চালিয়েছেন ট্যাক্সি, করেছেন হোটেলে কাজও! আজ ৪৫ হাজার কোটি টাকার মালিক ইনি

বাংলা হান্ট ডেস্ক: প্রত্যেক সফল মানুষের পেছনেই থাকে এক অদম্য লড়াইয়ের কাহিনি। যে লড়াইয়ের ওপর ভর করেই সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে জয়ের মাধ্যমে তাঁরা পৌঁছে যান তাঁদের লক্ষ্যে। বর্তমান প্রতিবেদনেও আমরা ঠিক সেইরকমই এক সফল মানুষের প্রসঙ্গ উপস্থাপিত করব। যিনি আজ প্রত্যেকের কাছেই হয়ে উঠেছেন এক অনুপ্রেরণার উৎস।

আজকের প্রতিবেদনটি এমন একজন মানুষকে নিয়ে যিনি আন্তর্জাতিক খুচরো ব্যবসায় কার্যত বিপ্লব ঘটিয়েছেন এবং বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় নিজেকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। যদিও, এইজন্য তাঁকে অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হয়েছে। এমনকি, মাঝপথে কলেজ ছেড়ে হোটেলের ঘর পরিষ্কার করার পাশাপাশি ট্যাক্সিও চালাতে হয়েছে তাঁকে। আমরা যেই ব্যক্তির প্রসঙ্গ উপস্থাপিত করছি তিনি হলেন মুকেশ মিকি জাগতিয়ানি। তবে, মিকি জাগতিয়ানি হিসেবেই তিনি সমধিক পরিচিত।

তিনি মূলত উপসাগরীয় দেশগুলিতে প্রথমে একটি ছোট রিটেল আউটলেটের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। আজ সেই আউটলেটই ৪৫,০০০ কোটি টাকার টার্নওভার সহ বিশ্বের বৃহত্তম কোম্পানিগুলির মধ্যে অন্যতম একটি হয়ে উঠছে। পাশাপাশি, বর্তমানে মিকিকে খুচরো ব্যবসার রাজাও বলা হয় থাকে।

দুবাই-ভিত্তিক ল্যান্ডমার্ক গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা মিকি কুয়েতে জন্মগ্রহণ করেন এবং লেবাননে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। মূলত তিনি একজন ভারতীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর ঘরে জন্মগ্রহণ করাতে শুরু থেকেই ব্যবসা করতে পছন্দ করতেন মিকি। কিন্তু পারিবারিক চাপের কারণে তিনি উচ্চশিক্ষা শেষ করে লন্ডনের একটি অ্যাকাউন্টিং স্কুলে ভর্তি হন।

পড়াশোনায় আগ্রহ না থাকায় এক বছর পর তিনি কলেজ ছেড়ে দেন এবং নিজের ব্যবসা শুরু করার চেষ্টা করেন। কিন্তু এই সময়ে মিকির কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল অর্থের জোগান পাওয়া। একটা সময়ে তাঁকে হোটেলের ঘর পরিষ্কারের পাশাপাশি লন্ডনের রাস্তায় ট্যাক্সিও চালাতে হয়েছিল।

প্রায় এক বছর এই কাজ করার পর তিনি দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। এদিকে, দেশে ফেরার বছর খানেকের মধ্যেই তাঁর বাবা-মা অসুস্থ হয়ে মারা যান। বাবা-মাকে হারানোর পর, মুকেশ নিজের ছোট পারিবারিক ব্যবসা শুরু করার পরিকল্পনা করেন। ১৯৭৩ সালে, তিনি তাঁর বাবার জমিয়ে রাখা ৬০০০ টাকা দিয়ে বাহরিনে একটি খুচরো ব্যবসা শুরু করেন।

মূলত, তিনি শিশুদের পোশাক, খেলনা সহ ঐধনের একাধিক জিনিসপত্র বিক্রির ব্যবসা শুরু করেন। প্রথম দিকে সব কাজ নিজেই করতেন মুকেশ। ধীরে ধীরে লাভ শুরু করেন তিনি। তারপরেই মিকি তাঁর ব্যবসা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করেন। সেই অনুযায়ী, ওই এলাকায় তিনি ল্যান্ডমার্ক গ্রুপ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাঁর ব্যবসা সম্প্রসারণের কাজ শুরু করেন।

এদিকে, ১৯৯২ সালে উপসাগরীয় দেশগুলিতে যুদ্ধের কারণে, তিনি তাঁর ব্যবসা দুবাইতে স্থানান্তরিত করেন। তারপরেই একে একে তাঁর ব্যবসা দক্ষিণ এশিয়া এবং আরবেও প্রসারিত করেন মিকি। খুচরো, ফ্যাশন, ইলেকট্রনিক্স, আসবাবপত্র এবং হোটেল সহ সমস্ত সেক্টরে প্রবেশ করেন তিনি।

বর্তমানে ল্যান্ডমার্ক গ্রুপের ব্যানারে ভারত সহ ১৫ টি দেশে ৯০০ টিরও বেশি রিটেল আউটলেট রয়েছে। শুধু তাই নয়, এই গ্রুপে কাজ করছেন ২৪ হাজারেরও বেশি মানুষ। আজ মুকেশের মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৬.৬ বিলিয়ন ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৪৪,২৪০ কোটি টাকা)। শুধু তাই নয়, এখন তিনি ভারতের দশম ধনী ব্যক্তি এবং বিশ্বের ২৭১ তম ধনশালী ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত হন।

mickey Jagtiani

মিকির আজ এত বিশাল সাম্রাজ্য থাকলেও তিনি কিন্তু তাঁর অতীত ভুলে যাননি। বরং, গরিব-দুঃখীদের সাহায্য করতে তিনি সর্বদা প্রস্তুত। তিনি ২০০০ সালে LIFE (ল্যান্ডমার্ক ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন অফ এমপাওয়ারমেন্ট) প্রতিষ্ঠা করেন। এই ট্রাস্ট ভারতে এক লক্ষেরও বেশি শিশুর শিক্ষা, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ এবং চিকিৎসার সুবিধা প্রদান করে।


Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর