বাংলা হান্ট ডেস্কঃ দিন দুপুরে তাজ্জব কাণ্ড কালনায় (Kalna) ! স্বামী ছেড়ে বউ চলে গেছে বাপের বাড়িতে। অন্যদিকে বউকে ফেরাতে মরিয়া পতি। যেনতেনো প্রকারেন বউকে ফিরিয়ে আনতেই হবে। শাসক দলের গেঞ্জি পরেও হলোনা লাভ, শেষ পর্যন্ত কিনা প্রকাশ্য রাস্তায় সুইসাইড! দিনেদপুরে এমন তাজ্জব কাণ্ডে রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে গোটা এলাকায়।
ঠিক কি ঘটেছিল?
দিনের আলোয় রাস্তায় প্রকাশ্য ভাবে পেট্রোলের বোতল হাতে নিয়ে অনেকক্ষণ থেকে ঘোরাঘুরি করছিলেন এক যুবক। প্রথমে বিষয়টি কেউ বুঝতে পারে নি, কিন্তু কিছুক্ষন পরেই গায়ে পেট্রোল (Petrol) ঢেলে নিজেকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করেন ওই যুবক। ঘটনা চাওর হতেই তড়ঘড়ি তাকে থামাতে যায় ট্র্যাফিক পুলিশ (Traffic Police)। তাদের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তিও হয় ওই যুবকের। পরে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে।
ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের (Bardhaman) কালনায়। জানা যায়, যুবকক মিঠুন মণ্ডলকে ছেড়ে বাপের বাড়িতে চলে গেছে তার বউ। কিছুতেই ফিরছে না ঘরে। অন্যদিকে বউকে ফিরে পেতে যুবক দ্বারস্থ হয়েছিলেন স্থানীয় বিধায়কেরও । গিয়েছিলেন থানাতেও। কিন্তু হয়নি সুরাহা। শেষপর্যন্ত তৃণমূলের প্রতীক চিহ্ন আঁকা গেঞ্জি পরে তৃণমূলের পতাকা হাতে গায়ে পেট্রোল ঢেলে আত্মহত্যার চেষ্টা করলেন কালনার ওই যুবক । তবে শেষ পর্যন্ত ট্রাফিক পুলিশের তৎপরতায় কোনোমতে দমানো যায় ওই যুবককে।
অন্যদিকে এই ঘটনায় পুলিশ-প্রশাসনের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মিঠুন। মিঠুনের অভিযোগ, প্রশাসনের তরফে বহুবার আর্জি জানিয়েও কোনও সাহায্য মেলেনি। শেষ পর্যন্ত কোনো পথ না পেয়েই তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা । দীর্ঘদিন যাবৎ তিনি এলাকায় তৃণমূলের (TMC) কর্মী বলেও দাবি করেন মিঠুন। শাসক দলের কর্মী হওয়ার পরও দল তরফে কোনও সাহায্য পাননি বলে অভিযোগ করেন কালনার মিঠুন।
কি বললেন অভিমানী মিঠুন?
মিঠুনের বক্তব্য , “আমার সংসারটা ভেঙে যাচ্ছে। কদিন আগে আমি আমার বউ-বাচ্চা নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে গিয়েছিলাম। শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার পরেই আমার বউকে আমার শাশুড়ি ও শালা আটকে রাখে। আমারও গায়ে হাত দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। পরে মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপরই আমি পুলিশের কাছে গিয়েছিলাম। আইনের সাহায্য নিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। এরপর গিয়েছিলাম আমাদের বিধায়কের কাছে। তিনিও পাত্তা দিলেন না। কালনায় যখন তৃণমূল তৈরি হয় তখন থেকে দল করছি। প্রথম ঝাণ্ডা আমরাই লাগাই। অথচ আমাকে কোনও সাহায্য করা হল না। সবাই বলল নিজের সমস্যা নিজেই সমাধান করে নাও। এ রাজ্যে বেঁচে থেকে কী লাভ। এর থেকে মরে যাওয়া অনেক ভাল। সে কারণেই আমি গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করি।”
কেন স্ত্রী বাপের বাড়ি চলে গেছেন? এই প্রসঙ্গে মিঠুন জানান, “আগে আর্থিক কারণে অনেকবার ঝামেলা হয়েছে। এখন আর হয় না। তবে অশান্তি হলেও কোনওদিন গায়ে হাত দিইনি। এর আগে ও একবার বাপের বাড়ি চলে গিয়ছিল। তখন হাতেপায়ে ধরে বাড়ি নিয়ে এসেছিলাম।”
অন্যদিকে নিজেকে তৃণমূলের কর্মী দাবি করা সংশ্লিষ্ট ওই যুবককে চেনেনই না বলে অভিযোগ কালনার বিধায়ক দেবপ্রসাদ বাগের । তিনি জানান, “তৃণমূলের গেঞ্জি ও হয়তো অন্য কোথা থেকে পেয়েছি। আমরা অনেক সময় নানা জায়গায় দিয়ে থাকি। সেখান থেকে পেতে পারি। ও তৃণমূলের কর্মী নয়। আমি ওকে চিনি না। আজ সকালে আমার কাছে এসেছিল। ওকে বলেছিলাম স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ব্যক্তিগত ঝামেলা থাকলে নিজেদের মধ্যে মিটিয়ে নিতে।” সবমিলিয়ে ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে গোটা এলাকায়।