বাংলাহান্ট ডেস্ক: সাফল্য (Success Story) যে কেবল উচ্চতার মাপে নির্ধারিত হয় না, বরং দৃঢ়তা ও আত্মবিশ্বাসের উপরই নির্ভর করে—গুজরাটের বৃন্দাণী প্যাটেল তার জীবনের মধ্য দিয়ে সেই সত্যকেই প্রতিষ্ঠা করেছেন। মাত্র দুই ফুট উচ্চতার ২৮ বছর বয়সী বৃন্দাণী সমাজের রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গি, শারীরিক সীমাবদ্ধতা এবং বারবার প্রত্যাখ্যানের মুখোমুখি হয়েও কখনও নিজের স্বপ্ন থেকে সরে দাঁড়াননি। আজ সেই বৃন্দাণী আহমেদাবাদের একটি নামীদামী কলেজে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত, যা অসংখ্য তরুণ-তরুণীর কাছে অনুপ্রেরণার দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে।
বৃন্দাণী প্যাটেলের অসাধারণ সফলতার কাহিনি (Success Story)
শৈশব থেকেই বৃন্দাণীর জীবন সহজ ছিল না। মাত্র দেড় বছর বয়সে বাবা-মায়ের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে এবং তারপর থেকে বাবার ও দাদীর কাছেই তার বড় হয়ে ওঠা। তার বাবা নিজেও তিন ফুট উচ্চতার একজন শিক্ষক। জীবনের প্রতিটি ধাপে বাবার অবিচল সমর্থন ও শিক্ষা বৃন্দানির চলার পথকে দৃঢ় করেছে। বৃন্দাণী স্পষ্টভাবেই বলেন, তাঁর বাবাই তাঁর সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। সমাজে নিজের অধিকার আদায় করতে শেখার সাহস ও আত্মমর্যাদাবোধ বাবার কাছ থেকেই তিনি পেয়েছেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে অশান্তির আবহে ঢাকা থেকে দিল্লিতে আন্তর্জাতিক কল, কী কথা হল দুই সেনাপ্রধানের?
পড়াশোনায় বরাবরই মেধাবী ছিলেন বৃন্দাণী। স্কুল কর্তৃপক্ষও তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিল। দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত তাঁর জন্য বিশেষ বেঞ্চের ব্যবস্থা করা হয়, যাতে কোনও অসুবিধা ছাড়াই পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেন। দশম শ্রেণীতে তিনি ৮১ শতাংশ এবং দ্বাদশ শ্রেণীতে ৮৫ শতাংশ নম্বর পান। পরে বাণিজ্য শাখায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরে চমৎকার ফলাফলের সঙ্গে বি.কম এবং এম.কম ডিগ্রি অর্জন করেন। ডাক্তার হওয়ার প্রাথমিক স্বপ্ন পূরণ না হলেও, তিনি কঠিন GSET ও NET পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং সম্প্রতি পিএইচডি সম্পন্ন করেন।
স্নাতকোত্তর পড়াশোনা শেষ করে বৃন্দাণী সুরাটে বাবার টিউশন সেন্টারে শিক্ষকতা শুরু করেন। সেখানে পাঁচ বছরে তিনি ২০০ জনেরও বেশি ছাত্রছাত্রীকে অ্যাকাউন্টিং, পরিসংখ্যান এবং অডিটের মতো বিষয় পড়িয়েছেন। তবে কলেজে অধ্যাপক হওয়ার পথ মোটেই সহজ ছিল না। একের পর এক কলেজে আবেদন করেও তাঁকে তাঁর পরিচালনার সক্ষমতা নিয়ে সন্দেহের মুখে পড়তে হয়েছে। মোট সাতটি ইন্টারভিউতে মধ্যে তিনবার প্রত্যাখ্যান পাওয়ার পর অবশেষে চতুর্থ প্রচেষ্টায় তিনি সহকারী অধ্যাপক হিসেবে নির্বাচিত হন।

আরও পড়ুন:শীতের ছুটিতে শান্তি খুঁজছেন? দার্জিলিংয়ের কাছে লুকিয়ে থাকা ছোট্ট স্বপ্নের গ্রাম রংবুলে পা রাখুন
বাধা ও কটূক্তিকে উপেক্ষা করে দৃঢ়তার সঙ্গে এগিয়ে যাওয়াই বৃন্দাণীর জীবনের মূল শক্তি। তারই প্রমাণ মিলেছে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রেও—সাড়ে তিন বছরের লড়াইয়ের পর ২০২৩ সালে তিনি সেই স্বপ্ন পূরণ করেন। বৃন্দাণী প্যাটেলের বার্তা অত্যন্ত সহজ অথচ গভীর—প্রত্যাখ্যান মানেই শেষ নয়, চেষ্টা চালিয়ে যাওয়াই সাফল্যের চাবিকাঠি। তার জীবনকথা প্রমাণ করে, অটল সংকল্প আর কঠোর পরিশ্রম থাকলে কোনও শারীরিক সীমাবদ্ধতাই মানুষের স্বপ্নকে আটকে রাখতে পারে না।












