বাংলাহান্ট ডেস্কঃ লকডাউনের (lockdown) মধ্যে দুস্থ মানুষদের মধ্যে বিলি করার জন্য বরাদ্দ চাল চুরি করে বিক্রি করে দেওয়ার মত ঘৃন্য অভিযোগ উঠল তৃণমূল (TMC) দলের চার নেতার বিরুদ্ধে। আর সেই অভিযোগে তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে ঢুকে অভিযুক্ত শাসক দলের দুই নেতাদেরকে ধরে গণধোলাই দিল সাধারন মানুষ। শনিবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার শাসন থানার মজলিসপুর (Majlispur)। বাজারের ২৩ নম্বর বাসস্ট্যান্ড এলাকায়। ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, করোনা আবহে দেশ তথা রাজ্য জুড়ে লকডাউন চলছে। ফলে মানুষ কর্মহীন থাকায় অর্থহীন হয়ে পড়েছে। মানুষের ভাড়াড়ে টান পরেছে।তাদের কথা মাথায় রেখে দুস্থ মানুষদের সাহায্যার্থে ত্রাণের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা তুলে দুস্থ গ্রামবাসীদের সাথে প্রতারণার অভিযোগ উঠল উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বারাসাত ২ নম্বর ব্লকের শাসন গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার চার তৃনমূল নেতার বিরুদ্ধে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, গ্রাম কমিটির সভাপতি আবদুল আজিজ ধুকড়ে-সহ সভাপতি ফকির আহমেদ মাষ্টার, সম্পাদক কেনারাম মল্লিক, ও কোষাধ্যক্ষ জুম্মান আলি বৈদ্য এই চার জন দুস্থ মানুষদের জন্য বরাদ্দ চাল চুরি করে বিক্রি করেছেন। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, অঞ্চল কমিটির সভাপতি সৈদুল ইসলামের নেতৃত্বে আঞ্চলের এর তরফ থেকে ২২ জন ভাটা মালিকের প্রত্যেকের থেকে প্রায় ১০ হাজার টাকা করে দান নেওয়া হয়েছিল। এছাড়াও ভেরি মালিক ও কারখানার মালিকের থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা তোলা হয় গরিব মানুষদেরকে চাল-ডাল কিনে দেবার জন্য।
কিন্তু সেই টাকায় কেনা খাদ্যসামগ্রী অঞ্চল স্তর থেকে গ্রাম কমিটিতে পাঠানো হয়। অভিযোগ গত ১৬ এপ্রিল সেই খাদ্যসামগ্রী কিছু দুস্থ মানুষদের দেওয়া হলেও প্রায় ৫০ হাজার টাকার চাল ওই চারজন আত্মসাৎ করে। সেই ক্ষোভেরই প্রকাশ হয় শনিবার সকাল থেকে। দফায় দফায় বিক্ষোভ শুরু হয় বেশ কয়েকটি অঞ্চলে। পরে মজলিসপুর বাজারের পার্টি অফিস ঘেরাও এর অভিযোগ ওঠে। সেখানেই ওই চার অভিযুক্তকে গনধোলাই দেয় এলাকার কয়েকশো মানুষ। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় শাসন থানার পুলিশ। এরপর পুলিশকে ঘিরে গ্রামবাসীরা বিক্ষোভ দেখায় উত্তেজিত জনতা। উত্তেজিত জনতার হাত থেকে ওই চারজনকে উদ্ধার করে নিয়ে যায় পুলিশ। এলাকার মানুষের দাবি, অভিযুক্তরা তাদের অভিযোগ স্বীকার করেছে। এবং তারা ওই টাকার চাল কিনে দুস্থ মানুষদের মধ্যে বন্টন করবেন। যদিও এই চার জনই তাদের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগই অস্বীকার করেছেন।
গ্রামের বাসিন্দা মহম্মদ নাজিমুদ্দিন বলেন, “এখানে ইটভাটার মালিকরা প্রত্যেকে সাত থেকে দশ হাজার টাকা করে অনুদান দিয়েছিল। সেই টাকা অঞ্চল কমিটির কাছে জমা হয়। সেই টাকা অঞ্চল কমিটি নিয়ে গ্রাম কমিটির সভাপতি, সহ-সভাপতি, সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষকে দেন। ওরা এই টাকা দিয়ে কেনা ৫০ হাজার টাকার চাল চুরি করে অন্য জায়গায় বিক্রি করে দিয়েছে।
সেকথা জনগণ জানতে পারে। তারপরে দু’হাজার লোক তাদের ঘেরাও করে মারধর করে। তখন দু’গাড়ি পুলিশ এসে গ্রামবাসীদের দিকে তেড়ে যায়। কেনারাম মল্লিক (Kenaram Mallick) নামে গ্রাম কমিটির সম্পাদককে আহত অবস্থায় পুলিশ উদ্ধার করেছে। সভাপতি আব্দুল আজিজ হুগড়ে, সহ-সভাপতি ফকির আহমেদ মাস্টার, সম্পাদক কেনারাম মল্লিক ও কোষাধ্যক্ষ জুম্মান আলি বৈদ্যকেও পুলিশ উদ্ধার করে প্রত্যেকের বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছে।” বারাসত ২ নম্বর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি শম্ভু ঘোষ বলেন, “গ্রামবাসীদের মুখে মজলিশপুর অঞ্চলের স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেসের কয়েক জন নেতার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আমরা পেয়েছি। পুলিশ প্রশাসনকে আইনানুগ যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করেছি।”