বাংলা হান্ট ডেস্কঃ গত শনিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ওয়েবকুপার বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু (Bratya Basu)। অভিযোগ ওঠে, তাঁর গাড়ির নীচে ‘চাপা’ পড়েছে এক ছাত্র। ইন্দ্রানুজ রায় নামের সেই পড়ুয়াকে তড়িঘড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে সত্যিই কি সেদিন ব্রাত্যর গাড়ির নীচে কেউ চাপা পড়েছিল নাকি সবটাই মাও-সিপিএম আঁতাত? এবার এই প্রশ্ন তুলে দিল তৃণমূল (Trinamool Congress)। মঙ্গলবার তৃণমূল ভবনে একটি সাংবাদিক সম্মেলন করে এই নিয়ে মুখ খোলেন দলের যুব নেতা তথা তৃণমূলের আইটি সেলের ইনচার্জ দেবাংশু ভট্টাচার্য (Debangshu Bhattacharya)।
মাও-সিপিএম আঁতাত নিয়ে বিস্ফোরক অভিযোগ দেবাংশুর (Debangshu Bhattacharya)!
তৃণমূলের এই যুব নেতা বলেন, ‘ব্রাত্য বসুর স্করপিওর চাকার নীচে একজন ঢুকে রয়েছেন বলে সমাজমাধ্যমে যে স্ক্রিনশট ভাইরাল হয়েছে, এর ভিডিওটা কোথায়? ইন্দ্রানুজ আড়াআড়িভাবে শুয়ে থাকলে তার ওপর দিয়ে স্করপিওর মতো বড় গাড়ি গেলে, শুধুমাত্র চোখে আঘাত লাগল, এটা কীভাবে সম্ভব? বলা হচ্ছে, ইন্দ্রানুজের চোখের ওপর দিয়ে নাকি গাড়ির চাকা গিয়েছে! চোখকে টায়ারের অংশ স্পর্শ করতে হলে, কপাল, নাক, গালের হাড় তো ভেঙে যাওয়ার কথা! মাথাও থেঁতো হয়ে যাওয়ার কথা! কিন্তু শুধুই চোখে আঘাত! অর্থাৎ ভুয়ো ছবি ছড়িয়ে মিথ্যে সহানুভূতি কুড়ানোর চেষ্টা। সেটা না হলে ভাইরাল স্ক্রিনশটের আসল ভিডিও এসএফআই-সিপিএম সামনে আনুক’।
এরপরেই সিপিএম-মাও আঁতাত নিয়ে সরব হন তৃণমূলের আইটি সেলের ইনচার্জ দেবাংশু (Debangshu Bhattacharya)। ২০২৩ সালের ১২ জুন ফেসবুকের পাতায় ইন্দ্রানুজের শেয়ার করা একটি পোস্ট তুলে তিনি বলেন, আমরা ইন্দ্রানুজকে মাওবাদী বলছি না। বরং যাদবপুরের এই ছাত্র নিজেই নিজেকে মাওবাদী বলেছেন বলে দাবি করেন তৃণমূল নেতা। তিনি বলেন, ‘ওর ফেসবুক পোস্ট দেখুন। নিজেই নিজেকে গর্ব করে বলছে, ও মাওবাদী। নিজেই পোস্টে লিখেছে, মার্কসবাদ, মাওবাদ দীর্ঘজীবী হোক’।
আরও পড়ুনঃ আবাস যোজনা নিয়ে বড় খবর! এবার শুরু হল ‘নজরদারি’! হঠাৎ কী হল?
এই প্রসঙ্গে নৈহাটি উপনির্বাচনে সিপিআইএমএলের সঙ্গে জোট বাঁধার প্রসঙ্গও টেনে আনেন দেবাংশু। কটাক্ষ শানিয়ে বলেন, ‘মাওবাদীদের সঙ্গে এখন যৌথভাবে আন্দোলন করছে। শূন্য হয়ে যাওয়ার পর বামেদের আদর্শগত বিচ্যুতিও হয়ে গেল। সেটা তো যাদবপুর প্রমাণ করে দিল’।
বছর দুয়েক আগে র্যাগিংয়ের জেরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের মৃত্যু হয়েছিল। যার আঁচ ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা রাজ্যে । সেই সময় সমগ্র ক্যাম্পাসে সিসিটিভি বসানোর দাবি ওঠে। এরপর প্রায় দু’বছর কেটে গেলেও ক্যাম্পাসের একাংশে সিসিটিভি নেই। এই নিয়েও এদিন কথা বলেন তৃণমূলের (TMC) যুব নেতা।
দেবাংশু (Debangshu Bhattacharya) বলেন, ‘যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আজ সিসিটিভি থাকলে শনিবারের ঘটনা জলের মতো পরিষ্কার হয়ে যেত যে কারা আক্রমণ করেছিল। সেখানে কাদের বাধায় আজও সিসিটিভি বসল না? যাদবপুরকে কারা মুক্তাঞ্চল বানিয়ে রেখেছে?’ এই বিষয়ে উত্তর দিতে গিয়ে ইন্দ্রানুজের একটি পুরনো ভিডিও তুলে ধরেন তিনি। এর সত্যতা যাচাই করেনি বাংলা হান্ট। সেখানে এসএফআইয়ের বিরুদ্ধে বিষোদগার করতে দেখা যাচ্ছে ওই ছাত্রকে। ইন্দ্রানুজকে বলতে শোনা যায়, ‘২০২০ সালের পর থেকে এসএফআই যাদবপুরে নির্বাচন করতে দেয়নি। এখানে বিরোধীদের কেউ প্রার্থী হতে গেলে এসএফআই লাশ ফেলে দেওয়ার হুমকি দেয়’।
গতকাল সকালে যাদবপুরের (Jadavpur University) আহত পড়ুয়া ইন্দ্রানুজের বাবার সঙ্গে ফোন করে কথা বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য। তিনি দুঃখপ্রকাশ করেছেন বলে জানা যায়। খোদ মন্ত্রী যেখানে এই ঘটনার জন্য মর্মাহত, সেখানে দলের তরফ থেকে কীভাবে মাও-সিপিএম আঁতাতের মতো গুরুতর অভিযোগ আনছেন দেবাংশু? সেই জবাবও দিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুনঃ ‘পালং শাক কেনার মতো অর্ডার দেওয়া হচ্ছে’! হাইকোর্টে বিস্ফোরক রাজ্যের আইনজীবী! শুনেই বিচারপতি বললেন…
তৃণমূল কংগ্রেসের এই যুব নেতা বলেন, ‘এভাবেও যে মাও-সিপিএম আঁতাত করে মিথ্যাচার করতে পারে, সেটা ব্রাত্য বসুও ভাবতে পারেননি। তাছাড়া সেদিন চারিদিকে সবাই ওনার গাড়ি ঘিরে ধরেছিল। ফলে ভেতরে বসে সবটা বোঝা কারোর পক্ষেই সম্ভব নয়। এখন সবটা জলের মতো স্পষ্ট। যাদবপুরের মিথ্যাচারকে আঁকড়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে সিপিএম। ওদের সেই মিথ্যে ফাঁস করে দিলাম’।
দেবাংশু (Debangshu Bhattacharya) এদিন অভিযোগ করেন, শনিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ওয়েবকুপার বাৎসরিক সম্মেলনে ঝামেলা তৈরি করতে আগে থেকেই আঁতাত তৈরি করেছিল মাও-এসএফআই। এই নিয়ে একটি হোয়্যাটসঅ্যাপ চ্যাটও প্রকাশ্যে আনেন তিনি। তৃণমূলের এই তরুণ নেতার প্রশ্ন, ‘দেড় মাস আগে এসএফআইয়ের বিরুদ্ধে যাদবপুরে সন্ত্রাস, খুনের অভিযোগ এনেছিল ইন্দ্রানুজ। তার সেই অভিযোগ কি সত্যি? এসএফআই নেতারা কী বলবেন?’