বাংলাহান্ট ডেস্ক:- ফের একবার ভারতের (India) বিরুদ্ধে এক উদ্ভট মন্তব্য় করে বসলেন ট্রাম্পের বাণিজ্য় পরামর্শদাতা। রাশিয়ান তেল কেনা নিয়ে শুরু থেকেই সরব মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প( Donald Trump) এবং তাঁর প্রশাসন। সেই সুর আরও তীব্র করলেন ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও বাণিজ্য পরামর্শদাতা পিটার নাভারো (Peter Navarro)। গত সপ্তাহেই রুশ তেল প্রসঙ্গে ভারতকে কাঠগড়ায় তুলেছিলেন তিনি। এ বার আরও কড়া সুরে আক্রমণ শানালেন নাভারো। তাঁর দাবি, ভারত আসলে রাশিয়ার হয়ে কাজ করছে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে লাভ তুলছে। নাভারোর কথায়, “ভারত ক্রেমলিনের জন্য লন্ড্রি ছাড়া আর কিছুই নয়… ভারতীয় জনগণের খরচে ব্রাহ্মণদের মুনাফা অর্জন করতে সাহায্য করা হচ্ছে। আমাদের এটা বন্ধ করতে হবে।” তবে হঠাৎ কেন তিনি ব্রাহ্মণদের প্রসঙ্গ টানলেন, তা স্পষ্ট করেননি তিনি। এই মন্তব্যকে ঘিরেই ইতিমধ্যেই নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে।
ভারতকে নিয়ে আজব তথ্য নাভারোর (India)
নাভারোর অভিযোগ, রাশিয়া থেকে কম দামে অপরিশোধিত তেল কিনে তা ভারতে (India) পরিশোধিত হচ্ছে এবং পরে ইউরোপের বাজারে বিক্রি হচ্ছে। তাঁর দাবি, এ ভাবে ভারত (India) আসলে রাশিয়ার যুদ্ধযন্ত্রকে বাঁচাচ্ছে। একইসঙ্গে মস্কো ও বেজিংয়ের সঙ্গে নয়াদিল্লির ঘনিষ্ঠতা বিশ্বব্যাপী স্থিতিশীলতার জন্য ক্ষতিকর বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করলেও তাতে আক্রমণাত্মক সুর ঢাকেননি নাভারো। তাঁর কথায়, “মোদী একজন বড় নেতা। কিন্তু বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের নেতৃত্বে থেকেও কেন তিনি ভ্লাদিমির পুতিন ও শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব করছেন, তা আমি বুঝতে পারছি না।”
আরও পড়ুন:- “কেউ সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করলে আমরা মেনে নেব?” SCO সম্মেলনে শরিফের সামনেই গর্জে উঠলেন মোদী
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারতের অবস্থান নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। নাভারো সেই প্রশ্নই নতুন করে উস্কে দিয়েছেন। তাঁর মতে, ২০২২ সালে যখন রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালায়, তখন ভারত নিজেদের প্রয়োজনের মাত্র ১ শতাংশ অপরিশোধিত তেল কিনত রাশিয়া থেকে। কিন্তু এখন সেই পরিমাণ বেড়ে ৩৫ শতাংশে পৌঁছেছে। নাভারোর অভিযোগ, ভারতের (India) আসলে রাশিয়ার তেলের প্রয়োজন নেই। তা সত্ত্বেও দেশটি তেল কিনছে শুধুমাত্র মুনাফা অর্জনের জন্য এবং ক্রেমলিনের যুদ্ধযন্ত্রকে অর্থ জোগাচ্ছে।
এখানেই থামেননি তিনি। নাভারোর বক্তব্য, শুল্ক বাবদ ভারত (India) বিপুল অর্থ সংগ্রহ করছে। সেই অর্থ দিয়েই রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা হচ্ছে। আর ভারতের এই আর্থিক যোগান দিয়েই ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অস্ত্র বানাচ্ছে রাশিয়া। তাঁর এই মন্তব্য ঘিরে ভারত-মার্কিন সম্পর্কের সমীকরণে নতুন চাপ তৈরি হয়েছে। আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে, ট্রাম্প প্রশাসনের এই লাগাতার চাপ ভারত কতটা সামলাতে পারবে।
আরও পড়ুন:- রাজস্থান থেকে “বিতাড়িত” হয়েছেন দ্রাবিড়? এবি ডি ভিলিয়ার্সের প্রতিক্রিয়ায় শুরু জোর জল্পনা
ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক মহলের মতে, নাভারোর এই মন্তব্য একদিকে যেমন ভারতের উপর বাড়তি চাপ তৈরি করছে, তেমনই মার্কিন প্রশাসনের ভিতরেও বিভাজনকে সামনে আনছে। কারণ, আমেরিকার একাংশ মনে করে, ভারতকে (India) পাশে রাখা আন্তর্জাতিক কূটনীতির জন্য জরুরি। অপরদিকে, ট্রাম্প-ঘনিষ্ঠদের একাংশ চাইছে নয়াদিল্লিকে চাপে রেখে মস্কো থেকে দূরে টেনে আনতে। এই পরিস্থিতিতে নাভারোর ‘জাতি বিদ্বেষী’ মন্তব্য কেবল কূটনৈতিক টানাপড়েনই বাড়াচ্ছে না, বরং দুই দেশের সম্পর্ককেও অস্বস্তিকর অবস্থায় নিয়ে যাচ্ছে।