বাংলা হান্ট ডেস্ক: সাম্প্রতিক সময়ে ভারতীয় নৌবাহিনী (Indian Navy) যে গতিতে তার নৌবহরকে শক্তিশালী করছে তা বিশ্বের একাধিক প্রধান প্রতিরক্ষা শক্তিকে অবাক করে দিয়েছে। একটা সময় ছিল যখন ভারত যুদ্ধজাহাজ এবং সাবমেরিনের জন্য বিদেশের দিকে তাকিয়ে থাকত। কিন্তু পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বদলে গেছে। এই আবহেই এবার একটি বড় আপডেট সামনে এসেছে। যেটি সম্পর্কে জানার পর অবাক হবেন প্রত্যেকেই। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী জানা গিয়েছে যে, গত এক বছরে, ভারতীয় নৌবাহিনী গড়ে প্রতি ৪০ দিনে একটি নতুন দেশীয় যুদ্ধজাহাজ পেয়েছে। বিমানবাহী রণতরী থেকে শুরু করে ডেস্ট্রয়ার, ফ্রিগেট থেকে শুরু করে সাবমেরিন—সবকিছুই এখন ভারতে ডিজাইন করা এবং নির্মিত হচ্ছে। এই রূপান্তর কেবল নৌবাহিনীর শক্তির প্রতিফলন নয়, বরং ভারতের কৌশলগত এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল শক্তির দাপট হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে।
ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে ভারতীয় নৌবাহিনী (Indian Navy):
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, গত দশকে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে, ‘আত্মনির্ভর ভারত’ এবং ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ -র মতো কর্মসূচি প্রতিরক্ষা খাতের মেরুদণ্ডে পরিণত হয়েছে। ফলস্বরূপ, ভারতীয় নৌবাহিনীর ক্রয় এবং নির্মাণ কৌশল সম্পূর্ণ রূপান্তরিত হয়েছে। পূর্বে যেখানে নৌবাহিনী প্রায় ৭০ শতাংশ আমদানির উপর নির্ভর করত। এখন এটি ৭৬ শতাংশ আত্মনির্ভরতা অর্জন করেছে। সরকারের স্পষ্ট লক্ষ্য হল, ২০৩০ সালের মধ্যে এই হার ৯০-৯৫ শতাংশে উন্নীত করা।

আরও একটি চমকপ্রদ বিষয় হল বর্তমানে ভারত কেবল ছোট জাহাজই নয়, বরং, সবচেয়ে জটিল এবং উচ্চ প্রযুক্তির প্ল্যাটফর্মও তৈরি করছে। INS বিক্রান্ত এর একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। ৪৫,০০০ টনের এই বিমানবাহী রণতরীটি ৭৬ শতাংশ দেশীয় উপকরণ দিয়ে ভারতে নির্মিত হয়েছিল। এটি কেবল একটি জাহাজ নয়, বরং ভারতের ইঞ্জিনিয়ারিং ও শিল্প সক্ষমতার প্রতীক।
একইভাবে, প্রজেক্ট-১৫ বি-র অধীনে নির্মিত বিশাখাপত্তনম ক্লাসের ডেস্ট্রয়ারগুলিকে বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক এবং স্টিলথ যুদ্ধজাহাজগুলির মধ্যে অন্যতম হিসাবে বিবেচনা করা হয়। প্রজেক্ট-১৭এ-এর নীলগিরি ক্লাসের ফ্রিগেটগুলি ভারতের মডুলার জাহাজ নির্মাণ ক্ষমতা প্রদর্শন করে। অন্যদিকে প্রজেক্ট-৭৫-র কালভারি ক্লাসের সাবমেরিনগুলি প্রমাণ করে যে ভারত জলের নিচে যুদ্ধ প্রযুক্তিতেও দ্রুত অগ্রগতি করছে।
জানিয়ে রাখি যে, নৌবাহিনী ২০২৫ সাল অর্থাৎ চলতি বছরের অগাস্টে তাদের ১০০ তম এবং ১০১ তম দেশীয় যুদ্ধজাহাজ, INS উদয়গিরি এবং INS হিমগিরি কমিশন করে। ২০১৪ সাল থেকে, ৪০ টিরও বেশি দেশীয় যুদ্ধজাহাজ এবং সাবমেরিন নৌবাহিনীতে সরবরাহ করা হয়েছে। গত ১ বছরে পরিস্থিতি এমন ছিল যে গড়ে প্রতি ৪০ দিনে একটি নতুন জাহাজ বহরে যুক্ত হয়েছে। এই আত্মনির্ভরতার প্রভাব কেবল প্রতিরক্ষা সেক্টরেই সীমাবদ্ধ নয়। জাহাজ নির্মাণ সেক্টর ইতিমধ্যেই দেশে ১৮৫,০০০-এরও বেশি প্রত্যক্ষ এবং ৪২০,০০০ পরোক্ষ কর্মসংস্থান তৈরি করেছে। ২০২৭ সালের মধ্যে এই সেক্টরের সম্ভাব্য বাজার ৬০,০০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ‘PR এজেন্সি দ্বারা আয়োজিত অনুষ্ঠান’, মেসির ইভেন্টে নেওয়া হয়নি ফেডারেশনের অনুমতি, জানাল AIFF
আসলে, ভারতের জাহাজ নির্মাণ ইকোসিস্টেম এখন সম্পূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠিত। মাজাগাঁও ডক থেকে শুরু করে কোচিন শিপইয়ার্ড, গার্ডেন রিচ শিপবিল্ডার্স, নেভাল ডকইয়ার্ডস সহ ওয়ারশিপ ডিজাইন ব্যুরো, DRDO, IIT এবং গবেষণাগারগুলি দেশে ডিজাইন থেকে শুরু করে নির্মাণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ পর্যন্ত সবকিছু যৌথভাবে করছে। ইতিমধ্যেই ডিএমআর স্টিল, দেশীয় রাডার, সোনার, যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং কমব্যাট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম এখন ভারতীয় জাহাজের পরিচয় হয়ে উঠেছে। তাই আজ, ভারতীয় নৌবাহিনী আর কেবল একটি ‘ইউজার নেভি’ নয়, বরং, এটি ‘বিল্ডার নেভি’ হয়ে উঠেছে। বিমানবাহী রণতরী থেকে শুরু করে সাবমেরিন পর্যন্ত, সবকিছুই ভারতে নির্মিত হচ্ছে। আর এই কারণেই সামগ্রিকভাবে ভারত জাহাজ নির্মাণের ক্ষেত্রে সত্যিই পরিবর্তন এনেছে এবং সমগ্র বিশ্ব এখন এই গতির দিকে গুরুত্বের সঙ্গে নজর রাখছে।












