বাংলাহান্ট ডেস্ক: বিনিয়োগের নামে প্রতারণা— এখন ভারতের (India) সাইবার অপরাধের নতুন রূপ। মোটা রিটার্নের লোভ দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সাইবার অপরাধীরা। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সাইবার উইং বিভাগের একটি রিপোর্টে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য— মাত্র ছয় মাসে দেশের প্রধান শহরগুলিতে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ এই ইনভেস্টমেন্ট স্ক্যামের শিকার হয়েছেন। মোট আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ছুঁয়েছে প্রায় ১,৫০০ কোটি টাকা।
ভারতে (India) স্ক্যামের শিকার হাজার হাজার মানুষ
ইন্ডিয়ান (India) সাইবার ক্রাইম কো-অর্ডিনেশন সেন্টার-এর প্রকাশিত রিপোর্টে জানানো হয়েছে, দেশের বড় শহরগুলিতেই ঘটেছে এই প্রতারণার মূল অংশ। বিশেষত বেঙ্গালুরু, দিল্লি-এনসিআর এবং হায়দরাবাদে ঘটেছে মোট ঘটনার প্রায় ৬৫ শতাংশ। বেঙ্গালুরুর ক্ষেত্রে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি— একা এই শহরেই মোট ক্ষতির প্রায় ২৬.৩৮ শতাংশ ঘটেছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে।
আরও পড়ুন: ওলা-উবের পাবে কড়া টক্কর! শুরু হতে চলেছে ভারতের প্রথম সমবায় ট্যাক্সি পরিষেবা
রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতে (India) এই বিনিয়োগ প্রতারণার মূল টার্গেট হচ্ছেন ৩০ থেকে ৬০ বছর বয়সি মানুষজন। এদের মধ্যেই রয়েছে চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ী শ্রেণি, যাদের নিয়মিত আয় রয়েছে। গত ছয় মাসে ঘটে যাওয়া মোট ঘটনার মধ্যে প্রায় ৭৬ শতাংশ ক্ষেত্রেই প্রতারিত হয়েছেন এই বয়সসীমার মানুষরা। এছাড়াও ৬০ বছরের বেশি বয়সিদের সঙ্গেও প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে, যা মোট ঘটনার প্রায় ৮.৬২ শতাংশ। অর্থাৎ, অবসরপ্রাপ্ত বা অবসরোত্তর পেনশনভোগীরাও এই প্রতারণার ফাঁদে পড়ছেন।
ভারতে (India) প্রতারকরা মূলত ডিজিটাল যোগাযোগ মাধ্যমকেই ব্যবহার করছে প্রতারণার জন্য। রিপোর্টে বলা হয়েছে, টেলিগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপের মতো মেসেজিং অ্যাপগুলির মাধ্যমেই সবচেয়ে বেশি প্রতারণা ঘটছে। মোট ঘটনার প্রায় ২০ শতাংশই ঘটেছে এই দুটি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে। এই দুটি অ্যাপে গ্রুপ তৈরি করা সহজ হওয়ায় সেগুলি ব্যবহার করে দ্রুত বিশ্বাস অর্জন করছে প্রতারকরা। তারা বিনিয়োগের নামে ভুয়ো গ্রুপ তৈরি করে আকর্ষণীয় প্রস্তাব দেয়— যেমন “দিনে ৫ শতাংশ রিটার্ন”, “এক সপ্তাহে দ্বিগুণ আয়” বা “নিরাপদ ক্রিপ্টো ইনভেস্টমেন্ট”। সাধারণ মানুষ প্রথমে অল্প টাকায় লাভ পেয়ে আশ্বস্ত হন, এরপর বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করতেই মুহূর্তে অদৃশ্য হয়ে যায় প্রতারকরা।

অন্যদিকে, পেশাদার যোগাযোগ মাধ্যম যেমন লিঙ্কডইন বা এক্স (পূর্বতন টুইটার)-এর মাধ্যমে প্রতারণার ঘটনা তুলনামূলকভাবে অনেক কম। রিপোর্টে জানানো হয়েছে, এই দুই প্ল্যাটফর্মে ইনভেস্টমেন্ট স্ক্যামের হার মাত্র ০.৩১ শতাংশ। যদিও আরও কিছু অনলাইন মাধ্যমের মাধ্যমেও ভারতে (India) এই প্রতারণা চলছে, যেগুলিকে রিপোর্টে ‘Other Platforms’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
সাইবার বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ইনভেস্টমেন্ট স্ক্যাম এখন ভারতের (India) সবচেয়ে দ্রুতবর্ধনশীল অনলাইন প্রতারণার ধরণ। সাধারণ মানুষকে তারা সতর্ক থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন— বিশেষ করে অচেনা লিংক বা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে বিনিয়োগ সংক্রান্ত বার্তা এলে তা যাচাই না করে কোনও পদক্ষেপ না নেওয়ার জন্য। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ইতিমধ্যেই বিভিন্ন রাজ্যের পুলিশ ও সাইবার সেলকে নির্দেশ দিয়েছে অনলাইন ইনভেস্টমেন্ট স্ক্যাম মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ নিতে এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে। এই মুহূর্তে দেশের সাইবার অপরাধের মানচিত্রে বিনিয়োগ প্রতারণা এক ভয়াবহ আকার নিচ্ছে— যা শুধু আর্থিক ক্ষতিই নয়, বিশ্বাসের ওপরও গভীর আঘাত হানছে।













