বাংলা হান্ট ডেস্কঃ আবাস যোজনায় (Awas Yojana) দুর্নীতি ঠেকাতে শুরু থেকেই বদ্ধপরিকর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার। তাই টাকা পাঠানোর আগে থেকে শুরু করে, টাকা দেওয়ার পরেও লাগাতার চলছে কড়া নজরদারি। কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে এই প্রকল্পের টাকা না দেওয়ার অভিযোগ তুলে গত বছরের ডিসেম্বর থেকেই রাজ্যজুড়ে মোট ১২ লক্ষ উপভোক্তাকে প্রথম কিস্তির ষাট হাজার টাকা দিয়েছে রাজ্য সরকার। এবার আবাস প্রকল্পে দুর্নীতি ঠেকাতে আরও কড়া পদক্ষেপ নিল নবান্ন (Nabanna)।
আবাস প্রকল্প (Awas Yojana) থেকে ফেরত টাকার জন্য খোলা হল আলাদা অ্যাকাউন্ট
জানা যাচ্ছে, আবাস প্রকল্পে (Awas Yojana) ফিরিয়ে নেওয়া অর্থের জন্য এবার থেকে পৃথক অ্যাকাউন্ট (ডিডাক্ট রিকভারিজ় হেড অব অ্যাকাউন্ট) খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। এই বার্তা সম্প্রতি জেলা প্রশাসনকেও পাঠিয়ে দিয়েছে নবান্ন। প্রশাসনের একাংশের দাবি পৃথক অ্যাকাউন্ট খোলার এমন পদক্ষেপ এবারই প্রথম করা হল। আবাস প্রকল্পের কোন বরাদ্দ ভুল উপভোক্তার অ্যাকাউন্টে চলে গেলে তা ফেরানোর মৌখিক নির্দেশ আগেই দেওয়া হয়েছিল জেলা কর্তাদের। এবার ওই টাকা ফেরানোর বিষয়টি যে বাধ্যতামূলক তা বোঝাতেই নতুন অ্যাকাউন্টের তথ্য পাঠানো হয়েছে।
বিশ্লেষকদের একাংশ এপ্রসঙ্গে জানিয়েছেন আবাসের (Awas Yojana) অর্থ বেহাত হওয়া ঠেকাতে শুরু থেকেই সতর্ক থাকার বার্তা দিচ্ছে নবান্ন। এই নিয়ে দফায় দফায় মৌখিক নির্দেশও দেওয়া হয়েছে জেলা কর্তাদের।একইসাথে নবান্নের এই সাম্প্রতিক পদক্ষেপে প্রশ্ন উঠছে তাহলে কি এখনো উপভোক্তাদের অ্যাকাউন্টন্টে টাকা যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে? যদিও প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশের দাবি এখনও যাচাই প্রক্রিয়া চলছে। আবাস প্রকল্পের প্রত্যেক স্তরে চলছে কড়া নজরদারি। সঠিক উপভোক্তার হাতে টাকা যাচ্ছে কিনা তার দেখার জন্য টাকা ছাড়ার পরেও খুঁটিনাটি সব কিছুই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
অকারণে বাজে খরচ কমাতে এবং টাকার অপচয় রুখতেই এই নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে রাজ্য সরকার। তাই সরকারি পদ্ধতি মেনে হাউসিং, রুরাল হাউসিং, বাংলার বাড়ি (গ্রামীণ), ডিডাক্ট রিকভারি, অন্যান্য ইত্যাদি তহবিলের অযোগ্যদের থেকে টাকা ফিরিয়ে নিতে পারবেন জেলা কর্তারা। এক কর্তার কথায়, সরকারের এই কড়া পদক্ষেপ থেকে বোঝা যাবে কতজন অযোগ্য উপভোক্তাদের কাছে অর্থ পৌঁছেছিল। ভবিষ্যতে এই যাচাই পদ্ধতি আরও আঁটোসাঁটো করা যাবে।
আরও পড়ুন: আগামী ১০ বছর দল চালাব! মমতার ঘোষণার পরই অভিষেক লিখলেন, ‘প্রশাসন মানে শুধু কথা নয়’
দু’বছর আগে আবাস প্রকল্পে (Awas Yojana) মোট ১১ লক্ষ উপভোক্তাদের তালিকায় অনুমোদন দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু তারা কেন্দ্রীয় বরাদ্দ না পাওয়ায় ওই তালিকা ধরেই বাংলার বাড়ি তৈরির টাকা দিচ্ছে রাজ্য সরকার। এছাড়া যে সমস্ত উপভোক্তাদের বাড়ি প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এমন আরও অতিরিক্ত এক লক্ষ উপভোক্তাদের এই প্রকল্পের টাকা দেওয়া হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত যদি কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে যদি এই প্রকল্পে কোনো অর্থ বরাদ্দ না করা হয়,তাহলে এই প্রকল্পের জন্য রাজ্য সরকারের নিজস্ব কোষাগার থেকেই খরচ হবে প্রায় ১৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এছাড়াও সারা বছর ধরে চলতে থাকা বিভিন্ন সামাজিক অনুদানের জন্য রাজ্যের খরচের পরিমাণ দিনে দিনে বেড়েই চলেছে।
সব মিলিয়ে রাজ্যের মোট আয়ের তুলনায় খরচের বহর ২০২৪-২৫ বাজেট অনুযায়ী কিছুটা হলেও বেশি। তাই অতিরিক্ত এবার খরচ কমাতে চাইছে রাজ্যের অর্থ দপ্তর। এই কারণেই রাজ্যের নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্ট তৈরি করে টাকা ফেরানোর সিদ্ধান্ত ব্যাপক তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। রাজ্য সরকার আবাস প্রকল্পে (Awas Yojana) টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করার পর কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন প্রাপ্ত ১১ লক্ষ উপভোক্তাদের তালিকা নতুন করে যাচাই করা শুরু হয়েছিল।
পুনরায় যাচাইও করা হয় ওই তালিকা। পরে অযোগ্য কিছু উপভোক্তাকে ওই তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। এরপর জেলায় জেলায় তা নিয়ে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। ওই পরিস্থিতিতে নিজেদের অবস্থান কিছুটা হলেও নরম করে রাজ্য। কিন্তু টাকা ছাড়ার আগের মুহূর্তে আরও একবার যোগ্যতা যাচাইয়ের নির্দেশ দেওয়া হয়। আর তাতেই সন্দেহজনক কিছু দেখলেই টাকা পাঠানো বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। একইসাথে ভুল কারও অ্যাকাউন্টে টাকা গেলে তা ফেরানোর বিষয়টিও নিশ্চিত করা হচ্ছে।