বন্দনার ইউনিটে মোরিঙ্গা, কারি পাতা, বিট, টমেটো, পেঁয়াজ ও লেবু শুকিয়ে পাউডার এবং ফ্লেক্স তৈরি করা হয়, যা ব্রেকফাস্ট ফুডস নামের ব্র্যান্ডে বাজারজাত করা হচ্ছে (Success Story)।
২০২৩ সালে ভারতে শুকনো ফল ও সবজির বাজারের আকার ছিল প্রায় ১৭,২০০ কোটি টাকা এবং অনুমান করা হচ্ছে ২০৩৫ সালের মধ্যে তা বেড়ে ৩৭,০০০ কোটিরও বেশি হবে। স্বাস্থ্য সচেতনতা ও সহজ খাবারের চাহিদা এই খাতকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বন্দনার ব্র্যান্ড গায়ত্রী ফুডস ইতিমধ্যেই দেশজুড়ে সরবরাহ করছে এবং বিদেশেও—যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মালদ্বীপে—পণ্য রপ্তানি শুরু হয়েছে (Success Story)।
আরও পড়ুন: ক্রেতাদের মুখে হাসি!২২ ও ২৪ ক্যারেট সোনার দাম কমল পুজো মিটতেই,১ গ্ৰাম হলুদ ধাতুর দর কত?
শুকানোর প্রক্রিয়া অনেক ব্যয়বহুল। উদাহরণস্বরূপ, ২২ কেজি টমেটো থেকে মাত্র ১ কেজি টমেটো পাউডার তৈরি হয়, যার বাজারদর প্রায় ৭০০ টাকা প্রতি কেজি। ১০ কেজি বিট থেকে ২.৫ থেকে ৩ কেজি ফ্লেক্স তৈরি হয়, যার দামও প্রায় ৭০০ টাকা কেজি। চার কেজি মোরিঙ্গা বা কারি পাতা শুকিয়ে কেবলমাত্র ১ কেজি পাউডার পাওয়া যায়। এর পরেও ব্যবসা দ্রুত বাড়ছে। বর্তমানে বন্দনার মাসিক গড় টার্নওভার প্রায় ৩ লক্ষ টাকা। বিভিন্ন প্রদর্শনীতে দুই-তিন দিনের মধ্যে ৮ থেকে ১০ লক্ষ টাকার বিক্রিও হয়ে যায়। তিনি ইতিমধ্যেই ব্যাংকের ঋণ শোধ করেছেন এবং এখন রপ্তানি অর্ডার পূরণ করতে উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর পরিকল্পনা করছেন (Success Story)।