বাংলা হান্ট ডেস্ক: আটা-চাক্কি হল এমনই একটি ব্যবসার মাধ্যম, যা শহর-কিংবা গ্রামের বাসিন্দাদের যথেষ্টভাবে পরিষেবা প্রদান করে। এদিকে, দিন দিন চাহিদা বৃদ্ধির কারণে অনেকেই নতুনভাবে এই ব্যবসা শুরু করছেন। তবে, এই ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে খরচ কম হলেও একটা বড় অঙ্কের বিদ্যুতের বিল প্রতিমাসে গুণতে হয় মালিকদের। যদিও, এই সমস্যা দূর করতেই অভিনব এক উপায় অবলম্বন করেছেন এক যুবক।
উত্তরপ্রদেশের জালালাবাদ জেলার লস্করপুর গ্রামের বাসিন্দা ভি কে মোহন চৌহান এমন একজন ব্যবসায়ী, যিনি চার মাস আগে তাঁর আটা-চাক্কি মিল শুরু করেছিলেন। আজ তিনি তাঁর ব্যবসাকে সম্পূর্ণভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তুলেছেন এবং প্রতি মাসে ভালো রোজগারও হচ্ছে তাঁর। মূলত, মোহন এমন কিছু কাজ শুরু করতে চেয়েছিলেন, যাতে তাঁকে তাঁর গ্রামের বাইরে যেতে না হয়। এই জন্য তিনি ইন্টারনেটে অনেক গবেষণাও করেন। তখনই তিনি আটা-চাক্কির ব্যবসা সম্পর্কে জানতে পারেন।
এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমি একটি স্থানীয় কলেজ থেকে আমার স্নাতক সম্পন্ন করেছি। কিন্তু আমার ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার জন্য, আমি কোথাও চাকরির চেষ্টা না করে নিজের ব্যবসা শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” কারণ, মোহন বুঝতে পেরেছিলেন যে, এটি এমন একটি ব্যবসা যার চাহিদা কখনই ফুরোবে না।
সোলার আটা চাক্কির (Solar Atta Chakki)-র ধারণা কীভাবে এল?
মোহন প্রথম থেকেই চেয়েছিলেন এই ব্যবসায় তিনি বিদ্যুৎ বা অন্য কোনো জ্বালানির ওপর নির্ভর করবেন না। সেই কারণে তিনি সৌরশক্তিকে কাজে লাগিয়েই এই ব্যবসা শুরু করেন। তিনি বলেন, “আমার কাছে বর্তমানে একটি ১৫ হর্স পাওয়ারের মোটর আছে। এই মোটর বিদ্যুতে চালালে প্রতি মাসে অন্তত ৩০ হাজার টাকা বিল আসবে। একই সঙ্গে গ্রামে বিদ্যুৎ বিভ্রাটেরও বড় সমস্যা রয়েছে। এমতাবস্থায়, ডিজেল ব্যবহারে খরচ আরও বেড়ে যায়। কিন্তু, সোলার সিস্টেম গ্রহণ করা একটি দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ।”
এটার দাম কত ছিল?
মোহনের ২২.৫ কিলোওয়াটের সোলার প্যানেল রয়েছে। যেটি বসাতে তাঁর খরচ হয়েছে প্রায় ৭.৫ লক্ষ টাকা। তিনি জানিয়েছেন যে, এই সৌর প্যানেলটি প্রতিদিন কমপক্ষে ১২০ ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে, যা তাঁর ২৪-ইঞ্চির (১৫ হর্সপাওয়ার) আটা-চাক্কি চালানোর জন্য যথেষ্ট।
মোহনের মতে, একটি আটার মিল চালু করতে সাধারণত ২.৫ থেকে ৩ লক্ষ টাকা লাগে এবং বার্ষিক বিদ্যুৎ বিল প্রায় ৩ লক্ষ টাকা আসে। কিন্তু সোলার আটা চাক্কির ব্যবহারে মোহন বছরের পর বছর বিদ্যুতের বিল থেকে স্থায়ীভাবে রেহাই পেয়েছেন এবং এর রক্ষণাবেক্ষণ নিয়েও তাঁকে চিন্তা করতে হবে না।
কি ধরনের সমস্যা আসে?
এখনও পর্যন্ত মোহনের ব্যবসা খুব ভালোভাবে চলছে এবং তিনি ১.২ লক্ষ টাকা আয়ও করেছেন। তবে, শীতের মরশুমে কুয়াশার কারণে কিছুটা বিপাকে পড়তে হয়েছে তাঁকে। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমি আমার আটা চাক্কি পুরোপুরি সোলার প্যানেলে চালাই। অর্থাৎ যতক্ষণ রোদ থাকবে ততক্ষণ আমার কল চলবে। কিন্তু ঠাণ্ডায় কিছু দিন ঘন কুয়াশার কারণে একটু সমস্যায় পড়েছিলাম। কেউ চাইলে এই ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় অন গ্রিড সোলার সিস্টেমের দিকে যেতে পারেন।”
সোলার আটা চাক্কি কিভাবে কাজ করে?
মোহনের ৪৪০ ভোল্টের পাঁচটি সোলার সিস্টেম রয়েছে। সৌর প্যানেলগুলি সূর্যের আলো থেকে ডিসি কারেন্ট তৈরি করে, যা ভিএফডি (ভেরিয়েবল ফ্রিকোয়েন্সি ডিভাইস)-এর মাধ্যমে এসি কারেন্টে রূপান্তরিত হয়। প্যানেলগুলি এমন জায়গায় স্থাপন করা হয় যা সারা দিন সূর্যের আলো পায়। পাশাপাশি, এই প্যানেলগুলি স্ট্যান্ডের উপর দৃঢ়ভাবে স্থির করা হয় এবং তারের সাহায্যে MCB ডিস্ট্রিবিউশন বক্সে নিয়ে আসা হয়। আর এভাবেই সম্পূর্ণ সৌরশক্তির সাহায্যে আটা চাক্কির ব্যবসা চালাচ্ছেন মোহন।