বাংলা হান্ট ডেস্কঃ সাঁইথিয়ার শ্রীনিধিপুর এলাকায় গত ১৫ দিন ধরে রটে ছিল সাদা পোশাক পরে কেউ নাকি মাঝরাতে ঘোরাফেরা করে। সেই ভয়ই শনিবার গভীর রাতে বাস্তব হল। বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে তৃণমূল (Trinamool Congress) অঞ্চল সভাপতি পীযূষ ঘোষের খুনের ঘটনায় আরও জোরাল হল রহস্য। ভোর ৪টে নাগাদ রাস্তার ধারে পড়ে থাকতে দেখা যায় তাঁর নিথর দেহ, পাশে তাঁর বাইক। মাথার পিছন থেকে গুলি ঢুকে কপাল ভেদ করে বেরিয়ে যায়। পুলিশের অনুমান, পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ (Point-blank range) থেকেই গুলি করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে আটক করা হয়েছে ২ মহিলা-সহ ৩ জনকে।
পরিচিতের কাজ? সন্দেহ বাড়ছে পুলিশের
পীযূষবাবু বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন রাত ১২টা নাগাদ। তাঁর স্ত্রীর অভিযোগ, “অনেকবার বলেছিলাম রাজনীতি ছেড়ে দিতে। দুই ছেলে নিয়ে ভয়ে আছি।” পুলিশ জানিয়েছে, রাস্তার পাশে বাইক যেভাবে রাখা ছিল, তাতে মনে হচ্ছে কোনও পরিচিতের সঙ্গেই কথা বলছিলেন তিনি। ঠিক সেই সময়েই পিছন থেকে গুলি করা হয়। পরিবারের অভিযোগ, ভোটের সময় চিরকুটে হুমকি দেওয়া হয়েছিল তাঁকে এবং তাঁর ছেলেকে। সেই ভয়ই এবার বাস্তব হয়ে উঠল বলে তাঁদের দাবি।
তদন্তে উঠে এসেছে দু’টি সম্ভাবনা—বালি কারবার (Sand Dispute) সংক্রান্ত বিবাদ, অথবা কোনও মহিলা সংক্রান্ত কারণ (Woman Involvement)। এই দুটি তত্ত্বই খতিয়ে দেখছে পুলিশ। পরিবারের এক সদস্য জানিয়েছেন, “সম্প্রতি বেশ চাপের মধ্যে ছিলেন পীযূষ। প্রায়ই ফোনে কথা বলতেন, কিন্তু অনেক কিছু গোপন রাখতেন।” ঘটনার সময় স্ত্রীর ফোনে বহুবার ফোন করা হলেও কোনও উত্তর মেলেনি বলেও খবর।
গুজব ছিল সত্যের ইঙ্গিত?
সাঁইথিয়ার ওই এলাকাজুড়ে বেশ কিছুদিন ধরেই ঘুরছিল এক গুজব—সাদা পোশাকে এক অচেনা লোক মাঝরাতে ঘোরাফেরা করে (Ghost Rumour)। সেই গুজবের মধ্যেই এবার সত্যিই মাঝরাতে ঘটে গেল খুন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রাত ১০টার পর ওই এলাকায় কেউ বেরোতেই চাইতেন না। ভয়ের বাতাবরণে মোড়া ছিল গোটা অঞ্চল। সেই ভয়ই এবার রক্তাক্ত রূপে ধরা দিল।
আরও পড়ুনঃ লাইনচ্যুত হতেই আগুন! বিস্ফোরণের জেরে জ্বলল তেলবাহী ট্রেন, ভাইরাল ভিডিও
পরিবারের দাবি, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা
খুনের পেছনে তৃণমূলের (Trinamool Congress) অভ্যন্তরীণ কোন্দল (Internal Rivalry) কিংবা সভাপতির পদ থেকে সরানোর ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে মনে করছে পরিবার। পীযূষবাবুর স্ত্রী বলেন, “ও বারবার বলত, অনেকের গা জ্বলে সভাপতির চেয়ার দেখে। আমি চাই, অন্তত আমার ছেলেরা যেন নিরাপদে থাকে।” দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে। তদন্তের দায়িত্বে রয়েছেন জেলার সিনিয়র পুলিশ অফিসাররা।