বাংলাহান্ট ডেস্ক: ভারত (India) আর বিদেশি শক্তির দিকে তাকিয়ে থাকা দেশ নয়—বরং বিশ্বের নিরাপত্তায় একটি শক্তিশালী অংশীদার। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, ভারত প্রতিরক্ষা উৎপাদন ও রপ্তানিতে ইতিহাস গড়ে ফেলেছে। ‘আত্মনির্ভর ভারত’ উদ্যোগের ফলে প্রতিরক্ষা শিল্পে যে পরিবর্তনের হাওয়া বইছে, তা শুধু সংখ্যা নয়, বরং দেশের সক্ষমতা, আত্মবিশ্বাস এবং বিপুল কর্মসংস্থানেরও প্রতিফলন।
বিশ্বজুড়ে দাপট ভারতে (India) তৈরি অস্ত্রের
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে ভারতের (India) প্রতিরক্ষা উৎপাদন পৌঁছেছে ১.৫৪ লক্ষ কোটি টাকায়, যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। ২০১৪-১৫ সালে যে উৎপাদন স্তর ছিল, তার তুলনায় ২০২৩-২৪ সালে ১৭৪ শতাংশ বৃদ্ধি ঘটেছে। শুধু উৎপাদন নয়, রপ্তানির ক্ষেত্রেও নজিরবিহীন সাফল্য এসেছে। ২০১৪ সালে যেখানে প্রতিরক্ষা রপ্তানি ১,০০০ কোটিরও কম ছিল, বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩,৬২২ কোটি টাকায়। ভারতের তৈরি বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, রাডার, ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র এখন বিশ্বের ৮০টিরও বেশি দেশের নিরাপত্তার অংশ।
আরও পড়ুন: নেপালে ফের GenZ আন্দোলন! উত্তপ্ত পরিস্থিতি, জারি করা হল কারফিউ
এই উত্থানের পেছনে সরকারি প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলির পাশাপাশি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে ভারতের (India) ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প (MSME) সংস্থাগুলি। বর্তমানে ১৬,০০০–এর বেশি MSME প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদন ও পরিষেবায় যুক্ত। ইতিমধ্যেই ৪৬২টি কোম্পানিকে অস্ত্র ও সামরিক উপকরণ তৈরির জন্য ৭৮৮টি শিল্প লাইসেন্স দিয়েছে কেন্দ্র। নীতি পরিবর্তন এবং সহজতর অনুমোদন প্রক্রিয়া প্রতিরক্ষা শিল্পে নতুন গতি এনেছে।
ভারতের (India) প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ২০২৪-২৫ সালে মোট ১৯৩টি বড় চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যার মূল্য ২.০৯ লক্ষ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৭৭টি চুক্তিই ভারতীয় কোম্পানিগুলির হাতে গেছে—যা স্বনির্ভরতা এবং স্থানীয় শিল্পকে শক্তিশালী করার দৃষ্টান্ত। এক সময় যেসব উপকরণের জন্য ভারতকে বিদেশমুখী হতে হতো—T-90 ট্যাঙ্কের ইঞ্জিন, ‘বরুণাস্ত্র’ টর্পেডো, আধুনিক রাডার—এখন সেগুলিই তৈরি হচ্ছে দেশের কারখানায়।

সেনা, নৌসেনা এবং বায়ুসেনার আধুনিকীকরণে কেন্দ্র আরও বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে প্রতিরক্ষা বাজেট বৃদ্ধি করে ৬.৮১ লক্ষ কোটি টাকা করা হয়েছে, যা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিচ্ছে যে জাতীয় নিরাপত্তা, প্রযুক্তিগত স্বনির্ভরতা এবং স্থানীয় উৎপাদনই সরকারের প্রধান লক্ষ্য। প্রতিরক্ষা উৎপাদনের বিকাশ দেশের অর্থনীতিকে যেমন শক্তিশালী করছে, তেমনই সাধারণ মানুষের করের টাকা এখন দেশীয় শিল্পকে সমৃদ্ধ করছে—বিদেশি কোম্পানির ব্যাঙ্ক ভরিয়ে নয়।
ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে এই ঐতিহাসিক অগ্রগতি দেখিয়ে দিচ্ছে—দেশ এখন আর আত্মনির্ভরতার স্বপ্ন দেখে না, বরং তা বাস্তবে রূপ দিচ্ছে। আগামী দিনে ভারত শুধু নিজের নিরাপত্তাই নয়, বিশ্বের প্রতিরক্ষা শিল্পেও বড় ভূমিকা নেবে—এমনটাই মনে করছে সামরিক বিশ্লেষকদের একাংশ।












