বাংলা হান্ট ডেস্কঃ রাজ্য রাজনীতিতে ফের বড়সড় চমক। ২৬-এর লোকসভা ভোটের আগেই নতুন দল গঠনের পথে পা বাড়ালেন তৃণমূল (Trinamool Congress) বিধায়ক হুমায়ুন কবীর (Humayun Kabir)। নিজের নির্বাচনী জেলা মুর্শিদাবাদ, মালদহ, দুই দিনাজপুর এবং নদিয়ার সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক ঘিরেই আলাদা মঞ্চ গড়ার ঘোষণা করলেন তিনি। শুধু ঘোষণা নয়, সরাসরি বললেন, ‘‘চাষ বলদ দিয়েই হয়, ছাগল দিয়ে নয়!’’ এর পরেই রাজনীতির ময়দানে শুরু হয়েছে নতুন গুঞ্জন।
হুমায়ুন কবীর স্পষ্ট জানিয়ে দেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তাঁর কোনও রাগ নেই। বরং তাঁর ক্ষোভ মুর্শিদাবাদ জেলা নেতৃত্বের প্রতি। অভিযোগ, বারবার চেষ্টা করেও জেলার কোনও সিদ্ধান্তে তাঁকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। অভিযোগের আঙুল ফিরহাদ হাকিম, খলিলুর রহমান ও অপূর্ব সরকারের দিকে। তাঁর কথায়, “আমি যেখানে ৬২ বছর ধরে আছি, সেই রেজিনগরে আমি গুরুত্ব পাই না। অথচ যারা আমার বহু জুনিয়র, তাদের হাতে সব ক্ষমতা।”
নতুন দল গঠনের প্রসঙ্গে হুমায়ুন (Humayun Kabir) জানিয়েছেন, তাঁর লক্ষ্য শুধু মুর্শিদাবাদ নয়, মালদহ, উত্তর দিনাজপুর এবং নদিয়ার কিছু অংশে ৫০ থেকে ৫২টি আসনে প্রার্থী দেওয়া। তাঁর যুক্তি, এই এলাকাগুলিতে সংখ্যালঘু ভোট বড় ফ্যাক্টর। এই প্রসঙ্গে হুমায়ুন বলেন “বলদের পক্ষে লোক রয়েছে, নাকি ছাগলের পক্ষে লোক রয়েছে, সেটা এবার ওঁদের দেখানো দরকার।”
উল্লেখ্য, এক সময় বিজেপির টিকিটে লড়েও মুর্শিদাবাদ থেকে আড়াই লক্ষ ভোট পেয়েছিলেন হুমায়ুন। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই রাজ্যের সংখ্যালঘু এলাকায় একটি ‘ব্যালান্সিং ফোর্স’ তৈরির চেষ্টা করছেন বলে মত রাজনৈতিক মহলের।
বিজেপির অর্থে দল গঠনের অভিযোগ! হুমায়ুনকে নিশানা করে কটাক্ষ তৃণমূলের (Trinamool Congress)
তবে তাঁর এই রাজনৈতিক পদক্ষেপ ঘিরে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি তৃণমূল (Trinamool Congress)। এদিন জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, “পিপীলিকার ডানা গজায় মরিবার তরে। অনেকেই মনে করেন ওঁরা কিছু করতে পারবেন। বিজেপি যদি পেছন থেকে টাকা দেয়, তবে দল করতেই পারেন। কিন্তু ফল মিলবে না।” বিজেপির নেতা জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়েরও দাবি, “হুমায়ুনের ‘লাথি’ কিছুটা বেশি হয়ে গিয়েছে। এবার সবাই আলাদা দল করবে, সিদ্দিকুল্লা থেকে শুরু করে ববি হাকিমও!”
এদিকে কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, “হুমায়ুন সংখ্যালঘু মানেই সংখ্যালঘুরা তাঁকে ভোট দেবেন, এই ধারণা ভুল। নেত্রীর কাছে হয়তো মনে হচ্ছে, হুমায়ুন এখন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই তাঁকে উপেক্ষা করা হচ্ছে।” কংগ্রেস থেকে সমর্থন পেতে পারেন কি না, জানতে চাইলে অধীর বলেন, “মুর্শিদাবাদের দাগা নেতাদের অনেকেই আমার হাত ধরে উঠে এসেছেন, কিন্তু এখনকার পরিস্থিতি আলাদা।”
একদিকে বিজেপি অর্থ সাহায্য করছে এমন অভিযোগ, অন্যদিকে কংগ্রেসের সন্দেহ, তৃণমূলের উপেক্ষা এবং নিজের জেলার অসন্তোষ, সব মিলিয়ে হুমায়ুন কবীরের নতুন রাজনৈতিক অভিযান ঘিরে ঘনাচ্ছে রাজনীতির মেঘ। ১৫ অগস্টের পর নতুন দলের ঘোষণা স্পষ্ট করবে, সংখ্যালঘু ভোটে কতটা ফাটল ধরছে শাসক শিবিরে।