বাংলাহান্ট ডেস্ক : যাকে বলে একেবারে জিরো থেকে হিরো। রানিগঞ্জের তৃণমূল নেতা অশোক হেলা নিজেকে তেমনই ভাবেন। তাঁর তিন তলা বাড়ি। বাড়ি না বলে প্রাসাদ বলাই উচিত। আয়তন প্রায় সাড়ে ১০ হাজার বর্গফুট! সব তলার মেঝেতেই টাইলস বসানো। পশ্চিম বর্ধমান জেলার এগারা পঞ্চায়েতের সদস্য অশোক হেলার ওই বাড়ি নিয়ে ভালোই গুজব শোনা যায় এলাকায়। তবে অশোক এই কথা জিজ্ঞাসা করলেই তিনি সটান উদাহরণ দিয়ে দেন ধীরুভাই অম্বানির! তিনি বেশ বুক ফুলিয়ে বলেন, ‘এক সময় ধীরুভাই আম্বানির কিছুই ছিল না। পরে উনি দেশের সব চেয়ে বড় শিল্পপতি হয়েছিলেন। ওঁর ক্ষেত্রে তো কোনও প্রশ্ন ওঠেনি। রাজনীতি করি বলে আমার পরিশ্রমের ফল নিয়ে অহেতুক প্রশ্ন তোলা কি ঠিক?’ যদিও এই কথা বলে তিনি নিজেকে আম্বানি ভাবলেন না আাম্বানিকে নিজের মতো ভাবলেন তা অবশ্য বোঝা যায়নি।
কী কী আছে সেই বাড়িতে?
রানিগঞ্জের সাহেবগঞ্জ মোড়ে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে বিরাট অট্টালিকা বানিয়েছেন অশোক। এক তলায় রয়েছে আসবাব ও বৈদ্যুতিন জিনিসপত্রের দোকান। বাড়ির পিছন দিকে গ্যারাজের আয়তনই প্রায় দেড় হাজার বর্গফুট। সেখানে দু’টি গাড়ি থাকে। তবে তৃণমূল নেতার দাবি, এই গাড়ি দু’টি নাকি তাঁর নামে নয়। তবে কার নামে সেকথা অবশ্য বলেননি তিনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, অশোকের বাবা বল্লভপুর কাগজকলে চাকরি করতেন। সঙ্গে ছোটখাটো ঠিকাদারির কাজ করতেন। অশোকরা চার ভাই। অশোক বড়। রানিগঞ্জের টিডিবি কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন তিনি অশোক। তারপর ১৯৯৫ সালে বাবার স্কুটার ও বাড়ির টেলিভিশন বিক্রি করে বৈদ্যুতিন পাখা সরবরাহ এবং আসবাবপত্রের ব্যবসায় নামেন। সঙ্গে গৃহশিক্ষকতাও করতেন। তিনি দাবি করেন ২০১০-এ এমএসএমই দফতরের মাধ্যমে আসবাব কারখানার জন্য, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে মোট আট লক্ষ টাকা ঋণ নেন। তার মধ্যে তিন লক্ষ টাকা দিয়ে বাড়িতে আসবাবপত্রের কারখানা করেন। বাকি পাঁচ লক্ষ টাকায় সাহেবগঞ্জ মোড়ে একটি পাঁচ কাঠা জমি কেনেন।
২০১৩-য় তৃণমূল এগারা পঞ্চায়েতে ক্ষমতায় আসে। উপপ্রধান হন অশোক হেলা। ২০১৮ থেকে ওই পঞ্চায়েতেরই তৃণমূল সদস্য। ২০১৭ থেকে শুরু করেন বাড়ি তৈরির কাজ। কাজ এখনও বাকি রয়েছে। বাড়ির কাছেই রয়েছে অশোকেরই একটি আসবাব তৈরির ওয়ার্কশপ এবং আসবাবপত্রের আর একটি দোকানও। ওয়ার্কশপ চালান অশোকের এক ভাই। দোকান চালান অশোক ও তাঁর দু’ভাই। আর এক ভাই বিশেষ কিছুই করেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ দাবি করেন অশোকের আসবাবপত্রের ব্যবসা মূলত ‘লোক দেখানো’। ২০১৩-র পর থেকেই শুরু তাঁর ‘উন্নতি’। তৃণমূলের দলীয় সূত্রে দাবি, এগারা পঞ্চায়েতের সদস্য হওয়ার পরে একাধিক ব্যবসায় নামেন তিনি। খাসজমি ‘বিক্রি’, বালি-কয়লার ‘অবৈধ’ কারবারের এলাকাভিত্তিক নিয়ন্ত্রণেও নাম জড়িয়ে যায় অশোক হেলার। স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরা বছর তিনেক আগে, দলের কাছে অভিযোগ করেছিলেন বলে জানা যাচ্ছে। তবে তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বিজেপির জেলা সভাপতি দিলীপ দে, অভিযোগ করে, ‘ওই এলাকায় বালি, কয়লা, লোহার অবৈধ কারবারের সঙ্গে তৃণমূল নেতাদের যোগ নতুন কিছুই নয়। ওরা কোটি-কোটি টাকার সম্পত্তি করেছে।’
জানা যাচ্ছে, ওই এলাকায় সাড়ে তিন হাজার বর্গফুটের এক তলা বাড়ি করতে ন্যূনতম ৪৯ লক্ষ টাকা খরচ হওয়ার কথা। সেই হিসাব ধরে তিন তলা ওই বাড়ি তৈরির খরচ অন্তত এক কোটি ৪৭ লক্ষ টাকা। যদিও অশোকের দাবি ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে ২০ লক্ষ টাকা ব্যাঙ্ক-ঋণ নিয়েছিলেন এবং পারিবারিক জমি বিক্রি করেও দশ লক্ষ টাকা পান তিনি। মোট ৩০ লক্ষ টাকায় তৈরি করেছেন এই বাড়ি। তাঁর দাবি, ‘ব্যাঙ্কের ঋণ এখনও পরিশোধ হয়নি। বছর কয়েক আগে, একটি আসবাবপত্রের বিপণির ডিলারশিপ পেয়েছি। প্রতি বছর নিয়মিত আয়কর জমা দিই। কোথাও কোনও অনিয়ম করি না।’