বাংলা হান্ট ডেস্ক: অত্যন্ত কম বয়সে জীবনে সফল হয়ে অনেকেই নজির গড়েছেন। এমনকি, আমরা প্রায়শই সেইসব সফল মানুষদের কাহিনী বিভিন্ন প্রতিবেদন মারফত জানতে পারি। যেগুলি আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। কিন্তু, বর্তমান প্রতিবেদনে আজ আমরা আপনাদের কাছে এমন এক যুবকের প্রসঙ্গ উপস্থাপিত করব যাঁর সম্পর্কে জেনে রীতিমতো অবাক হয়ে যাবেন প্রত্যেকেই। যিনি মাত্র ২২ বছর বয়সে কোম্পানি (Company) তৈরি করে ফেললেও ২৯ বছর বয়সে ১১,১৯৬ বছরের কারাদণ্ডের (Jail) শাস্তি পান। হ্যাঁ, প্রথমে বিষয়টি জেনে অবাক হয়ে গেলেও এটা কিন্তু একদমই সত্যি।
মূলত, গত কয়েক বছরে, সারা বিশ্বে ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি, এই ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণার একাধিক ঘটনাও প্রকাশ্যে এসেছে। এমতাবস্থায়, তুরস্কের Thodex ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রধান ফারুখ ফাতিহ ওজারকে বিনিয়োগকারীদের কয়েক মিলিয়ন ডলারের প্রতারণার জন্য ১১,১৯৬ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, তাঁর এক ভাই এবং বোনও একই শাস্তি পেয়েছেন।
২৯ বছর বয়সী ওজারের কোম্পানি Thodex ২০২১ সালে হঠাৎ ডুবে যায় এবং ওজার বিনিয়োগকারীদের অর্থ নিয়ে আলবেনিয়ায় পালিয়ে যান। চলতি বছরের জুনে তাঁকে আলবেনিয়া থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে, তাঁকে অর্থ পাচার, জালিয়াতি এবং সংগঠিত অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়। এদিকে, তুরস্কে মৃত্যুদণ্ড নিষিদ্ধ। সেই কারণেই ওজারকে এত বড় সাজা দেওয়া হয়েছে।
যদিও, ওজার আদালতে নিজেকে নির্দোষ হিসেবে দাবি করেছিলেন। পাশাপাশি, তিনি জানান যে, “আমি এতই স্মার্ট যে বিশ্বের যেকোনো কোম্পানি চালাতে পারি। বিষয়টি এটা থেকেই প্রমাণিত হয় যে, আমি ২২ বছর বয়সে কোম্পানি গঠন করেছি।” কিন্তু আদালত তাঁর যুক্তি খারিজ করে তাঁকে কঠোর সাজা দেন। ওজারের পাশাপাশি তাঁর বোন এবং ভাইকেও দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে এবং একই শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: কেন iPhone হয় এত দামি? পেছনে রয়েছে এই বড় কারণ, জানলে হবেন অবাক
জানা গিয়েছে, প্রসিকিউটররা ওজারের জন্য ৪০,৫৬২ বছরের কারাদণ্ড চেয়েছিলেন। তুরস্কে এই ধরণের শাস্তি সাধারণ ব্যাপার। কারণ ২০০৪ সালে ওই দেশটিতে মৃত্যুদণ্ড নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। গত বছর আদনান ওখতার নামে একজন স্বঘোষিত ধর্মগুরুকে ৮,৬৫৮ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়াও, তাঁর দশজন শিষ্যও অনুরূপ শাস্তি পেয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: পর্যটকদের জন্য সুখবর! এবার কলকাতা থেকে ট্রেনে চেপেই পৌঁছে যান সুন্দরবন, বড়সড় পরিকল্পনা রেলের
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, দুই বছর আগে তুরস্কের মুদ্রা লিরার ব্যাপক পতন পরিলক্ষিত হয়। এমতাবস্থায়, ওই পরিস্থিতির হাত থেকে বাঁচতে সেখানকার জনগণ ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহার শুরু করেন। Thodex ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং এটি দেশের বৃহত্তম এক্সচেঞ্জগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল। এই কারণে, ওজার একজন তারকা হয়ে ওঠেন এবং দেশের শাসক সংস্থার সাথে তার ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে। কিন্তু হঠাৎ করে এই এক্সচেঞ্জ ২০২১ সালের এপ্রিলে ডুবে যায়। তারপরেই বিনিয়োগকারীদের অর্থ নিয়ে পলাতক হন ওজার। গত বছর তাঁকে ইন্টারপোলের ওয়ারেন্টে আলবেনিয়া থেকে গ্রেফতার করা হয় এবং দীর্ঘ প্রক্রিয়ার পর তুরস্কে আনা হয়।
বড় কেলেঙ্কারি: তুরস্কের মিডিয়া দাবি করেছিল যে, ওজার ২ বিলিয়ন ডলার নিয়ে উধাও হয়ে যান। কিন্তু আদালতের শুনানির সময়ে এটি প্রকাশিত হয়েছিল যে Thodex-এর বিনিয়োগকারীরা প্রায় ৩৫৬ মিলিয়ন লিরার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। যখন এক্সচেঞ্জটি ডুবে যায় তখন এই পরিমাণ ছিল ৪.৩ কোটি ডলারের সমান। কিন্তু আজ সেটির মূল্য ১.৩ কোটি ডলার। এর কারণ হল, সম্প্রতি তুরস্কে মুদ্রাস্ফীতি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে লিরার দাম অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে।