বাংলা হান্ট ডেস্ক : আজ থেকে বছর বাইশ আগে এক শীতের সকালে নড়ে উঠেছিল গোটা ভারত (India)। পাঁচ সশস্ত্র জঙ্গি বন্দুকের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গেছিল নিরাপত্তা রক্ষী সহ ৯ জন ভারতীয়। তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর, সংসদ ভবনে সেই ভয়ানক হামলার ষড়যন্ত্রী ছিল লস্কর-ই-তৈবার (Laskar e Taiba) প্রতিষ্ঠাতা তথা হাফিজের ডেপুটি হাফিজ আব্দুল সালাম ভুট্টাভি (Hafiz Abdul Salam Bhutvi) মারা গিয়েছেন। তার অঙ্গুলিহেলনেই নাকি ঘটেছিল এই গোটা ঘটনা। আর এখন সেই কুচক্রীই পৌঁছে গেছে মৃত্যুর ওপারে।
মুম্বাই হামলার পর বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থা জানিয়েছিল কুখ্যাত লস্কর জঙ্গি নেতা আব্দুল সালাম ভুট্টাভিই ২০০৮-এ মুম্বই হামলার ছক কষেছিল। আজমল কাসেমদের ট্রেনিং-র দায়িত্বেও সে ছিল। দু’দুটি সন্ত্রাসের মামলায় লস্কর-ই-তৈবার দায়িত্বেও ভুট্টাভি ছিলেন বলে খবর সামনে আসে। এরপর নয়াদিল্লির চাপে পড়ে ২০১২ সালে ভুট্টাভিকে গ্রেফতার করে পাক সরকার। যদিও নয়াদিল্লির দাবি ছিল, ভুট্টাভিকে ভারতের হাতে তুলে দিতে হবে। তবে ইসলামাবাদের তরফে সেই পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
জানা যায়, ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর পাকিস্তান (Pakistan) থেকে জলপথে ভারত পৌঁছায় ১০ জন লস্কর জঙ্গির একটি দল। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার ইনপুট, তারা মুম্বাই পৌঁছে কয়েকটি ভাগে ভাগ হয়ে তাজ হোটেল, ছত্রপতি শিবাজি টার্মিনাস, লিওপোল্ড ক্যাফে, নরিম্যান হাউস, কামা হাসপাতালের মতো আটটি জায়গায় হামলা চালায়। অতর্কিত এই হামলায় নড়ে ওঠে গোটা দেশ। সাধারণ নাগরিক, সেনা, পুলিশ মিলিয়ে অন্তত ১৭৫ জন প্রাণ হারিয়েছিল এই হামলায়। ঘটনার পরপরই পাকিস্তানের দিকে আঙুল তুলেছিল ভারত।
আরও পড়ুন : ‘বিষ্ণু মাতা’ অতীত, এবার কর্ণাটককে কানাডা বানিয়ে দিলেন মমতা! ভুল বুঝে উইথড্র করলেন মন্তব্য
এরপর ২০১২ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের তরফ থেকে বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদীদের যে ৩০ জনের তালিকা প্রকাশ করা হয় তার ৮ নম্বরে ছিল ভুট্টাভির নাম। শোনা যায়, লস্কর-ই-তৈবার প্রতিষ্ঠাতা হাফিজ সইদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিল এই ভুট্টাভি। হাফিজের ভাইয়ের হাত ধরেই জঙ্গী দলে নাম লেখান তিনি। বেশ অল্প সময়ের মধ্যেই জঙ্গীদলের নেতা হয়ে ওঠেন। এরপর পাক মাটিতে বসেই ছবি আঁকার মত করে মুম্বাই হামলার ছক কষতে বসেছিল ভুট্টাভি। কে কোন রাস্তা দিয়ে ঢুকবে, কখন হামলা শুরু হবে, এই সবটাই হয়েছিল তার নির্দেশে।
আরও পড়ুন : এবার থেকে পরীক্ষায় থাকবে উর্দু, অলচিকি! WBCS-WBPS নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত মমতার
বিভিন্ন গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, ভুট্টাভির ভাষণ জঙ্গীদের জন্য ভোকাল টনিকের মত কাজ করত। কাসেভরা জলপথে আসার সময়ও ভুট্টাভির ভাষণ শুনেছিল বলে দাবি তদন্তকারী সংস্থাদের। এমনকি জেলবন্দী হওয়ার পরেও দীর্ঘদিন সে জঙ্গীদের ট্রেনিং দিয়ে এসেছে। তবে এবার তার সব কারনামা শেষ। সূত্রের খবর, গত বছর মে মাসে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে মৃত্যু হয় ভুট্টাভির। মৃত্যুর খবর তখনই জানা গিয়েছিল তবে সেই সময় নিশ্চিত ছিলনা কেউই। তবে এবার আব্দুল সালাম ভুট্টাভির মৃত্যুর খবরে শিলমোহর লাগিয়েছে খোদ রাষ্ট্রপুঞ্জ। দীর্ঘ ৭৮ বছরের জেল হেফাজতের সাজা হয়েছিল তার। শোনা যাচ্ছে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে সে। যদিও গোপন সূত্রে জানা যাচ্ছে, পাক সংবাদমাধ্যমেরই একাংশ ভুট্টাভির মৃত্যুও স্বাভাবিক বলে মনে করছে না। সেই সাথে জাতিসংঘ আরও বলেছে যে ২৬/১১ এর অন্যতম মাস্টারমাইন্ড হাফিজ সইদ এখন পাকিস্তানের হেফাজতে ৭৮ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছে। মোট সাতটি সন্ত্রাসী মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে এখন সে অন্ধকার কারাগারে বন্দী।