বাংলা হান্ট ডেস্ক : রাস্তার হাল খারাপ হওয়ায় অ্যাম্বুলেন্স আসতে চায়না গ্রামে। অগ্যতা উপায় না দেখে খাটিয়ায় চাপিয়ে রোগিনীকে নিয়ে ১০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়েছিলেন আত্মীয় স্বজনরা। তবুও শেষ রক্ষা আর হয়নি। বছর দুয়েকের শিশু সন্তানকে ঘরে রেখে না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন বছর ১৯ এর গৃহবধূ মামনি রায় (Mamani Ray) । নিরুপায় স্বামী কার্তিক রায় (Kartik Ray) অসহায় হয়ে দেখলেন সবটা।
হৃদয়বিদারক এই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় (Social Media) পোস্ট হতেই ঝড়ের গতিতে ভাইরাল (Viral) হয়ে যায়। তারপর থেকেই নেটমাধ্যম থেকে শুরু করে রাজনৈতিক মহল সমস্ত জায়গাতেই চলছে মালদহের (Maldah) এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার চর্চা। ইতিমধ্যেই স্থানীয় পঞ্চায়েত ও প্রশাসনকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে বিভিন্ন মহল। শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। প্রত্যেকেরই একটা দাবি, রাস্তার হাল বেহাল না হলে বছর দুয়েকের বাচ্চাটিকে হয়ত মা হারা হতে হতনা।
যদিও রাজ্যের গ্রন্থাগার দফতরের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর (Siddiqullah Chowdhury) বক্তব্য কিন্তু অন্য। তাকে এই প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জবাব দেন, ‘আমার বক্তব্য হল একশোজনের মধ্যে একজনের অবস্থা যদি এরকম হয় তাহলে নিরানব্বইটাকে খারাপ বলব কেন? হাতে একটু কষ্ট হচ্ছে তাহলে কি বলব মাথা খারাপ হয়েছে? ওটা আমাদের কাছে লিখলে, বললে আমরা সারিয়ে দেব। রাস্তার জন্য মৃত্যু হয়নি। ওর ভাগ্যে ছিল। তাতেই মৃত্যু হয়েছে। এসব মিডিয়া ভাইদের কাজ। খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে এসব তুলে আনে।’
আরও পড়ুন : রাম মন্দিরকে টেক্কা, দিঘার জগন্নাথ মন্দির নিয়ে বড় ঘোষণা মমতার! কবে খুলবে দরজা?
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মালদহ জেলার মালডাঙ্গা গ্রামের কার্তিক রায়ের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল মামনির। ২ বছরের একটি ছেলেও রয়েছে তাদের। গত কয়েকদিন ধরে জ্বরে ভূগছিলেন তিনি। শুক্রবার হঠাৎ করেই অচেতন হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সে ফোন করেন স্বামী কার্তিক। তবে সেখান থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয় যে, ৫ কিলোমিটার কাদা মাটির রাস্তা পার করে গাড়ি ঢুকবেনা। কিছু টোটো চালকের সাথেও কথা বলেন কার্তিক। তবে তাদেরও একই কথা।
আরও পড়ুন : অন্ধকার নামবে ভর দুপুরে, ফুঁসছে ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’! দক্ষিণবঙ্গের তিন জেলায় বড় সতর্কতা
এরপর আর কোনও উপায় না দেখে খাটিয়ার চার দিকে দড়ি বেঁধে বাঁশে ঝুলিয়ে পালকির মতো করে মামনি রায়কে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা দেন তার স্বামী। এইভাবে ১০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে হাসপাতাল পৌঁছানোর পর মামনিকে মৃত বলে ঘোষণা করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। উত্তর মালদা সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বীণা কীর্তনীয়া সেই ভিডিও পোস্ট করেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। তিনি বলেন, ‘এই বুথে রাস্তার জন্য আগেও আন্দোলন করেছেন এলাকার লোকজন। বিডিও কথা দিয়েছিলেন শীঘ্রই রাস্তা করে দেওয়া হবে। কিন্তু, হয়নি। রাজ্য সরকার পথশ্রী করছেন কিন্তু, যদি সত্যিকারের কাজ হত তাহলে তরুণীর অকালমৃত্যু হত না।’
আরও পড়ুন : দুর্নীতির অঙ্ক ছাড়িয়েছে হাজার কোটি, রয়েছে বিদেশযোগ! জ্যোতিপ্রিয় গ্রেফতার হতেই বেরিয়ে এল বড় তথ্য
শাসকদলের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য। সিদ্দিকুল্লার মন্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এরকম লোকরাই তো এখন তৃণমূলটাকে চালাচ্ছে। এটাই তো তৃণমূলের সংস্কৃতি। চরম অসহিষ্ণু সরকার। তাদের কাছে বাস্তবতা হল বুথে লিড। তাদের কাছে আর কী আশা করা যাতে পারে! এটা মানব সভ্যতার জন্য লজ্জা।’ অন্যদিকে অধীর চৌধুরী বলেন, ‘বাংলার যারা মন্ত্রী তারা যে কতটা সংবেদনশীলতা হারিয়ে ফেলেছে এই মন্ত্রীর মন্তব্য প্রমাণিত হল। মানুষের মৃত্যুকে আজ তার নিজের গাফিলতি বলে মেনে নিতে হবে। অর্থাৎ যার ভাগ্য ভালো সে বাঁচবে। আর যার ভাগ্য ভালো নয় সে বাঁচবে না। ওই মন্ত্রীর বিবেক আছে? সংবেদনশীলতা আছে? প্রশ্ন আমার এখানেই।’