বাংলা হান্ট ডেস্কঃ আর কয়েকদিন বাদেই দুর্গাপুজো, বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবকে ঘিরে ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে দিকে দিকে। করোনার কারণে কিছুটা প্রতিবন্ধকতা থাকলেও রথের পর থেকেই কার্যত মন্দিরে মন্দিরে শুরু হয়ে গিয়েছে প্রতিমা তৈরি। এবার দুর্গা পূজার নিয়েও সামনে এলো শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। একই মন্দিরে দুই গোষ্ঠীর দুটি প্রতিমাকে ঘিরে রীতিমতো সরগরম হয়ে উঠেছে নদীয়া জেলার তেহট্টের কানাইনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘোষপাড়া এলাকা।
এর আগে এই মন্দিরে পূজা হত একটিই। কিন্তু এবছর বিধানসভা ভোটের পর কার্যত দুটি গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে তৃণমূলের। আদি এবং নব্য দুই গোষ্ঠীরই বক্তব্য তারাই পুজো আনবে। যার জেরে এখন মন্দিরে শুরু হয়েছে দুটি প্রতিমা গড়ার কাজ। ঘোষপাড়ায় এর আগে তৃণমূল খুব একটা শক্তিশালী ছিল না, মূলত এখানে ঘাঁটি ছিল সিপিআইএম এবং বিজেপির। কিন্তু এলাকার গ্রামবাসীদের বক্তব্য অনুযায়ী ২০১৮ সালে এই গ্রাম থেকে জয়ী হন তৃণমূল নেত্রী প্রতিমা ঘোষ।
তারপর মূলত ছিল তৃণমূল এবং বিজিপির দ্বন্দ্ব। কিন্তু ঘটনা ফের একবার মোড় দেয় একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পরে। এলাকাবাসীর বক্তব্য নির্বাচনে এখান থেকে বেশি ভোট পেয়েছিল বিজেপিই। কিন্তু নির্বাচন মিটতেই এলাকার বিজেপি নেতা বিশ্বনাথ ঘোষ ও তার দলবল তৃণমূলে যোগ দেয়। ফলতো সৃষ্টি হয় প্রতিমা ঘোষ এবং বিশ্বনাথ ঘোষের আলাদা আলাদা গোষ্ঠী। দুটি গোষ্ঠীই চায় গ্রামে পুজো আনতে। একদিকে যেমন প্রতিমা ঘোষ বলছেন, “আমাদের ইচ্ছা সকলে মিলেমিশে একসাথে হবে পুজো। মাকে ভাগ হতে দেওয়া তো কেউ চায় না। কিন্তু ওরা মানতে চাইছে না। ওরা বলছে আমাদের সঙ্গে মিশে পুজো দেবে না।”
প্রতিমার ইঙ্গিত যে বিশ্বনাথ বাবুর গোষ্ঠীর দিকে তা বলাই বাহুল্য। অন্যদিকে বিশ্বনাথ বাবুর বক্তব্য, তার পূর্বপুরুষরাই আগে পুজোর আয়োজন করতেন এই এলাকায়। এবার তিনিও পুজো করবেন। প্রতিমাদেবীরা অশান্তি সৃষ্টি করার জন্যই বাধা দেবার চেষ্টা করছেন। ঘটনা কানে গিয়েছে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের। তেহট্টের বিধায়ক তাপস সাহা ইতিমধ্যেই বৈঠক করেছেন দুই গোষ্ঠীর সঙ্গে। ধর্ম নিয়ে রাজনীতি চলবে না পরিষ্কার জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু দুই গোষ্ঠী তাদের বক্তব্য থেকে পিছিয়ে আসতে নারাজ। এখন তাই সিদ্ধান্ত নেবে প্রশাসন।
গ্রামের মানুষ অবশ্য একটিই পুজো চান পুজো নিয়ে কোনরকম ঝামেলা তাদের পছন্দ নয়। স্থানীয় বাসিন্দা অসিত ঘোষের বক্তব্য, স্থানীয় বিধায়ক তাপস সাহাকে তারা জানিয়েছেন, তাদের একটাই পুজো চাই। যদি দুই গোষ্ঠী থেকে প্রতিনিধি নিয়ে কমিটি গঠিত হয় তাতেও তারা রাজি আছেন। কিন্তু কোনমতেই একই মন্দিরে দুটি পুজো চান না তারা।