বাংলাহান্ট ডেস্ক:- ভারত-আমেরিকা (India-America) সম্পর্কের অবনতির পিছনে রয়েছে ট্রাম্পের ‘ষড়যন্ত্র’! পাকিস্তানের (Pakistan) সঙ্গে ব্যবসার করতে গিয়ে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করে ফেলছেন ট্রাম্প এমনই গুরুতর অভিযোগ আনলেন আমেরিকার প্রাক্তন নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান। তাঁর এই কথার সুরে তাল দিয়েছেন আরও এক প্রাক্তন মার্কিন আধিকারিক।
ভারত-আমেরিকা (India-America) সম্পর্ক প্রভাবিত:
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের (Donald Trump) বিরুদ্ধে ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ককে ব্যক্তিগত স্বার্থে বলি দেওয়ার অভিযোগে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়েছে আমেরিকার অন্দরে। প্রাক্তন মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান অভিযোগ করেছেন, পাকিস্তানে ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবসায় ট্রাম্প পরিবারের প্রায় ৬০ শতাংশ অংশীদারিত্ব রয়েছে। সেই ব্যবসার উন্নতির স্বার্থে পাক সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে খুশি করতে গিয়ে ট্রাম্প ইচ্ছাকৃতভাবে ভারতের (India-America) সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করছেন। তাঁর দাবি, “কয়েক দশক ধরে বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করতে কাজ করেছে আমেরিকা। প্রযুক্তি, প্রতিভা এবং অর্থনৈতিক উন্নতির পথে ভারত ছিল আমাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সঙ্গী। চিনকে মোকাবিলা করতে ভারতের সহযোগিতা অপরিহার্য ছিল। অথচ ট্রাম্পের ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক স্বার্থে সেই সবকিছুই ধ্বংস হচ্ছে।”
আরও পড়ুন:- অবশেষে লঞ্চ হল “Made In India” সেমিকন্ডাকটর চিপ! “এটাই ডিজিটাল ডায়মন্ড”, জানালেন প্রধানমন্ত্রী
সুলিভান আরও বলেন, আমেরিকার মূল কূটনৈতিক স্বার্থের অন্যতম ভিত্তি ছিল ভারত-মার্কিন (India-America) সম্পর্ক। কিন্তু পাকিস্তানে ট্রাম্প পরিবারের ক্রিপ্টো ব্যবসাকে এগিয়ে নিতে গিয়ে এখন সেই সম্পর্ককে বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। তাঁর মতে, এর মারাত্মক প্রভাব পড়বে শুধুমাত্র ভারত নয়, আমেরিকার অন্যান্য মিত্রদেশগুলির সঙ্গেও সম্পর্কের ক্ষেত্রে। কারণ ভারত-মার্কিন সম্পর্কের ভাঙন বিশ্ব কূটনীতিতে এক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করবে।
সুলিভানের একই সুরে সুর চড়িয়ে ট্রাম্পকে তোপ দেগেছেন আর এক প্রাক্তন মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন। তাঁর অভিযোগ, ট্রাম্পের শুল্কনীতি আমেরিকার কয়েক দশকের কৌশলগত প্রচেষ্টায় জল ঢেলে দিয়েছে। বোল্টনের বক্তব্য, “ভারতকে রাশিয়া থেকে দূরে রাখতে আমেরিকা (India-America) বছরের পর বছর বিপুল অর্থ খরচ করেছে। কিন্তু ট্রাম্পের ভুল সিদ্ধান্তে সেই সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। বরং তাঁর নীতি ভারতকে রাশিয়া ও চিনের আরও কাছাকাছি ঠেলে দিয়েছে।” তিনি এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, ভারতের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়ে ট্রাম্প চিনকে ভূ-রাজনৈতিক সুবিধা করে দিয়েছেন এবং প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি নিজের অনুকূলে আনার পথ খুলে দিয়েছেন।
আরও পড়ুন:-ইসলামকে অসম্মানের অভিযোগ ‘অতিথি’ জাভেদের বিরুদ্ধে, মৌলবাদীদের চাপেই অনুষ্ঠান বাতিল রাজ্যের?
প্রসঙ্গত, ট্রাম্প প্রথমে ভারতীয় পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপান। পরবর্তীতে ভারত রাশিয়া থেকে তেল আমদানি অব্যাহত রাখায় অতিরিক্ত আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন। একইসঙ্গে ওয়াশিংটন থেকে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছিল, যদি ভারত রাশিয়ার সঙ্গে তেল ব্যবসা চালিয়ে যায় তবে দ্বিতীয় দফার নিষেধাজ্ঞাও জারি হতে পারে। তবে আমেরিকার এই চাপকে উপেক্ষা করে ভারত (India-America) বিকল্প পথ বেছে নিয়েছে। দেশের আর্থিক উন্নতির স্বার্থে রুশ তেলের আমদানিতে জোর দেওয়া হয়েছে এবং পাশাপাশি চিনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার দিকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের একসঙ্গে তোলা ছবি আমেরিকার কূটনৈতিক মহলে অস্বস্তি বাড়িয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনার পর থেকেই আমেরিকায় (India-America) ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ক্ষোভ চরমে পৌঁছেছে। জ্যাক সুলিভান ও জন বোল্টনের মতো প্রাক্তন উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের সরব হওয়া প্রমাণ করছে, ট্রাম্পের নীতি নিয়ে মার্কিন অন্দরেই গভীর অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক লাভের জন্য ট্রাম্প এমন এক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন যা আমেরিকার কৌশলগত স্বার্থ এবং ভারত-মার্কিন সম্পর্ককে গভীর সংকটে ফেলে দিচ্ছে।