আয় ১০০ টাকারও কম, সংসার বাঁচাতে গরমের ছুটিতে সবুজ সাথী সাইকেলে করে আইসক্রিম বিক্রি দেব-জাহিরের

বাংলাহান্ট ডেস্ক : সরকারি স্কুলে চলছে লম্বা গরমের ছুটি। বিভিন্ন স্কুলের পড়ুয়াদের অভিভাবকরা চিন্তিত সিলেবাস কিভাবে শেষ হবে? তখন পূর্ব মেদিনীপুরের দেব ও জাহিরের কাছে এই লম্বা গরমের ছুটি যেন শাপে বর হয়েছে। ওই দুই কিশোর ছাত্র গরমের ছুটি কাটাচ্ছে আরাম-আয়াসে নয়, বরং অচল সংসারের হাল ধরে। প্রবল দাবদাহ উপেক্ষা করে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সাইকেলে চালিয়ে আইসক্রিম বিক্রি করছে তারা।

সন্ধ্যা নামার আগেই ধীরে ধীরে বাড়ি ফেরে দুজনে। সারাদিনের পরিশ্রমের রোজগারটুকু তুলে দেয় অসহায় মা-বাবার হাতে। তারপর প্রবল ইচ্ছে থাকলেও বাধ সাধে শরীর। থাকে না পড়ার শক্তি। ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে দুই কিশোর। তারপরেও তারা স্বপ্ন দেখে সুদিনের। করোনা সংক্রমণ কমার পর খোলে স্কুল। আবার শুরু হয় পড়াশোনা। সেই সঙ্গে জুটেছিল একবেলা রান্না করা খাবার। কিন্তু গরমের জন্য আবার স্কুলে লম্বা ছুটি। অভাবের সংসারে একটু আলোর দিশা আনতে পড়ার ফাঁকে এখন আইসক্রিম বিক্রিই ভরসা দেব আর জাহিরের। দু’জনেই পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদল ব্লকের নাটশাল হাইস্কুলের ছাত্র। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে দেব পাত্র। আর নবম শ্রেণির ছাত্র জাহির।

মহিষাদলের রামবাগে বাসিন্দা এই দুই কিশোর। দেবের বাবা ঘুগনির দোকানে কাজ করেন। বাড়িতে বাবা-মা, দু’ভাই। জাহিরের বাবা মারা গিয়েছেন প্রায় বছরখানেক হল। বাড়িতে আছে দুই বোন, এক ভাই ও মা। দু’জনের সংসারের দশাই নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। অভাবের সংসারে যাতে দু’পয়সা আনতেই সাইকেলের পিছনে থার্মোকলের বাক্সে আইসক্রিম নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় বিক্রি করছে এই দুই কিশোর। তবে এত পরিশ্রমের মধ্যেও স্বপ্ন দেখা ছাড়েনি ওরা। পড়াশোনা করে একদিন নিজের পায়ে দাঁড়ানোর আশাতেই প্রতিদিন সকাল ৯টা বাজতে না বাজতেই আইসক্রিম বিক্রি করতে বেরিয়ে পড়ছে। দিনে ৫০ থেকে ১০০ টাকা মতো রোজগার হয়।

জাহিরের মা গুলশন বিবি বলছেন, ‘সংসার কী ভাবে চালাব বুঝতে পারছি না। তাই একরকম বাধ্য হয়েই ছেলেকে আইসক্রিম বিক্রি করতে পাঠাই।’ দেবের মা পুতুল পাত্রের কথায়, ‘স্বামীর রোজগারে সংসার চলে না। তাই ছুটির কয়েক দিন ছেলেকে আইসক্রিম বিক্রি করতে পাঠাচ্ছি। বর্ষা এসে গেলে তো আর আইসক্রিম বিক্রি হবে না।’ দেব বা জাহিরের এই অবস্থার কথা অবশ্য জানে না স্কুল। নাটশাল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বিপ্রনারায়ণ পন্ডা বলেন, ‘আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা কোনও ছাত্র স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করলে তা অবশ্যই বিবেচনা করে দেখা হয়। তবে গরমের ছুটিতে কোন ছাত্র কী করছে তা তো ঠিক বলতে পারব না।’

দুই কিশোর অবশ্য সুদিন আনতে চায় পড়াশোনা করেই। দেব বলে, ‘বাবার যা আয় তাতে সংসার চলে না। তাই পড়ার ফাঁকে আইসক্রিম বিক্রি করি। নিজে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাইদেরও পড়ার খরচও তো যোগাড় করতে হবে।’ জাহিরের কথায়, ‘পড়ার ইচ্ছা রয়েছে অনেকটা। কিন্তু বাড়ির যা পরিস্থিতি তাতে কতদিন পড়াশুনা চালাতে পারব জানি না। তবু কোনও ভাবে চেষ্টা করছি যাতে আইসক্রিম বিক্রি করে পড়াশোনাটা অন্তত চালিয়ে যেতে পারি।’ দুই কিশোরের এই হার না মানা জীবন সংগ্রামকে কুর্নিশ জানিয়েছেন অনেকেই।

Avatar
Sudipto

সম্পর্কিত খবর