বাংলা হান্ট ডেস্ক: প্রতিটি নারীই হলেন মাতৃত্বের মূর্ত প্রতীক। তাই যে কোনো শিশুর কান্নাই বিগলিত করে তাঁদের মন। এমনকি, যে কোনো পেশার কাজে তাঁরা যুক্ত থাকলেও মাতৃত্বের জয়গানও কিন্তু সূচিত হয় তাঁদের কর্মকান্ডে। ঠিক সেইরকমই এক ঘটনার প্রসঙ্গ এবার সামনে এল। আর যা শুনে আবেগাপ্লুত হয়েছেন সকলেই।
মূলত, রাজস্থানের কোটা বিভাগের বারান জেলায় পুলিশকে সম্পূর্ণ নতুন একটি ভূমিকায় দেখা গিয়েছে। সেখানকার সারথল থানা এলাকায় আড়াই মাসের একটি নিষ্পাপ আদিবাসী শিশু প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় কার্যত কাতর হয়ে পড়ে। এদিকে, তাকে দেখে চিন্তিত হয়ে পড়েন থানার প্রতিটি পুলিশকর্মী। ঠিক তখনই ওই শিশুকন্যার করুণ অবস্থা দেখে তাকে স্তন্যপান করানোর সিদ্ধান্ত নেন দুই মহিলা কনস্টেবল।
আর এভাবেই শিশুটির জীবনরক্ষা করে মাতৃত্বের অনন্য নজির গড়লেন তাঁরা। মূলত, ওই কন্যাটিকে তাঁর নেশাগ্রস্ত বাবার কাছ থেকে জঙ্গলে পাওয়া গিয়েছিল। যদিও, এখন শিশুটিকে তার মায়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এদিকে, শিশুটির জীবন রক্ষাকারী ওই মহিলা কনস্টেবলের ভূয়সী প্রশংসা করছেন সকলেই।
এই প্রসঙ্গে পুলিশ অফিসার মহাবীর কিরাদ জানিয়েছেন যে, আড়াই মাসের নিষ্পাপ শিশুটির জন্য থানায় কর্তব্যরত দুই মহিলা কনস্টেবলই মা যশোদার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। তাঁরা পালা করে ওই শিশুকন্যাটিকে দুধ খাইয়ে জীবন বাঁচিয়েছেন। জানা গিয়েছে যে, গত বুধবার বিকেলে থানা সংলগ্ন এলাকার বাবরের পাহাড়ি বনাঞ্চল দিয়ে হেঁটে গিয়েছিলেন ৩০ বছর বয়সী এক মদ্যপ যুবক। যদিও, তাঁর সাথে একটি শিশু কন্যাও ছিল।
এদিকে, এই খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। সেখানে জঙ্গলে এক ব্যক্তিকে ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে থাকা অবস্থায় পাওয়া যায়। তিনি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ছিলেন। পাশাপাশি, তাঁর কাছে আড়াই মাসের এক কন্যা সন্তানকেও অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়া যায়।
দু’জন মহিলা কনস্টেবল শিশুটিকে স্তন্যপান করান:
এরপরেই শিশুটিকে ওই অবস্থায় দেখে থানায় কর্তব্যরত দুই মহিলা কনস্টেবল মুক্লেশ ও পূজা স্তন্যপান করিয়ে শিশুটির খিদে মেটান। জানা গিয়েছে, মুক্লেশ ও পূজারও ছোট সন্তান রয়েছে। এদিকে, ওই ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায় যে, তিনি ওই শিশুটির বাবা। তাঁর নাম রাধেশ্যাম কাঠোড়ি এবং তিনি ছিপাবারড থানা এলাকার সালাপুরার বাসিন্দা।
মা না আসা পর্যন্ত ওই মহিলা কনস্টেবলদের কাছেই থাকে শিশুটি:
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভোর ৪ টা ৫ মিনিটের দিকে ঝালাওয়ার জেলার কামখেদা এলাকার বান্ধা গ্রামের শ্বশুরবাড়ি থেকে কন্যা সন্তানটিকে নিয়ে পায়ে হেঁটে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ১৫ কিলোমিটার দূরে সালাপুরা যাচ্ছিলেন রাধেশ্যাম। এমতাবস্থায়, পুলিশ শিশুটির মাকে খবর দেয়। ততক্ষণ পর্যন্ত কনস্টেবল মুক্লেশ এবং পূজা শিশুটির সম্পূর্ণ যত্ন নেন।
নিষ্পাপ কন্যা সন্তানটির ঠোঁট শুকিয়ে গিয়েছিল:
এই প্রসঙ্গে ওই দুই মহিলা কনস্টেবল জানান, শিশুটির অবস্থা দেখে বোঝা যাচ্ছিল যে সে কয়েক ঘণ্টা ধরে ক্ষুধার্ত ছিল। তার ঠোঁটও শুকিয়ে গিয়েছিল। তাই, প্রথমে পূজা এবং পরে মুক্লেশ স্তন্যপান করিয়ে খিদে মেটান শিশুটির। পাশাপাশি, তাঁরা আরও জানিয়েছেন, “এটা ঈশ্বরের কৃপা যে, এক অচেনা আদিবাসী শিশু আমাদের দুধ পান করেছে।”