‘আমিই বলির পাঁঠা!’ দলের সিদ্ধান্তে প্রকাশ্যে ক্ষোভ দাপুটে TMC নেতার, ভোটের আগে তোলপাড় কাণ্ড

Published on:

Published on:

Trinamool Congress Bibhuti Ghosh takes charge as Old Malda Chairman
Follow

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ পুরাতন মালদা পুরসভায় চেয়ারম্যান বদলকে ঘিরে বুধবার রাজনৈতিক মহলে চর্চা তুঙ্গে। নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে শপথ নিলেন তৃণমূলের (Trinamool Congress) বিভূতি ঘোষ। শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন চেয়ারম্যান কার্তিক ঘোষও। তবে সমর্থন জানালেও নিজের অভিমান প্রকাশ করতে ছাড়েননি তিনি। শপথ, মিছিল ও উৎসবের আবহের মধ্যেই পুরসভায় এই নেতৃত্ব বদল ঘিরে নানা প্রতিক্রিয়া সামনে আসে।

কী বললেন কার্তিক ঘোষ?

এদিন চেয়ারম্যানের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ভাইস চেয়ারম্যান সফিকুল ইসলাম। যদিও ভাইস চেয়ারম্যানের ক্ষেত্রে কোনও রদবদল হয়নি। পুরসভায় নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে বিভূতি ঘোষ শপথ নিতেই অসন্তোষ প্রকাশ করেন প্রাক্তন চেয়ারম্যান কার্তিক ঘোষ। তিনি বলেন, বিগত লোকসভা নির্বাচনে জেলা জুড়েই ফল খারাপ হয়েছে। বাদ যায়নি ইংরেজবাজার পুরসভা থেকেও, এমনকি রাজ্যের মন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনের বিধানসভা কেন্দ্রেও ফল আশানুরূপ ছিল না। অথচ সেই পরিস্থিতিতে যেন তাকেই ‘বলির পাঁঠা’ করা হয়েছে। তবে দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ মেনেই আগেই তিনি চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরে গিয়েছিলেন এবং এদিন শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে নতুন চেয়ারম্যানকে সমর্থন জানিয়েছেন বলেও জানান কার্তিক ঘোষ।

পুরাতন মালদা পুরসভায় ১৮ টি আসন তৃণমূলের (Trinamool Congress) দখলে

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরাতন মালদা পুরসভার মোট আসন সংখ্যা ২০টি। এর মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের (Trinamool Congress) দখলে রয়েছে ১৮টি আসন এবং বিজেপির দখলে ২টি। বুধবার দুপুরে চেয়ারম্যানের শপথ বাক্য পাঠ অনুষ্ঠানে প্রত্যেক ওয়ার্ডের কাউন্সিলরই উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন মালদা সদর মহকুমা শাসক সুমন মজুমদারও। নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে শপথ নেন ১২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর বিভূতি ঘোষ। প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কার্তিক ঘোষও এদিন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

শপথের পর আবারও নিজের অভিমানের কথা তুলে ধরেন কার্তিক ঘোষ। তিনি বলেন, প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রেই ফল খারাপ হয়েছে, ইংরেজবাজার পুরসভাতেও ভরাডুবি হয়েছে। লোকসভার ফলের বিচার করেই রাজ্য নেতৃত্ব যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার কোপ একার ঘাড়েই পড়েছে বলে তাঁর দাবি। তাতে কোনও আক্ষেপ নেই বলেও জানান তিনি। দলের জন্য সর্বস্ব উজাড় করে দিয়েছেন বলে দাবি করে কার্তিক ঘোষ বলেন, এই পুরসভা অনেক পিছিয়ে ছিল, রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে সার্বিক উন্নয়নের কাজ হয়েছে। তবুও দলের সিদ্ধান্ত তিনি মেনে নিয়েছেন। তবে চেয়ারম্যান গঠনের পর যেভাবে আতশবাজি ফাটানো ও আবির খেলা হয়েছে, তা দেখে মনে হয়েছে যেন বিজেপিকে হারিয়ে নতুন করে বোর্ড দখল করা হয়েছে। এতে মানুষের কাছে ভুল বার্তা যাবে বলেই মত তাঁর।

এদিন নতুন চেয়ারম্যান বিভূতি ঘোষ দায়িত্ব নেওয়ার পর বিভিন্ন ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলররা (Trinamool Congress) ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। তবে সেই সময় নতুন চেয়ারম্যানের কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন কার্তিক ঘোষ। তিনি সভাকক্ষ ছেড়ে বেরিয়ে যান। একইভাবে বিজেপির দুই কাউন্সিলর প্রথমে উপস্থিত থাকলেও পরে তাঁরা চলে যান। শপথের পর নিজের অফিস রুমে বসেন বিভূতি ঘোষ। পরে পুরসভার বাইরে বেরিয়ে দলীয় কর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। পুরাতন মালদা পুরসভা থেকে থানা পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে মিছিল করেন তিনি।

নতুন দায়িত্ব নেওয়ার পর বিভূতি ঘোষ বলেন, দল যেভাবে তাঁকে যোগ্য মর্যাদা দিয়েছে, তাতে তিনি আরও বেশি করে উন্নয়নমূলক কাজে মন দেবেন। সকলকে একসঙ্গে নিয়ে কাজ করার কথা বলেন তিনি। পুরসভার কোথায় কী ধরনের উন্নয়নের প্রয়োজন রয়েছে, সেগুলি খতিয়ে দেখে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও জানান। তিনি আরও বলেন, এটি তাঁর চতুর্থবার চেয়ারম্যান হওয়া এবং দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ মেনেই আগামী দিনে পুর নাগরিকদের পরিষেবা দিয়ে যাবেন।

Trinamool Congress Bibhuti Ghosh takes charge as Old Malda Chairman

আরও পড়ুনঃ যুবভারতী কাণ্ডে দায় কার? শোকজের জবাবে রাজীব কুমার, ক্রীড়া সচিব, বললেন…

কার্তিক ঘোষ প্রসঙ্গে বিভূতি ঘোষ বলেন, দলে (Trinamool Congress) কোনও ভেদাভেদ বা গোষ্ঠীকোন্দল নেই। কার্তিক ঘোষ এদিন শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে সমর্থন জানিয়েছেন। অন্যদিকে তৃণমূলের জেলা সভাপতি ও বিধায়ক আব্দুর রহিম বক্সী জানান, কোথাও কোনও সমস্যা থাকলে তা দলগতভাবেই আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে নেওয়া হবে। এখানে ভেদাভেদের কোনও প্রশ্ন নেই। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেই পুরাতন মালদা পুরসভায় নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে বিভূতি ঘোষ দায়িত্ব নিয়েছেন। আগামী দিনে মালদার প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্র দখল করাই তৃণমূলের লক্ষ্য বলে জানান তিনি।