বাংলা হান্ট ডেস্ক: ইতিমধ্যেই দেশজুড়ে শুরু হয়ে গিয়েছে ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবসের (Independence Day) কাউন্টডাউন। পাশাপাশি, পালিত হচ্ছে, “আজাদী কা অমৃত মহোৎসব” এবং “Har Ghar Tiranga”-র মত কর্মসূচিও। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা হাসিলের পর থেকে, সমগ্র দেশেই এই দিনটি স্বাধীনতা দিবস হিসেবে মহামসমারোহে পালিত হয়। তবে, জানিয়ে রাখি যে, স্বাধীনতার পর থেকেই যে তেরঙ্গা উত্তোলনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এমনটা কিন্তু নয়। বরং, এর বহু বছর আগে থেকেই স্বাধীনতা সংগ্রামীরা তেরঙ্গা উত্তোলনের প্রচলন শুরু করেন। এমতাবস্থায়, বর্তমান প্রতিবেদনে আজ আমরা আপনাদের এমন পাঁচটি স্থানের ব্যাপারে জানাবো যেখানে স্বাধীনতার বহু আগেই তেরঙ্গা উত্তোলন করা হয়েছিল। যদিও সেই সময়ে তেরঙ্গা বর্তমান আকারে ছিল না। চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক সেই পাঁচটি স্থান সম্পর্কে…
এই ধর্মস্তূপ স্বাধীনতার সাক্ষী: রাজস্থানের চুরু জেলার সাথে তেরঙ্গার অনন্য ইতিহাস জড়িত রয়েছে। পাশাপাশি, এখানকার ধর্মস্তূপ স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে, ১৯৩০ সালের ২৬ জানুয়ারি, স্বাধীনতা সংগ্রামী চন্দন মাল বাহাদ তাঁর বন্ধুদের সহযোগিতায় এই ধর্মস্তূপে তেরঙ্গা উত্তোলন করেছিলেন। এদিকে, এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বাহাদ ও তাঁর সঙ্গীদের ব্রিটিশ সরকারের অত্যাচারের সম্মুখীন হতে হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, চুরুর এই ধর্মস্তূপকে লাল ঘন্টাঘরও বলা হয় থাকে। এটি পিলানির বিড়লা পরিবার তৈরি করেছিল। পাশাপাশি, এই ধর্মস্তূপে মহাপুরুষদের বাণীও লেখা রয়েছে।
স্বাধীনতার ৪১ বছর আগেই উত্তোলন করা হয় জাতীয় পতাকা: বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে ১৯০৬ সালের ৭ আগস্ট কলকাতার পার্সিবাগান চকে (বর্তমানে গ্রিন পার্ক) একটি সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সেই সময় সেখানে পতাকাও উত্তোলন করা হয়েছিল। ওই পতাকাটি ছিল লাল, হলুদ ও সবুজ রঙের। সেটির সবচেয়ে উপরে ছিল সবুজ তারপরে হলুদ এবং শেষে লাল রং। এছাড়াও, ওপরের সবুজ অংশে ছিল পদ্ম ফুল, মাঝখানে হিন্দিতে লেখা ছিল বন্দেমাতরম এবং নিচে আঁকা ছিল চাঁদ এবং সূর্য।
১৯৩৭ সালে লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ে পতাকা উত্তোলন করা হয়: উত্তরপ্রদেশের লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৩৭ সালে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। যেখানে উপস্থিত থাকার কথা ছিল গভর্নর জেনারেল স্যার হ্যাটলি এবং তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী গোবিন্দ বল্লভ পন্তের। এমতাবস্থায় সভাপতি জয় নারায়ণ শ্রীবাস্তব তাঁর সহকর্মীদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পতাকা উত্তোলনের পরিকল্পনা করলেও স্বাধীনতা আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত আঁটোসাঁটো। এমতাবস্থায় জয় নারায়ণ ও তাঁর কয়েকজন সঙ্গী একদিন আগে থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা প্রাঙ্গণের বারান্দায় লুকিয়ে থাকেন। অনুষ্ঠানের দিন গভর্নর জেনারেল হ্যাটলি এবং মুখ্যমন্ত্রী পন্তের আগমনের কিছুক্ষণ আগে, তিনি ব্রিটিশ পতাকা নামিয়ে দিয়ে তেরঙ্গা উড়িয়ে দেন।
১৯২২ সালে হরিয়াণার ঝাজ্জারে তেরঙ্গা উত্তোলন করা হয়েছিল: হরিয়াণার ঝাজ্জার জেলার টাউন হলেও এক ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটে। মূলত, ১৯২২ সালের ১৫ জানুয়ারি, স্বাধীনতা সংগ্রামী পন্ডিত শ্রী রাম শর্মা ওই টাউন হলে জনতার সাথে তেরঙ্গা পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। যদিও, সেই সময়ে ওই ঘটনার জন্য স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং তাঁদের সহযোগীদের ব্রিটিশ শাসনের দ্বারা কঠোর শাস্তি দেওয়া হয়েছিল। এমনকি, জনতার ওপর লাঠিচার্জ করে পতাকা নামিয়ে দেওয়া হয়। অপরদিকে, শ্রী রাম শর্মাকে বেত্রাঘাত করা হয় এবং দড়ি দিয়ে জিপের পিছনে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়। যদিও, এই অত্যাচারও তাঁর মনোবলকে ভাঙতে পারেনি।
জবলপুরের টাউন হলে তেরঙ্গা উত্তোলন করা হয়: মধ্যপ্রদেশের জবলপুর জেলায় ১৯২২ সালের অক্টোবর মাসে ভিক্টোরিয়া টাউন হলে প্রথম তেরঙ্গা উত্তোলন করা হয়। ওই সময় দেশে স্বাধীনতার জন্য নিরন্তর আন্দোলন চলছিল। এমতাবস্থায়, অসহযোগ আন্দোলনের সাফল্যের জন্য কংগ্রেসের একটি কমিটি তখন জবলপুরে আসে। সেই সময়ে ভিক্টোরিয়া টাউন হলে আন্দোলনের বিষয়ে সদস্যদের অভিনন্দন পত্র দেওয়াকালীন কয়েকজন নেতাকর্মী টাউন হল ভবনে তেরঙ্গা উত্তোলন করেন। সেই থেকে এই তারিখটি ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ হয়ে আছে।