বাংলা হান্ট ডেস্ক: বর্তমান সময়ে দিন যত এগোচ্ছে ততই পরিবর্তিত হচ্ছে মানুষের মানসিকতা। ব্যস্ততার ইঁদুর-দৌড় থেকে শুরু করে নিউক্লিয় ফ্যামিলির আবহে মানুষের চিন্তাধারা এবং পরোপকারী মনোভাব অলক্ষ্যেই ক্রমশ সংকুচিত হয়ে পড়ছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রেই এই বিষয়টি স্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয়। যদিও, কিছুজনের নিঃস্বার্থ মনোভাব এবং তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে করে চলা বিভিন্ন সামাজিক কাজ নতুন করে ভাবতে শেখায় আমাদের। বর্তমান প্রতিবেদনেও আমরা ঠিক সেই রকমই এক যুবকের প্রসঙ্গ উপস্থাপিত করব। যিনি সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে দূরে সরিয়ে রেখে ১৫০ জন শিশুর দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন হাসিমুখে।
সবথেকে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে বাড়ির গয়না পর্যন্ত বিক্রি করে নিজের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন ওই যুবক। মূলত, আজ আমরা আপনাদের কাছে ঝাড়গ্রামের ছোটুদার কথা জানাবো। যাঁর ভালো নাম হল স্নেহাশিস দুর্লভ। তবে, ঝাড়গ্রামের শিলদা গ্রামের বাসিন্দা স্নেহাশিস প্রত্যেকের কাছে ছোটুদা নামেই পরিচিত। পেশাগতভাবে তিনি হলেন একজন বিউটিশিয়ান।
তবে, গ্রামের বিউটি পার্লার থেকে আসা স্বল্প আয়ে যেখানে সংসার চালানোটাই রীতিমতো চ্যালেঞ্জের বিষয় সেখানে স্নেহাশিস ১৫০ জন শিশুর পড়াশোনার যাবতীয় খরচ এবং তাঁদের আনুষঙ্গিক খরচের বিষয়টি সামাল দেন। যদিও, এই কাজে সাহায্য পেতে তিনি ব্যাঙ্ক থেকে লোন নেন। শিশুদের পড়াশোনার পেছনে সেই টাকা খরচ করেন তিনি। কিন্তু সেই লোন সময়মতো শোধ করতে না পারায় তাঁকে অপমানিত হতে হয় ব্যাঙ্ক কর্মীদের কাছে। তারপরেও নিজের কাজে এবং লক্ষ্যের প্রতি অবিচল থেকেছেন সবার প্রিয় ছোটুদা।
আরও পড়ুন: ঠিক যেন প্রাসাদ! মাটির নিচে ১১ কামরার দোতলা বাড়ি বানালেন ফকির, কীর্তি দেখে ‘থ” সবাই
এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, শিশুদের পড়াশুনার খরচ চালানোর পাশাপাশি প্রতিদিন তাদেরকে টিফিনও দেন স্নেহাশিস। একটা সময়ে বাচ্চাদের জন্য পুজোর জামা কিনে দেওয়ার লক্ষ্যে তিনি বাড়িতে থাকা গয়নাও বিক্রি করে দিয়েছিলেন। সবথেকে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, বিপুল সংখ্যক শিশুর দায়িত্ব নেওয়ার পাশাপাশি তিনি মহিলাদের স্বনির্ভর করে তোলার লক্ষ্যেও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।
জানা গিয়েছে যে, তিনি গ্রামের প্রায় ৯০ জন মহিলাকে একদম বিনামূল্যে বিউটিশিয়ানের কোর্স শিখিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই বিউটিশিয়ানের কাজ করে উপার্জন করছেন। এর পাশাপাশি গ্রামের প্রতিটি মানুষের যেকোনো বিপদে সবার আগে ছুটে যেতে দেখা যায় এই যুবককে। সবার উদ্দেশ্যেই তিনি নিজের সাধ্যমতো সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন।
যদিও, স্নেহাশিস তাঁর এই মহতী কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছেন সম্পূর্ণ নিজের উদ্যোগেই। অর্থাৎ, তিনি এখনও কোনো সরকারি সাহায্য কিংবা কোনো ব্যক্তিগত মাধ্যম থেকে আসা সাহায্যও পাননি। এই প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, ফেসবুকে তাঁর কাজের ভিডিওগুলি দেখে অনেকেই তাঁকে সাহায্য করতে চাইলেও শেষ পর্যন্ত আর্থিক দিক থেকে এগিয়ে আসেন না কেউই। যদিও, তিনি তাঁর কাজে প্রত্যক্ষভাবে সাহায্য পান তাঁর তিন বন্ধু এবং পিসিমা ও বোনদের কাছ থেকে। আর তাঁদেরকে সঙ্গে করেই সমস্ত বাধা-বিঘ্নকে উপেক্ষা করে নিজের লক্ষ্যে অবিচল রয়েছেন তিনি।